মাঠ না থাকায় খেলার উপায় নেই। ছেলেরা ভিডিও গেমস আর মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সিলেটবাসী এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অভিনব পদ্ধতিই বেছে নিয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে অনেক ইনডোর টার্ফ। যেখানে ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া নিয়ে ফুটবলের বিনোদন নেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে শুরু হয়ে ফুটবলের এই বিনোদন চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
সিলেটের নানা স্থানে গড়ে উঠেছে ইনডোর টার্ফ। এগুলো ফিফা কিংবা এফসির মান অনুযায়ী কোনো ফুটবল টার্ফ নয়। মূলত ফুটসালের আইডিয়াকে সামনে রেখে গড়ে উঠেছে এসব টার্ফ। যেখানে ছোট গোলবার বসিয়ে ছোট পরিসরে ফুটবল খেলে থাকেন সাধারণ মানুষ। এসব টার্ফে অর্থ খরচ করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটবল খেলেন তারা। এদের মধ্যে আছেন ব্যাংকার, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্রসহ নানা পেশার মানুষ। যার যার অবসর সময়ে ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠেন তারা। সিলেট শহর ঘুরে ২৪টি টার্ফের সন্ধান মিলেছে। সকার জোন, ফ্রি কিক, ক্রসবার, গোল, স্পোর্টস কিংডম কিংস ফুটসালসহ আরও কত নাম! এর বাইরে নাকি আরও আছে। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন, ‘৪০-৫০টি টার্ফ গড়ে উঠেছে সিলেটজুড়ে। এসব টার্ফে খেলে শারীরিকভাবে মানুষ যেমন সুস্থ থাকছে, তেমনি মাদক ও ভিডিও গেমস থেকেও দূরে থাকতে পারছে তরুণ সমাজ।’
দিনে ৬০০ এবং রাতে ৮০০ টাকা ঘণ্টাপ্রতি ফি দিতে হয় এসব টার্ফে খেলার জন্য। একেকবারে ৮ থেকে ১৪ জন খেলতে পারেন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক আবদুল হাই বলেন, ‘এসব টার্ফে টাকা খরচ করে খেলতে হলেও আমরা এখানে বেশ নিরাপদ অনুভব করি। তাছাড়া পরিবেশটাও বেশ সুন্দর। আপনি চাইলে খেলার পরে এখানে নিজেকে ফ্রেশ করে তুলতে পারবেন।’ বেশ কয়েকটি পাবলিক মাঠ থাকলেও সেখানে পরিবেশ ভালো না থাকায় খেলতে পারেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।ইনডোর টার্ফ গড়ে ওঠার নেপথ্যে আছে কাউন্সিলর আজাদ কাপ ফুটসাল টুর্নামেন্ট। ২০১০ সালে এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়। করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত নিয়মিতই আয়োজন করা হতো। বর্তমানে বন্ধ থাকলেও মাঠের কাজ শেষ করে আবারও এই টুর্নামেন্ট শুরু করতে চান সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ফুটসাল টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম ২০১০ সালে। বেশ সাড়া জাগায় টুর্নামেন্টটি। ৫১২টি দল এতে অংশ নেয়।’ সিলেটে নীরবে বিপ্লবই ঘটে গেল। বর্তমানে দারুণ ব্যবসা হচ্ছে ইনডোর টার্ফে। সিলেটের সকার জোন ইনডোর টার্ফের ম্যানেজার সোহান আহমেদ দিপু বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করেই ইনডোর টার্ফ করার সিদ্ধান্ত নিই ২০২১ সালে। এই টার্ফটা তৈরি করতে আমাদের খরচ হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে আমাদের পুঁজির বেশির ভাগই উঠে এসেছে। আশা করছি শিগগিরই লাভের মুখ দেখতে পারব।’ সকার জোন টার্ফটা ৪০ বাই ৯০ ফুট আয়তনের। সিলেটে এর চেয়েও বড় আয়তনের টার্ফ আছে বেশ কয়েকটা। আবার ছোটও আছে। সব মিলিয়ে সিলেটবাসী ফুটবলের বিনোদন নেওয়ার দারুণ এক সুযোগই পেয়েছেন।