‘বাংলাদেশ স্পিননির্ভর দল! ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘূর্ণি জাদুতে নাকাল করে ছাড়ে!’
-এমন আলোচনার দিন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো যারা সফরে আসেন স্পিন আতঙ্ক নিয়েই তারা খেলতে নামেন। আসলে ম্যাচে দেখা যায় উল্টো চিত্র। বাংলাদেশের পেসাররাই জয়ে বড় অবদান রাখেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডে স্কোয়াডেও তাই পেসারদের আধিক্য। ছয়জন পেসারকে রেখেই চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ১৮ সদস্যের দলে তিনজন নতুন মুখ, তার মধ্যে দুজনই পেসার।
হাসান মাহমুদের সঙ্গে দলে সুযোগ পেয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের তারকা শরীফুল ইসলাম। অলরাউন্ডার হিসেবে প্রথমবারের মতো দলে সুযোগ পেয়েছেন মেহেদী হাসান।
জাতীয় দলে প্রাথমিক স্কোয়াড থেকে দুই পরীক্ষিত পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও শফিউল ইসলামকে বাদ দেওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো এবার ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে পেস আক্রমণ ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু স্কোয়াডে দেখা যায় অন্য চিত্র!
একটুখানি পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, স্কোয়াডে পেস বোলারের আধিক্য নতুন কিছু নয়। কেননা টাইগাররা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সর্বশেষ যে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল সেখানেও মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন পেসাররা।
২০১৮ সালে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৪ ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। মজার বিষয় হচ্ছে, ওই ২৪ উইকেটের মধ্যে ১৫ উইকেটই শিকার করেছিলেন পেসাররা। এরপরও কি বলার উপায় আছে বাংলাদেশ স্পিননির্ভর দল!
সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয়দের পতন ঘটা ৯ উইকেটের মধ্যে ৭টি পেসারদের দখলে ছিল। দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য মাশরাফি ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও পেসারদের আধিক্য। তৃতীয় ম্যাচে স্পিনাররা দাপট দেখালেও জয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলেন পেসাররাই। সেই ম্যাচে মুস্তাফিজ কোনো উইকেট পাননি, কিন্তু অসাধারণ বোলিং করেছেন। দ্য ফিজ ১০ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৩৩ রান, আর ম্যাশ তো ৩৪ রানে ২ উইকেটই নিয়েছেন। তাই ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে এই সিরিজেও যে ‘পেস বোলিং’কে প্রধান অস্ত্র ধরে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট রণকৌশল সাজাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাসান মাহমুদ ও শরীফুল ছাড়াও দলে রয়েছেন অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ। নতুনদের জায়গা করে দিতে সুযোগ পাননি পেসার আল-আমিন। তিনি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সিরিজে স্কোয়াডে ছিলেন।
ঘোষিত দলে খুব বেশি পরিবর্তন নেই। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বাদ পড়েছেন সর্বশেষ দলে থাকা মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আর অনুমিতভাবেই নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা সাকিব আল হাসান দলে জায়গা করে নিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে নেতৃত্বে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ দিয়েই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ দলকে টানা নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। তাঁর নেতৃত্বে ক্রিকেট বিশ্বে টাইগাররা প্রতিষ্ঠিত শক্তি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
তিন ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালসহ আরও অনেক অর্জন।
জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করা তো ছিল ‘ডাল-ভাত’! ম্যাশের ক্যাপ্টেন্সিতে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই শেষ ১০ বারের দেখায় ৮ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফির বাংলাদেশ ৮৮টি ওয়ানডের মধ্যে জয় পেয়েছে ৫০টিতে। এখন যাত্রা শুরু হচ্ছে তামিমের বাংলাদেশের!
ঘরের মাঠেই হোক কিংবা বিদেশে- মাশরাফি চোখ বন্ধ করে পেসারদের নিয়ে বাজি ধরতেন! অধিকাংশ সময় দেখা যেত স্কোয়াডে চার পেসার। এখন দেখার বিষয়, নতুন অধিনায়ক তামিম ইকবাল সেই পথে হাঁটেন কি না!
ওয়ানডে দল ঘোষণা
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ম্স্তুাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, রুবেল হোসেন।