বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

‘আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি’

‘বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশকে প্রথম জয় উপহার দিতে পারাটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।’

আসিফ ইকবাল

‘আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি’

বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের নায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু

বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্ভাগা ক্রিকেটার বলা হয় তাকে। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু; মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। এখন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক। ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের গোয়ার্তুর্মিতে ফর্মের তুঙ্গে থেকেও খেলতে পারেননি অভিষেক টেস্ট। শুধু অভিষেক টেস্টই নয়, দেশের সেরা সৃজনশীল ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক পরিসরে সাদা পোশাকে ও লাল বলে খেলা হয়নি কখনো। অথচ ৫৫ বছরের নান্নুর হাত ধরে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বৈরী পরিবেশে চরম বিপর্যয়ের মুখে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে স্বপ্নের জয় উপহার দিয়ে ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন। ২১ বছর পর ঐতিহাসিক ওই ম্যাচের স্মৃতি রোমন্থন করতে যেয়ে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশকে প্রথম জয় উপহার দিতে পারাটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।’ ‘বিশ্বকাপ খেলতে পারব কি না, শুরুতে জানতাম না। মিডিয়ার চাপে আমাকে শেষ মুহূর্তে দলে নেয় ক্রিকেট বোর্ড। তাই শুরু থেকেই আমার উপর পাহাড়সম চাপ ছিল। অবশ্য আমার মনেও জিদ ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নেমে ৫ রানের বেশি করতে পারিনি। চাপে পড়ে যাই। তবে টিমমেটরা উৎসাহ দিয়ে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন তখন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এডিনবার্গে যখন ব্যাট করতে নামি, তখন ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অনেকটাই কোণঠাসা আমরা। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ের চরম সীমায় চলে আসে দল। এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে আমরা যখন স্তব্ধ, তখনো ভড়কে যাইনি আমি। বিশ্বাস ছিল পারব। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম একটি জুটির। ষষ্ঠ উইকেটে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ি। এরপর অষ্টম জুটিতে মনি কিছুটা সহায়তা করে। আমি উইকেট আগলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকি। দলের স্কোর ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান হলে আমি নিশ্চিত হই জয়ের ব্যাপারে। ফিল্ডিংয়ে আমরা দারুণ বোলিং করে জিতে যাই ২২ রানে।’

৬৮ রানের হার না মানা ইনিংসটি নান্নু খেলেছিলেন ১১৬ বলে ৬ চারে। ম্যাচসেরা নান্নু আবার বল হাতে উইকেটও পেয়েছিলেন। ২৭ ওয়ানডেতে দুটি হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো নান্নুর রান ৪৫৩। স্কটল্যান্ডকে হারানোর পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৩ রানের আরও একটি নান্দনিক ইনিংস খেলেছিলেন নান্নু। কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসটিকে জীবনের সেরা বলতে ভাবেননি এক মুহূর্ত, ‘এমনিতেই চাপে ছিলাম। তাই রান করা আমার জন্য ফরজ হয়ে উঠেছিল। অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের। যদিও প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলাম। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথম জয় উপহার দিতে পেরে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছিল সেদিন। আমার ক্যারিয়ার যেমনই হোক না কেন, বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটিই আমাকে চিরস্থায়ী করেছে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে, এটাই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথম জয় উপহার দেওয়া নান্নুর দুঃখও রয়েছে। টেস্ট খেলতে না পারার দুঃখ বয়ে বেড়াবেন আমৃত্যু।  

সর্বশেষ খবর