বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

লয়েডের হাতে প্রথম বিশ্বকাপ

মেজবাহ্-উল-হক

লয়েডের হাতে প্রথম বিশ্বকাপ

ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডেই খেলা হয়েছিল। আয়োজক ছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স (আইসিসি)! যার বর্তমান নাম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল। প্রথম আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।  অবশ্য তখন টুর্নামেন্টের নাম ছিল ‘প্রুডেনশিয়াল কাপ ৭৫’! স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ‘প্রুডেনশিয়াল অ্যাসুরেন্স কোম্পানি’র নাম অনুসারে আসরের নামকরণ করা হয়েছিল। ওই সময়ের টেস্ট খেলুড়ে ছয় দেশ (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং আইসিসির দুই সহযোগী শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকাসহ (কেনিয়া, উগান্ডা তানজানিয়া, জাম্বিয়া) আটটি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত ক্লাইভ লয়েডের হাতেই উঠেছিল বিশ্বকাপের ট্রফি।

 

রাজার নাম ‘ক্লাইভ লয়েড’

সুপার পাওয়ার এক দল নিয়ে ইংল্যান্ডে হাজির হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের প্রত্যেক সদস্যই স্ব-নামে বড় তারকা। আর তারকাসমৃদ্ধ সেই দলের নেতা হচ্ছেন ক্লাইভ লয়েড। ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সুচারু সিদ্ধান্তে যেমন দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনি ছিলেন দলের সেরা পারফরমারও। ফাইনালে তার ৮৫ বলে ১০২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসেই প্রথম আসরে শিরোপা স্বাদ গ্রহণ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপের প্রথম আসরে শিরোপা জয়ের পাশাপাশি বিজয়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে ‘ম্যান অব দ্য ফাইনাল’ পুরষ্কার জিতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন লয়েড। সত্যিই তিনি যেন এক ‘ক্রিকেট রাজা’।

 

গ্লেন টার্নারের ৩৩৩

এই সময়ের ক্রিকেট সেনসেশন ক্রিস গেইলের জার্সি নম্বর ৩৩৩! ভাবছেন গ্লেন টার্নার আবার কে? ইনি নিউজিল্যান্ডের মহাতারকা! ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে এই কিউই ব্যাটসম্যান করেছিলেন সর্বোচ্চ রান। তার রান ছিল ৩৩৩। সে কারণেই গ্লেন টার্নারের সঙ্গে সংখ্যাটি জড়িত। তবে টার্নারের অনবদ্ধ ব্যাটিংয়ের পরেও নিউজিল্যান্ড ফাইনালে খেলতে পারেনি। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে পরে তাদের যাত্রার যবনিকা ঘটে। তবে বার্মিংহামের এজবাস্টনে পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে তার অপরাজিত ১৭১ রানের ইনিংসটির কথা ক্রিকেটপ্রেমীরা যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবেন।

প্রথম বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ইংল্যান্ডের ডেনিস অ্যামিস (২৪৩), তৃতীয় পাকিস্তানের মজিদ খান (২২০), চতুর্থ আরেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেইথ ফ্লেচার (২০৭) এবং পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান টার্নার ২০১)।

 

গিলমোরের ১১ উইকেট

প্রথম বিশ্বকাপে ইংলিশদের যমদূত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্যারি গিলমোর। গ্রুপপর্বে যে ইংল্যান্ড তিন প্রতিপক্ষ ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকাকে তুড়ি মেরে উড়ে ছিল সেই দলটিকে যেন শূন্য থেকে এক ঝাটকায় মাটিতে নামিয়ে ফেলেন অলরাউন্ডার। বল হাতে মাত্র ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দেন ৯৩ রানেই। এরপর ব্যাট হাতে খেললেন অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলে ম্যাচ সেরাও হয়ে যান। ওই আসরে অসিদের চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলে গিলমোর ১১ উইকেট নিয়ে হয়ে যান সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার। 

 

প্রথম আয়োজক ইংল্যান্ড

বিশ্বকাপের প্রথম আসরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। আর এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিল ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ছয়টি ভেন্যুকে বেছে নেয় তারা। এগুলো হচ্ছে লন্ডনের দুই মাঠ ‘লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড’ ও ‘দি ওভাল’, বার্মিংহামের ‘এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড’ ম্যানচেস্টারের ‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড’, নটিংহ্যামের ‘ট্রেন্ট ব্রিজ’ ও লিডসের ‘হেডিংলি’। শিরোপা জিততে না পারলেও মনমুগ্ধকর আয়োজন দিয়ে নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছিল ইংল্যান্ড।

 

৬০ ওভারের ওয়ানডে

ওয়ানডে ক্রিকেট বলতে আমরা বুঝি ৫০ ওভারের ম্যাচ। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের। তখন একজন বোলার ১২ ওভার করে বোলিং করার সুযোগ পেতেন। প্রথম আসরে টেস্টের মতো ক্রিকেটার জার্সির রং ছিল সাদা এবং বলের রঙ ছিল লাল। খেলা শুরু হতো খুব সকালে, যাতে দিনের আলোতেই ম্যাচ শেষ করা সম্ভব হয়।

 

উপমহাদেশের প্রথম জয়

প্রথম বিশ্বকাপে উপমহাদেশের মোট তিনটি দল অংশ নিয়েছিল (ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা)।  ভারত ও পাকিস্তান টেস্ট খেলুড়ে দল হিসেবেই সুযোগ পেয়েছিল। আর শ্রীলঙ্কা সুযোগ পেয়েছিল আইসিসির ‘আমন্ত্রিত’ দল হিসেবে। ওই আসরে কোনো জয় পায়নি শ্রীলঙ্কা। উপমহাদেশের দল হিসেবে প্রথম জয় পেয়েছিল ভারত। তারা ৭৫-এর ১১ জুন পূর্ব আফ্রিকাকে ১০ উইকেট হারায়। জয় পেয়েছিল পাকিস্তানও। তারা ১৪ জুন ১৯২ রানে হারিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কাকে।

 

সর্বশেষ খবর