শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাটিং আঁধারে আলো মুমিনুল

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিং আঁধারে আলো মুমিনুল

স্ট্যাম্পের ওপর বল করলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন মুমিনুল হক। বিশাল ছক্কা। ক্যারিশম্যাটিক এক শট। এই ম্যাচে মুমিনুল হক যে কতটা আত্মবিশ্বাসী তার এই শটেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট পতনের পর নিজের মনোসংযোগও আর ধরে রাখতে পারলেন না বাংলার ব্যাডম্যান খ্যাত এই ব্যাটসম্যান।

সেঞ্চুরি দিয়ে প্রত্যাবর্তনটা রাঙিয়ে দেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ ছিল। মুমিনুল চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু শেষ দিকে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে তাকে একপ্রান্তে থেকে ব্যাটিং করতে হয়েছে। ওভারের প্রথম চার বলে তিনি কোনো সিঙ্গেল নিতে পারেননি। কারণ অপরপ্রান্তে স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান ছিলেন না।

টেস্টের ইতিহাসে এমন অনেক রেকর্ড আছে অন্যপ্রান্তে বোলারকে নিয়েও ঘণ্টার ঘণ্টা উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবার আগে আসে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকসের কথা। ২০১৯ সালের আগষ্টে অ্যাশেজ সিরিজে লিডস টেস্টে শেষ ব্যাটসম্যান লিচকে নিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ৭৪ রানের মহাকাব্যিক এক জুটি গড়েছিলেন স্টোকস। মজার বিষয় হচ্ছে, ওই ৭৪ রানের মধ্যে মাত্র ১ রান এসেছিল লিচের ব্যাট থেকে। ১ রানে জিতে যেন মহানায়ক হয়ে গিয়েছিলেন। গতকাল মুমিনুলের সামনেও নিজের ফেরার মঞ্চটাকে আরও রঙিন করার চান্স ছিল। কিন্তু ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’ তা পারলেন না।

মিরপুর কাল টেস্টের প্রথম দিনে মুমিনুল খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। মাত্র ১৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হওয়ার আক্ষেপ থাকলেও ‘শ্বাসকষ্টে’ ভোগা টাইগার দলের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য এই ইনিংস যেন জীবন রক্ষাকারী ‘অক্সিজেন’।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে মুমিনুল খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। মাত্র ১৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হওয়ার আক্ষেপ থাকলেও ‘শ্বাসকষ্টে’ ভোগা টাইগার দলের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য এই ইনিংস যেন জীবন রক্ষাকারী ‘অক্সিজেন’।

সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সুযোগ না পেলেও টেস্টে মুমিনুল হিলেন ধারাবাহিকতার মূর্ত প্রতীক। কিন্তু সেই মুমিনুল হঠাৎই নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। নেতৃত্বের দায়িত্ব বোঝা হয়ে তার কাঁধে চেপে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে তিনি রঙ হারাতে থাকেন। তিনি যে দেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান সেটাও যেন ভুলে যান। এরপর মুমিনুলের কাঁধ থেকে ক্যাপ্টেন্সির বোঝা সরিয়ে নেওয়ার পরও যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সব শেষ ১২ ইনিংসে মুমিনুলের মোট রান ছিল ৭৮। বাধ্য হয়েই তাকে বসিয়ে রাখা হয়। কয়েক ম্যাচ বিরতির পর আবার সুযোগ পেলেন। প্রথম ইনিংসই হাঁকালেন দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি। তবে সম্মিলিত ব্যর্থতার দিনে দলীয় স্কোরলাইনটা বড় হয়নি। প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ।

ব্যাটিং ব্যর্থতা টাইগারদের জন্য নিয়মিত ঘটনা। আর খেলা যদি হয় মিরপুরে রহস্যময় উইকেটে তাহলে তো কথাই নেই। তবে স্কোর কার্ডের দিকে তাকালে এবং আউট হওয়ার ধরন দেখলেও যে কারও বিরক্ত লাগার কথা! উইকেটে সেট হওয়ার পরও কেন ইনিংসকে বড় করতে পারলেন না ব্যাটসম্যানরা?

জাকির হাসান ও নাজমুল হাসান শান্তর উদ্বোধনী জুটিটা বেশ জমে উঠেছিল। দারুণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু দলীয় ৩৯ রানের মাথায় দুই ওপেনার আউট। চট্টগ্রামে অভিষেক সেঞ্চুরি করার পর গতকাল  ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি জাকির। যদিও রানের খাতা যোগ করার আগেই তিনি একবার নতুন জীবন পেয়েছেন। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা শান্ত সাজঘরে ফিরলেন ২৪ রান করে।

এরপরই শুরু হয় মুমিনুলের লড়াই। তিনে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করতে থাকেন। আরেক প্রান্তের একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। মাত্র ১৬ রান করে আউট।

মুশফিকুর রহিমকে বেশ প্রত্যয়ী মনে হচ্ছিল। উইকেটে দারুণ সেটও হয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি। সম্প্রতি ইংলিশ ব্যাটারদের দেখে অনুপ্রারিণত হয়ে যেন ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন দাস। কিন্তু ২৫  রানেই আটকে যান। আট নম্বর থেকে মেহেদী হাসান মিরাজকে সাতে প্রমোশন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ১৫ রান করার পর মিরাজও ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন। আর ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে পড়া নুরুল হাসান সোহান এ ম্যাচে ডাবল ফিগারেই পৌঁছাতে পারেননি। মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ঘুরে ফিরে সেই ব্যর্থতার গল্প। তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং আঁধারের মাঝেও একটুখানি আলো জ্বালালেন মুমিনুল। 

সর্বশেষ খবর