শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বোলিং আমার অস্ত্র, ব্যাটিং আত্মবিশ্বাস

বোলিং আমার অস্ত্র, ব্যাটিং আত্মবিশ্বাস

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি। তাই মেহেদী হাসান মিরাজের উল্লাস ছিল বাঁধভাঙা। গতকাল চট্টগ্রামে...

যুবদলে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রধান পরিচয় ছিল ‘ব্যাটসম্যান’। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি শুধুই বোলার। বল হাতে যতটা সফল, ঠিক ততটাই ব্যর্থ ছিলেন ব্যাট হাতে। অবশেষে আঁধার কেটে গেল। সেই মিরাজই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করলেন। তার ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়েই চট্টগ্রাম টেস্টে এখন চালকের আসনে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পাওয়া প্রথম সেঞ্চুরির পর নেপথ্যের রহস্য নিজেই জানালেন মেহেদী মিরাজ-

 

অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা পারেননি, আপনি পেরেছেন! কেমন লাগছে সেঞ্চুরির পর?

মেহেদী মিরাজ : এরকম একটা সেঞ্চুরি করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। সত্যি কথা বলতে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

বোলার মিরাজের ক্যারিয়ারে এই সেঞ্চুরি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আমি যখন শুরু করেছি প্রথমদিকে ভালো ব্যাটিং করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি আস্তে আস্তে নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি। শেষ কিছুদিন খুবই পরিশ্রম করেছি। সে কারণেই হয়তো রান করতে পেরেছি।

সিনিয়রদের কাছ থেকে কোনো টিপস নিয়েছিলেন কিনা!

আমি যখন নেটে ব্যাট করছিলাম তখন তামিম ভাই আমাকে বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন। এর আগে মুশফিক ভাইও বেশ কিছু উপদেশ দিয়েছেন। উনি যখন আগে আগে অনুশীলন করতে আসতেন, আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। তার সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি।

সিনিয়ররা কী কী পরামর্শ দিয়েছিলেন?

তামিম ভাই বলেছিলেন জোরে আসা বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে! শরীরের ওপর যে বলগুলো আসে সেগুলো সোজা রাখার জন্য বলেছেন। সেটা আজ (গতকাল) অ্যাপ্লাই করেছিলাম। মুশফিক ভাই সে কথা বলেছিলেন। উনি নিষেধ করেছিলেন বাইরের বল খেলতে। যাতে কোনো রকম খোঁচাও না দিই। প্রতি বলেই মনোযোগী হতে বলেছেন। দুজনের টিপসই আমার অনেক কাজে লেগেছে।

আপনি কি ভেবেছিলেন এ ম্যাচেই সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন?

মনে এমন কিছু ছিল না। তবে খেলা শুরুর আগে খুলনায় থাকা আমার প্রথম কোচ ‘আল-মাহমুদ’ আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, এই টেস্টে আমার কাছ থেকে একটা সেঞ্চুরি দেখতে চান। কিন্তু আমার তা বিশ্বাস হচ্ছিল না, এটা কেমনে সম্ভব? আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে কি সেঞ্চুরি করা যায়! তবে উনি আমাকে সাহস দিয়েছেন, ‘তোর সামনে ভালো সুযোগ আছে। ভালো করে খেলতে পারলে সেঞ্চুরি করতে পারবি।’

সাকিব আল হাসান আউট হয়ে ফেরার সময় আপনাকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন?

প্রথমদিকে উইকেটে যাওয়ার পর আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। তখন সাকিব ভাইকে বলি, কীভাবে খেলা যায়। উনি একটা কথাই বলেছেন, যে বল খেলবি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবি। যেটা জোরে মারবি সেটা যেন বাউন্ডারি হয়ে যায়। যেমন প্রথমদিকে আমি চিন্তা করছিলাম, স্লোগ সুইপ খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়াব। কিন্তু সাকিব ভাই বললেন, এখানে স্লোগ সুইপের চেয়ে প্যাডল সুইপ খেলা অনেক ভালো। তখন আমার চিন্তার পরিবর্তন হয়। এসব ছোট বিষয়গুলোই আমার কাজে দিয়েছে।

ড্রেসিং রুমের বার্তা কী ছিল?

ব্যাট করতে নামার আগে ড্রেসিংরুমে মুশফিক ভাই বললেন, এই উইকেটে ভালো করার সুযোগ আছে। ভালো ৬০-৭০ রানে অপরাজিত থাকতে পারবি। ড্রেসিংরুমে সিনিয়ররা যখন এমন পরামর্শ দেন তখন আমাদের জুনিয়রদের সাহস বেড়ে যায়। তখন নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করা যায়।

আপনি যখন ৯০-এর ঘরে তখন শেষ উইকেটে অপর প্রান্তে মুস্তাফিজ তখন কী মনে হচ্ছিল?

মুস্তাফিজ আমাকে বলছিল, দোস্ত তোর জন্য আমার ভয় লাগছে। যদি এমন সময় আমি আউট হয়ে যাই! আমি ওকে বলেছি, দোস্ত তোর চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটা তোর হাতে নেই। আউট হলে হবি, তবে তুই ভয় না পেয়ে তোর স্বাভাবিক খেলাটা খেলার চেষ্টা কর।

এখন কি পারফেক্ট অলরাউন্ডার হিসেবে মিরাজকে দেখা যাবে?

আমি বোলার হিসেবে দলে সুযোগ পাই। ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগই পেতাম না। এখনো তাই। আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান। বোলিং আমার অস্ত্র, ব্যাটিং আত্মবিশ্বাস দেয়। আমি চেষ্টা করব দুটোই ভালো করার জন্য।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি কাকে উৎসর্গ করছেন?

অবশ্যই এই সেঞ্চুরি আমাদের পরিবারের মানুষদের উৎসর্গ করব। বাবা-মা সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করেন। আমার চার মাস বয়সী একটা বাচ্চা আছে। আমি যখন মাঠে আসি, ওর মা ওকে বলে বাবাকে একটু দোয়া করে দাও। এ বিষয়গুলো আমার খুবই ভালো লাগে।

সর্বশেষ খবর