বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের আফসোসের শেষ নেই। সেই ম্যাচে দুটো পয়েন্ট পাওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল টাইগারদের। বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় সেক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারত। বিশ্বকাপের আমেজ শেষ হওয়ার আগেই সেই শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবশ্য জাতীয় দল হলেও এটাকে পূর্ণ শক্তির দল বলা যাবে না। অধিনায়ক মাশরাফি ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছেন। সাকিব নেই দলে। সাইফ উদ্দিন বিশ্রামে। লিটন দাস ছুটিতে। সবমিলিয়ে অন্য এক বাংলাদেশ এটা। তামিমের নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ কেমন করবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে, তার একটা আগাম ধারণা পাওয়া যাবে আজ। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের মুখোমুখি হচ্ছেন তামিমরা।
বিশ্বকাপের পর দলের চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার যেমন নেই তেমনি কোচিং স্টাফেও এসেছে রদবদল। হেড কোচ এখন সাবেক তারকা ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন। ব্যাটিং কোচ ওয়াসিম জাফর। এ দুই কোচের অধীনে এরই মধ্যে অনুশীলন করেছে টাইগাররা। কলম্বোর আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে অনেকটাই। আজ তামিমদের পাশাপাশি পরীক্ষা হবে কোচদেরও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের মূল ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে ২৬ জুলাই। এরপর ২৮ ও ৩১ জুলাই আরও দুটি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল। তিনটা ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে দিবারাত্রি।
‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল দুবাইয়ে। যদিও দুই দলের পারস্পরিক মুখোমুখিতে অনেকটাই এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। তবে গত দুই-তিন বছরে লড়াই হচ্ছে সমানে সমানে। ২০১৭ সালে দুই দলের সর্বশেষ সিরিজ শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। এবার বাংলাদেশ লঙ্কানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে প্রায় সোয়া দুই বছর পর। শ্রীলঙ্কা যাত্রার আগেই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম বলেছিলেন, ‘এই সিরিজটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রমাণ করার অনেক কিছু আছে। ইনজুরির জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ক্রিকেটার এই সিরিজে যাচ্ছে না। তাই সিরিজটা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। অবশ্য আগের সিরিজগুলোয় আমরা ওদের বিপক্ষে ভালো করেছি। আশা করি, এবারও চ্যালেঞ্জে উতরে যাব।’ সফরের চ্যালেঞ্জটা আজ থেকেই শুরু হচ্ছে।
প্রস্তুতি ম্যাচের খেলা দেখেই দল চূড়ান্ত করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার সুযোগ পেতে পারেন তাইজুল ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, তাসকিন আহমেদ ও ফরহাদ রেজা। আজ নিজেদেরকে কতটা মেলে ধরতে পারেন তার উপরই নির্ভর করবে মূল একাদশে তারা স্থান পাবেন কি না। তাইজুল অবশ্য বলেছেন, সুযোগ পেলেই তা কাজে লাগাতে চান। মূল দলে স্থান পাওয়ার লক্ষ্য আছে অন্যদেরও। দেখা যাক, কাদের ভাগ্য সদয় হয়!
বাংলাদেশের জন্য এবারের সিরিজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শ্রীলঙ্কার জন্যও। বিশ্বকাপ পরবর্তীয় সময়ে নিজেদেরকে প্রমাণ করার জন্য লড়বে টাইগাররা। অন্যদিকে লঙ্কানরা লড়বে নিজেদের ক্রিকেটের গতিপথটা ঠিক করতে। বিশেষ করে লাসিথ মালিঙ্গা ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন এই সিরিজেই। তার সঙ্গেই লঙ্কান ক্রিকেটের স্বর্ণ যুগ পুরোপুরি বিদায় নিতে যাচ্ছে। সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়বর্ধনের বিদায়ের পর যে হাহাকার ছিল লঙ্কান ক্রিকেটে তার কিছুটা হলেও দূর করছিলেন মালিঙ্গা। তারপর লঙ্কান পেস আক্রমণে নতুন তারকার আগমনে কতটা সময় নেয় তা ভবিষ্যতেই জানা যাবে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ ড্র করলেও কখনোই জিততে পারেনি। ২০১৬/১৭ মৌসুমে টেস্ট সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছিল। একই মৌসুমে লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজও ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছিল টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজ অবশ্য দুইবার ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছে। একবার ২০১২/১৩ মৌসুমে। আরেকবার ২০১৬/১৭ মৌসুমে। এবার কী সিরিজ জয়ের কাজটা করতে পারবেন তামিম ইকবালরা! আজ শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের মুখোমুখি হয়ে নিজেদেরকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে নিবেন টাইগাররা। পাশাপাশি হয়ত প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আশাটাও বড় করে নিবেন!