রবিবার, ৩০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

‘নিখুঁত’ ক্রিকেট খেলতে পেরেছেন কি টাইগাররা

ব্যাটিংয়ে মুশফিক বোলিংয়ে চামিরা

মেজবাহ্-উল-হক

‘নিখুঁত’ ক্রিকেট খেলতে পেরেছেন কি টাইগাররা

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হার টাইগারদের সাফল্যে ‘প্রশ্ন চিহ্ন’ এঁকে দিয়েছে! যে ম্যাচে লঙ্কান একাদশে অভিষেক হয়েছে এক সঙ্গে তিন ক্রিকেটারের।  তারপরও কেন বাংলাদেশের এমন পরাজয়?

প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দেয়নি স্বাগতিকরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই দুর্দান্ত বাংলাদেশ দল। কিন্তু শেষের ম্যাচে টাইগাররা ছিলেন ছন্দহীন।যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং। ব্যাটিংয়েও হতাশার চিত্র।

তিন ম্যাচের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সিরিজে সেরা ৫ ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজনই শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের টপ তিনের একজনও নেই এই তালিকায়। শীর্ষে আছেন মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তিন ম্যাচে তিনি ৭৯ গড়ে করেছেন ২৩৭ রান। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে।

সেরা পাঁচে আছেন ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৪৯.৩৩ গড়ে তিনি করেছেন ১৪৮ রান। তবে দুই ওপেনার, তিন নম্বর এবং পাঁচ নম্বর পজিশনে সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যানরা একদমই ভালো করতে পারেননি। ওপেন করতে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবাল কেবল এক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, বাকি দুই ম্যাচে ব্যর্থ। আরেক প্রান্তের ওপেনারের তিন ম্যাচ মিলে মোট রান ২৬ (লিটন ২৫, ০ এবং নাঈম ১)।

ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ সাকিব আল হাসান যেন নিজেকে খুঁজেই পেলেন না! তিন ম্যাচ মিলে তার স্কোর ১৯ (১৫, ০, ৪)। মিডল অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে পারেননি মোহাম্মদ মিথুন। পরের দুই ম্যাচে মোসাদ্দেক করেছেন ১০ ও ৫১ রান।

তবে ব্যাটসম্যানদের তুলনায় বাংলাদেশের বোলাররা বেশ ভালো করেছেন। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ম্যাচে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম দুই ম্যাচে টাইগারদের বোলিং আক্রমণ ছিল রীতিমতো সমীহ জাগানিয়া।

শেষ ম্যাচে বড় হারের পেছনে বোলারদের ওপর দায় চাপানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ একের পর এক ক্যাচ মিস হলে বোলারদের আর কি-ই-বা করার আছে!

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন লঙ্কান তরুণ পেসার দুষ্মন্ত চামিরা। তিন ম্যাচে মাত্র ৩.৭৮ ইকোনোমি রেটে বোলিং করে তুলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। শেষ ম্যাচে তার দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। মাত্র ১৬ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট।

চামিরা যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার জায়গাটি। তামিমরা যে গতির কাছে অসহায় -তা এই সিরিজেই ফুটে উঠেছে। চামিরা বেশির ভাগ সময় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে গতি দিয়ে বোলিং করেছেন। বাইশগজে গতির ঝড় তুলে সফলও হয়েছেন এই লঙ্কান।

এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তিও কম নয়। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ। বিশ্বকাপ সুপার লিগের শীর্ষে ওঠা। বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে মিরাজ-মুস্তাফিজের সুযোগ পাওয়া। র‌্যাঙ্কিংয়ে মুশফিকের ক্যারিয়ার সেরা অবস্থানে উঠে আসা (১৪তম)।

সব কিছুর পরও সিরিজের শেষ ম্যাচটি অন্যরকম বার্তাই দিচ্ছে!

এই সিরিজে ‘নিখুঁত’ ক্রিকেট খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল বাংলাদেশ দল। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন টাইগাররা। সেটা কি পেরেছেন তামিমরা? পুরো সিরিজে কি ‘নিখুঁত’ ক্রিকেট খেলা সম্ভব হয়েছে?

সর্বশেষ খবর