বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কাল শুরু ঢাকা টেস্ট

সাকিবের শূন্যতা কাটবে কি

মেজবাহ্-উল-হক

সাকিবের শূন্যতা কাটবে কি

সাকিব আল হাসান না থাকলে টিম ম্যানেজমেন্টের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়! কারণ, একজন বোলার কিংবা ব্যাটসম্যানকে বাড়তি খেলাতে হয়। পারফেক্ট কম্বিনেশন ঠিক করাই কঠিন হয়ে যায়।

সাকিব না থাকলে বোলিংয়ে তার অভাবটা খুব ভালোভাবেই টের পায় বাংলাদেশ দল। সেটা চট্টগ্রামে জেতা ম্যাচে হারের পর আরেকবার অনুধাবন করলেন মুমিনুলরা। একজন উইকেট শিকারি বোলারের অভাবে যেন মুখের কাছে চলে আসা খাবারের স্বাদ আস্বাদন করতে ব্যর্থ টাইগাররা।

সাকিব না থাকলে ব্যাটসম্যানরাও ঠিকঠাক তাদের কাজটা করতে পারেন না! কারণ মানসিকভাবে তারা যেমন দুর্বল চিত্তের হয়ে যান তখন। বাইশগজে যাওয়ার আগেই যেন তাদের মনোবল অনেকটা ভেঙে যায়।

সবচেয়ে বড় কথা সাকিব না থাকলে অধিনায়কও যেন সঠিকভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না! চট্টগ্রামে হারের অন্যতম কারণও এটা। ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক একা হয়ে গিয়েছিলেন। যে কারণে ফিল্ডিং সাজানো থেকে শুরু করে বোলিং চেঞ্জ, সতীর্থদের বুস্ট-আপ করা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া- কোনোটাই ঠিকঠাক মতো হয়নি। ক্যাপ্টেন্সিতেও সাকিবের অভাব (পরামর্শ) পরতে পরতে অনুভব করেছেন মুমিনুল হক।

সাকিব না থাকলে বাংলাদেশ দল হেরে যায়! এটাই চরম বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ দলে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যেন পুরো দলকে ছায়া দিয়ে রাখেন, তাই তিনি না থাকলে খর রোদ্রে সবার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়!

-এভাবে সাকিব নির্ভরতা আর কত দিন?

কেনই বা সাকিবের বিকল্প তৈরি করা যাচ্ছে না!

ক্রিকেটে একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ মাঠেই নামত সম্মানজনক হারের কথা চিন্তা করে। বলতে গেলে, লড়াইয়ে নামার আগেই হেরে বসে থাকত। হয়তো প্রত্যেকটি দলের ক্ষেত্রেই শুরুর দিকে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এই বাংলাদেশ সেই সময় তো পার করে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে টেস্ট না খেললেও ঘরের মাঠে বরাবরই প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক টাইগাররা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও হারানোর অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই তো আগের সফরে এসে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। দুই ম্যাচের একটিতে তো ক্যারিবীয়রা ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল। এবার তবে কেন এমন হলো?

ক্রিকেটে সব সময়ই অধিনায়কের ভূমিকা থাকে চোখে পড়ার মতো। সে উদাহরণ খুঁজতে অন্য দেশের দিকে তাকানোর দরকার নেই। ওয়ানডের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কী দারুণভাবেই না ক্রিকেটারদের ভিতর থেকে সেরা পারফরম্যান্সটা বের করে নিয়ে আসতেন। অধিনায়কের সার্থকতা তো সেখানেই। চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে এই কাজটি মুমিনুল হক সঠিকভাবে করতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে!

সে যাই হোক, দলে একজন সাকিব থাকলে পুরো স্কোয়াডের মনোবলই চাঙা হয়ে যায়। কারণ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজে যেমন আত্মবিশ্বাসী, তেমনি সেই আত্মবিশ্বাসের সুবাসটা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেন।

কিন্তু চট্টগ্রামে টাইগার-ব্রিগেড যখনই জানতে পারলেন সাকিব খেলতে পারছেন না, শেষ দুই ইনিংসে ব্যাটিং, বোলিংও করতে পারবেন না, তখনই যেন ছবিটা পাল্টে গেল। পুরো চার দিন ডমিনেট করেও শেষ দিনের ব্যর্থতায় ফলাফল শূন্য।

একে তো পছন্দের উইকেট-তিন তিনজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার দলে, তারপরও প্রতিপক্ষ ৩৯৫ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করে রেকর্ড গড়েই জয় তুলে নিল। কাইল মেয়ার্স অসাধারণ খেলেছেন- তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা কি তাদের কাজটা সঠিকভাবে করতে পেরেছিলেন?

স্পিনাররা একের পর এক শট করেছেন। এমন উইকেটে শট বল করা মানে ব্যাটসম্যানদের রান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো! মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম ইনিংসে দাপট দেখালেও দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি। ইনসুইং ছিল না তার বলে। এ ছাড়া ফিল্ডারদের ব্যর্থতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। যেখানে একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেও অনেক সময় ম্যাচের গতি পাল্টে যায়, সেখানে একের পর এক ভুল হলে কি টেস্ট জেতা সম্ভব!

চট্টগ্রাম টেস্টের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কি ঢাকা টেস্টে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়! এখানেও একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যায়! সেটা সাকিবের অনুপস্থিতি।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অনুপস্থিতি যেন ক্রিকেটারদের মধ্যে ট্রমার মতো কাজ করছে! ক্রিকেটারদের এই ট্রমা কাটানোর দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের। 

সাকিব না থাকলেও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে ভয়ংকর, এই বিশ্বাসটা ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকাটা খুবই জরুরি! অধিনায়ক, কোচ তথা টিম ম্যানেজমেন্ট যদি পুরো স্কোয়াডকে ঠিকঠাক মটিভেট করতে পারে, তাহলে ঢাকা টেস্টে জয় পাওয়াটা খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়!

সর্বশেষ খবর