রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার পেরেছেন মুশফিক

মন জয় করে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। কী দারুণ ফিনিশিং। লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কী লড়াই-ই না করলেন! যেন অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেললেন

মেজবাহ্-উল-হক

এবার পেরেছেন মুশফিক

মুশফিকুর রহিম কি পারবেন?

৪০তম ওভারে আউট হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ যখন ধীর পায়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছিলেন তখন সমর্থকদের মনে এমন প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক!

মুশফিক-মিরাজ জুটি ছিল বাংলাদেশের স্বীকৃত শেষ জুটি। তারা উইকেটে যেভাবে ব্যাট করছিলেন মনে হচ্ছিল সহজেই জিতে যাবে টাইগাররা। কিন্তু স্পিনার জর্জ ডকরেলের এক ডেলিভারিতে সব এলোমেলো হয়ে যায়। যদিও বলটি বাইরের দিকে টার্ন করছিল। তাই মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ার পরও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মিরাজ। তাই দ্রুত রিভিউ নেন। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্ট্যাম্পে সামান্য একটু স্পর্শ করেছে। তাই আম্পায়ার্স-কলে আউট।

তখনো জয় থেকে ৩৪ রান দূরে বাংলাদেশ। হাতে ছিল ৩৩ বল। বাইশগজে ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করে মুশফিক ও মিরাজ যখন রান ও বলের ব্যবধান সমান করে ফেললেন তখনই আঘাত।

হতাশায় মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন মিরাজ। গ্যালারিতে যেন তখন নীরবতা নেমে আসে। টিভির দিকে হয়তো তখন নির্বাক তাকিয়ে ছিল কোটি কোটি চোখ। তবে কি এবার তীরে এসে তরী ডুবে যাচ্ছে!

মুশফিকের মুখচ্ছবিতে চিন্তার ছাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দল জেতাতে না পারলে যে ‘খলনায়ক’ হয়ে যাবেন তা তিনি ভালো করেই জানেন। কারণ, বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে সেই হারটি যে এখনো তাকে পোড়ায়। একটি মাত্র ভুলের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে সেই জয়টি মিস হয়ে যায়।

কিন্তু হায় এ ম্যাচেও সেই একই ভুল করলেন মুশফিক। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান। প্রথম দুই বল ডট দেওয়ার পর বেশ টেনশনে পড়ে গেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তৃতীয় বলে মারলেন ঠিকই কিন্তু ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ। সবার মাথায় হাত। এ কী করলেন মুশফিক!

কিন্তু সেকেন্ডের ব্যবধানে সমর্থকরা গর্জে ওঠেন।

না, ক্যাচ হলেও মুশফিক আউট হননি! কারণ, আইরিশ বোলার অ্যাডেয়ার মুশফিকের কোমরের ওপরে বল দিয়েছেন। তাই ‘নো-বল’। একটি রানও এলো, সঙ্গে ‘ফ্রি-হিট’। এবার আর মুশফিককে পায় কে? আউট হওয়ার চিন্তা নেই। ওই বলে খেললেন নিজের সবচেয়ে প্রিয় শট ‘স্কুপ’। আইরিশ উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল চলে গেল বাউন্ডারির বাইরে। 

মুশফিকের মুখে তখন রাজ্য জয়ের হাসি।

৪৫ ওভারের ম্যাচে ৩২০ রান তাড়া করে যেন নতুন ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। এর আগে দু-দুবার ওয়ানডেতে ৩২২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের। তবে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ ওই ম্যাচ ছিল ৫০ ওভারের, আর এ ম্যাচ ৪৫ ওভারের।

আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন মুশফিক। ৪২তম ওভারে রানআউটের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। শট রান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, আইরিশ বোলার ডকরেল দ্রুত উইকেট ভেঙে দেন। আইরিশ ফিল্ডারদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল আউট। প্রথমে টিভি রিপ্লে দেখেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে মনে হচ্ছিল ফিফটি-ফিফটি। তবে টিভি আম্পায়ার শেষ পর্যন্ত ‘নটআউট’ ঘোষণা দিয়েছেন।

এই ম্যাচে মহানায়ক তো নাজমুল হোসেন শান্ত। অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন। মাত্র ৯৩ বলে করেছেন ১১৭ রান। ১২টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা হাঁকান তিনি। ওয়ানডেতে এটি শান্তর প্রথম সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস তো বটেই। তাই সেলিব্রেশনটাও ছিল বাঁধভাঙা। শতক পূরণ করার পর প্রথমে শূন্যে লাফ দেন, তারপরও গ্যালারির উদ্দেশে ‘ফ্লাইং কিস’ করেন। ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘আমার কখনোই মনে হয়নি বাংলাদেশের বাইরে কোথাও খেলছি। দর্শকরা এমনভাবে সমর্থন করছিলেন, যেমনটা দেশের মাটিতে পাই।’

আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ৩২০ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে শুরুটা খুব ভালো হয়নি। ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল ৭ রানেই আউট হয়ে যান। ক্যাপ্টেনের বিদায়ের পর আরেক ওপেনার লিটন দাস ২১ রান করে বিদায় নেন। ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসানও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে এক প্রান্তে অবিচল ছিলেন শান্ত। চতুর্থ উইকেটে তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। ৫৮ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন তিনিও। নাজমুলের সঙ্গে তার ১৩১ রানের জুটি বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেয়।

ক্যারিশম্যাটিক ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরাও হয়েছেন শান্ত। তবে এ ম্যাচে মন জয় করে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। কী দারুণ ফিনিশিং। লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কী লড়াই-ই না করলেন! যেন অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেললেন। এবার পেরেছেন মুশফিক।

 

বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়ায় মুশফিকের বুক থেকে যেন এক মস্ত পাথর নেমে গেল। যে পাথরটা চেপেছিল ২০১৪ সালে চিন্নাস্বামীতে।

হারলেও এ ম্যাচে সমানে সমান লড়াই করার জন্য প্রশংসা পেতে পারে আয়ারল্যান্ড। শুরুতে দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়লেও হ্যারি টেক্টরের ক্যারিয়ার সেরা ১৪০ রান এবং জর্জ ডকরেলের হার না মানা ৪৭ বলে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৩১৯ রান করে আয়ারল্যান্ড।

বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ছিল বৃষ্টি বাধা। খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের সোয়া দুই ঘণ্টা পর। ৫০ ওভারের খেলা নেমে আসে ৪৫ ওভারে। একজন বোলার সর্বোচ্চ ৯ ওভার বোলিং করার সুযোগ পান।

আজ একই মাঠে সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। জিতলেই সিরিজ জিতে যাবে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর