শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাইগারদের লক্ষ্য ১০০ রানের লিড

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

টাইগারদের লক্ষ্য ১০০ রানের লিড

ঘরের মাঠে ভালোই খেলছিলেন। সেঞ্চুরির প্রত্যাশাও জাগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে ৭৮ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় তামিম ইকবালকে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

একে একে চার স্পিনারকে দিয়ে বল করালেন অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। ইংল্যান্ড দলে চার স্পিনার যারা নিয়মিত ক্রিকেট দেখেন তাদের কাছে নতুন দৃশ্যই মনে হবে! গত ৩৪ বছরে ইংল্যান্ড দলে কখনো চার স্পিনারকে বোলিং করতে দেখা যায়নি। সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮২ সালে কানপুরে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে। কিন্তু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের টার্ন উইকেটের কথা চিন্তা করে স্পিনারের সমাহার ঘটিয়েও তো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি সফরকারীরা। বরং প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিন শেষেও খানিকটা এগিয়ে বাংলাদেশ।

সকালে ইংল্যান্ডকে ২৯৩ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ তিন উইকেট হারিয়ে আগের দিনের ২৫৮ রানের সঙ্গে গতকাল আর মাত্র ৩৫ রান যোগ করতে পেরেছে ইংল্যান্ড। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২২১ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক আউট না হলে দিনটা পুরোপুরি হয়ে যেত টাইগারদের। তারপরেও বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখলেন তামিম ইকবাল, ‘আমি মনে করি, আমরা একটু ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের হাতে পাঁচটি উইকেট আছে। যদি কালকে ভালো একটি সেশন পার করতে পারি তাহলে অনেক ভালো অবস্থানে থাকব। তবে এমন উইকেটে ব্যাট করা সহজ নয়। তারপরেও যদি মুশফিক আউট না হতো তাহলে বলতে পারতাম আমরা ভালো একটি দিন কাটিয়েছি।’

বাংলাদেশ এখনো ইংল্যান্ডের চেয়ে ৭২ রানে পিছিয়ে। তবে উইকেটে রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান সাব্বির । মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো ব্যাট করেন। যদিও সাব্বির ও মিরাজের অভিষেক ম্যাচ, কিন্তু জাতীয় লিগে এমন পরিস্থিতিতে ব্যাট করে তারা অভ্যস্থ।  সে কারণেই লিডের কথা ভাবছেন তামিম, ‘১০০ রানের লিড হলে ভালো। সেটা খুবই ভালো দিক হবে। আমাদের হাতে এখনো ২ জন ভালো ব্যাটসম্যান আছে। মিরাজ আছে, সাব্বির আছে, সাকিব এখানো আছে। তারা জুটি বেঁধে যদি ভালো করে যতটুকু লিড  নেওয়া যায় আর কি!’

ইংল্যান্ড হচ্ছে তামিম ইকবালের মধুর প্রতিপক্ষ। এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার টেস্টে ৬৩.১২ গড়ে করেছেন ৫০৫ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল ৪টি হাফ  সেঞ্চুরি। গতকালও ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তামিম। ১৭৯ বলে এই রান করেছেন ড্যাসিং ওপেনার। সতর্ক হয়ে  খেলার পরও সেঞ্চুরি হয়নি। তবে সেঞ্চুরির জন্য আক্ষেপ থাকলেও বাজে শট খেলে আউট হতে হয়নি বলে কিছুটা স্বস্তি তামিমের, ‘প্রতিটি রান খুব কষ্ট করে করতে হয়েছে। যদি ভুল করে আউট হতাম তাহলে কষ্ট লাগত। আমার কাছে মনে হয় আমি  যেভাবে খেলছিলাম সেখানে আমি কন্ট্রোলে ছিলাম। তাই এমন আউটে চিন্তিত নই।   চেষ্টা করব, এ রকম পরিস্থিতি আসলে যত বড় রান করা সম্ভব হয়। সামনের ম্যাচে ১-২-৩-৪ থেকে শুরু করতে হবে। বড় হলে অবশ্যই খুশি হতাম।’

 এর আগে ইংলিশদের বিরুদ্ধে চার ম্যাচে  যেখানে ৮৫.৫৯ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন তামিম, সেখানে গতকাল তাকে রীতিমতো রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবে টেস্টে স্ট্রাইকরেটকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তামিম, ‘যখন এ ধরনের উইকেটে খেলা তখন স্ট্রাইকরেট মাথায় আসে না। এ উইকেটে নিজেকে ধরে রাখাই করা হল সবচেয়ে বড় জিনিস। ভুল  করার চান্স খুবই কম। আপনি যদি ভুল করে বসেন তাহলে উইকেট হারাবেন। একটা জিনিস করতে হয় সেটা হল, নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে হয়। আপনি যদি এক্সট্রা কিছু করতে চান তাহলে প্রবলেম তৈরি হবে। যে সিচুয়েশনে এ টেস্ট ম্যাচ যাচ্ছে তাতে স্ট্রাইকরেট খুব  বেশি মেটার করে। কারণ যতক্ষণ উইকেটে থাকবেন যতক্ষণ রান করবেন সেটাই সবচেয়ে বেশি মেটার করবে।’

উইকেট সম্পর্কে বলেন, ‘স্পিন বেশি হচ্ছে। টার্ন বেশি হচ্ছে। এক সময় সেট হয়ে গেলে অনেক কিছু করতে চায়। যখন ব্যাটসম্যানরা  সেট হয়ে কিছু করতে যায় তখন যদি খুব ভালো একটা বল হয়ে যায় সবশেষ হয়ে যাবে।’ তামিম বলেন, ‘এই উইকেটে কেউ  সেট নয়। আপনি ৭০, ৮০ কিংবা ১০০ করেন তাহলেও বলব এ উইকেটে কেউ সেট না। যদি মনে করেন যে আপনি সেট তাহলে সমস্যা তৈরি হবে। কারণ প্রতি ওভারে একটা-দুটা বলে কিছু না কিছু হচ্ছে। যা খেলা খুবই কঠিন।’

গতকাল ব্যাটিংয়ে তিন সেশনের শেষ মুহূর্তে উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের। প্রথম  সেশনের শেষ ওভারে ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক আউট। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভার মাহমুদুল্লাহ আউট। শেষ মুহূর্তে মুশফিকের আউটাও বাংলাদেশকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই তামিমের, ‘এটা আসলে মানসিক কোনো বিষয় নয়। লাঞ্চের আগে, টি এর আগে একটা পড়ল আবার খেলা শেষে একটা পড়ল। এটার ব্যাখ্যা কীভাবে দিব সেটা বুঝতে পারছি না। এটা যদি হয়ে যায় তাহলে কিছু করার নেই। যদি না হত তাহলে হয়ত আমরা আরও ভালো পজিশনে থাকতেও পারতাম। ওই সময়ে রিয়াদ (মাহমুদুল্লাহ) ভাই নট

আউট থাকলে আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম। বিশেষ করে মুশফিক যদি আউট না হতো তাহলে আমাদের জন্য বেশ ভালো একটি দিন  যেত। এখনো ভালো দিন গেছে। কোনো দিক থেকে যে খারাপ গেছে সেটা বলব না। আমি এখনো আশাবাদী।’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস : ২২১/৫, ৭৪ ওভার (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪৮, মাহমুদুল্লাহ ৩৮)। মঈন ২/৬৬। (দ্বিতীয় দিন শেষে)

সর্বশেষ খবর