মিরপুরের সবুজ ঘাসে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের একটা গল্প লিখেছেন ফারজানা হক পিংকি। গল্প লিখে পিংকি এখন ইতিহাসের সোনালি পাতার উজ্জ্বল এক ক্রিকেট নায়িকা। বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে ফারজানা পিংকি প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস খেলেছেন। খেলেছেন ইতিহাসে চিরস্থায়ী হওয়া ১৬০ বলে ১০৭ রানের স্বপ্নের এক ইনিংস। দুর্ভাগ্য পিংকির, ইতিহাস লেখা ইনিংস খেলেও জয়োৎসব করতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পারেননি। জয়োৎসব কিংবা জয়োচ্ছ্বাস না করলেও ইতিহাসের পাতায় ‘অমর’ হয়ে গেছেন ৩০ বছর বয়স্কা ফারজানা পিংকি। গতকাল মিরপুরে ‘অলিখিত’ ফাইনালে ১৬০ বলে ৭ চারে সাজানো ১০৭ রানের ইনিংসটি তার ৫৬ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি। শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটে নয়, টি-২০ ক্রিকেটেও তিনি বিরল রেকর্ডের অধিকারী। দুই ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করে তিনি একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ডবুকে চিরস্থায়ী হয়েছেন। ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে তিনি মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫৩ বলে ২০ চারে ১১০ রানের অপরাজিত ছিলেন। অবশ্য ওই ম্যাচে অধিনায়ক নিগার সুলতানা প্রথম সেঞ্চুরি করেন। নিগার ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ৬৫ বলে।
পিংকি বরাবরই ধীরলয়ে ব্যাটিং করেন। স্ট্রাইক রেট খুব বেশি হয় না। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫৬ বলে ২৭ রান করেছিলেন ৬০ স্ট্রাইক রেটে। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৩ বলে ৫৮.০২ স্ট্রাইক রেটে ৪৭ রান করেন। হেরেছিল ম্যাচটি। গতকাল ১৫৬ বলে সেঞ্চুরির মাইল ফলক গড়েন। ২০০ মিনিট ক্রিজে থেকে ১০৭ রানের ইনিংসটি খেলেন ১৬০ বলে। বাউন্ডারি ছিল ৭টি। স্ট্রাইক রেট ৬৬.৮৭। আগের ম্যাচে ৪৭ রানের ইনিংসটিতে লম্বা করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মহিলা দলের কোচ হাসান তিলকরতেœ। স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, ‘ফিটনেস সমস্যা রয়েছে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটাররা টেকনিক্যালি ভালো। কিন্তু ইনিংসগুলোকে লম্বা করতে পারছেন না।’ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে ফারজানা পিংকিকে বাড়তি দায়িত্ব দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। দায়িত্ব দেওয়া হয়, উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করতে। এতে দলের স্কোর বড় হবে। সেই দায়িত্ব পালন করেন সুচারুরূপে। আগের ৫৫ ম্যাচে ৯টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো পিংকি গতকাল শুরু থেকেই মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাটিং করেন। নতুন বলে ওপেনার শামীমা সুলতানাকে নিয়ে ২৬.২ ওভারে ৯৩ রানের ভিত দেন। শামীমা ৭৮ বলে ৫ চারে ৫২ রানে ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরলেও পিংকি দায়িত্ব পালন করেন নিরলসভাবে। ৪৮ ওভারে স্বপ্নের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শেফালি ভার্মার ওভারের প্রথম দুটি বল ছিল ওয়াইড। তৃতীয় বলে কোনোরকমে সিঙ্গেল নিয়ে ৯৮ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছান পিঙ্কি। ৪৭.৫ ওভারে বাউন্ডারি মেরে ১০৩ রানে পৌঁছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন ফারজানা হক পিংকি। এর আগে হাফ সেঞ্চুরি করেন ৯৭ বলে। ম্যাচ শেষে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো ফারজানা পিংকি তিনি বিশ্বাস করতেন সেঞ্চুরি করবেন, ‘সিরিজ শুরুর আগেই মনে হয়েছিল আমি ছন্দে রয়েছি। আমার সতীর্থরা সবসময়ই বলত, আমিই সবার আগে সেঞ্চুরি করব। ম্যাচে দলের পরিকল্পনা ছিল লম্বা সময় ব্যাটিং করা। আমি সেঞ্চুরি করেছি সেটা বিষয় নয়। দল রান পাচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি চেষ্টা করেছি বল টু বল খেলতে। আমি ব্যাটিং করতে ভালোবাসি।’
দলগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলগত স্কোর (২২৫/৪)। সর্বোচ্চ দলগত স্কোর পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৪ রান।
ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ
৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৫ রান ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। আগের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২১০ রান।
প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি
নারী ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি ফারজানা হক পিংকির। ভারতের বিপক্ষে তার ১৬০ বলে ১০৭ রানের ইনিংসটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম।
সেঞ্চুরি আছে টি-২০তেও
ফারজানা হক পিংকি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন।
ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ২৬.২ ওভারে ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটি দ্বিতীয় সেরা। উদ্বোধনী জুটিতে সেরা ১১৩ রান শারমিন আক্তার ও শুকতারা রহমানের।