ইতিহাস গড়লেন আফ্রিকান দেশ বতসোয়ানার ছেলে লেটসিলে টেবোগো। প্যারিস অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার পদক জয় করেছেন তিনি। বতসোয়ানার তো বটেই, আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম হিসেবে অলিম্পিকে এ কীর্তি গড়লেন তিনি।
প্যারিস অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার পদক জয়ের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলস। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জয় করে তিনি প্যারিস অলিম্পিকের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। ২০০ মিটার ও ১০০ মিটার রিলেতেও সোনার পদক জয়ের লক্ষ্য ছিল তার। তবে করোনাভাইরাস তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। এ ভাইরাসে পজিটিভ হওয়ার পরও লড়াইয়ে অংশ নেন তিনি। লেটসিলে টেবোগোর কাছে হেরে যান। তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন লাইলস। টেবোগো ১৯.৪৬ সেকেন্ড টাইমিং করে সেরা হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেথ বেডনারেক ১৯.৬২ সেকেন্ড টাইমিং করে হয়েছেন দ্বিতীয়। নোয়াহ লাইলস ১৯.৭০ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। স্প্রিন্টটা শেষ করেই ট্র্যাকে শুয়ে পড়েছিলেন করোনায় আক্রান্ত লাইলস। পরে তাকে হুইলচেয়ারে করে মাঠের বাইরে নিতে হয়।
আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর মধ্যে একটি বতসোয়ানা। এক সময় জার্মানি আর ব্রিটেনের কাড়াকাড়িতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল দেশটি। ১৯৬৬ সালে স্বাধীন হলেও খুব একটা উন্নতি করতে পারেনি দেশটি। সরকারি হিসেবে জনসংখ্যা ২৪ লাখের কিছুটা বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে দেশটি একেবারে নিচের সারিতে। আয়তনে বড় আর জনসংখ্যায় ছোট এই দেশটিতেই জন্ম লেটসিলে টেবোগোর। ২০০৩ সালের ৭ জুন তিনি দেশটির ক্যানি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২১ সালে ১৭ বছর বয়সে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস রিলেতে অংশ নেন তিনি। পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই লড়াইটাই ছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সূচনা। এরপর নাইরোবিতে অনূর্ধŸ-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে জয় করেন ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে হন দ্বিতীয়। টেবোগোর মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে তার মা। ২০০ মিটার স্প্রিন্ট জয় করে সেই মাকেই স্মরণ করলেন টেবোগো। বললেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ পৃথিবীতে তিনিই হতেন সবচেয়ে সুখী মানুষ। কারণ, তিনিই আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আমার নিজের ওপর অতটা বিশ্বাস ছিল না।’ লেটসিলে টেবোগো গত মে মাসে তার মা এলিজাবেথ সেরাটিওয়াকে হারিয়েছেন। সেই মাকে স্মরণ করেছেন তিনি বিশেষ করে।
লেটসিলে টেবোগোর সোনা জয়ে বতসোয়ানায় উৎসব হচ্ছে। গতকাল অলিম্পিকে প্রথম সোনার পদক জয় উপলক্ষে উৎসব করার জন্য অর্ধবেলা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোকগুয়েটসি মাসিসি। প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ইতিহাস তৈরি হলো। লেটসিলে টেবোগোকে নিয়ে কেবল বতসোয়ানা নয়, আফ্রিকানদের মধ্যেও আছে দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা।
এদিকে প্যারিস অলিম্পিক শেষ হয়ে যাচ্ছে কালই। আনুষ্ঠাকিনভাবে পর্দা নামছে দি গ্রেটেস্ট শোন অন আর্থের। তার আগে খুব বেশি পদকের লড়াই বাকি নেই। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পদক জয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ৩০টি সোনার পদকসহ মোট ১০৩টি পদক জয় করেছে। সোনার পদক জয়ের সমান্তরালে আছে চীনও (৩০টি)। তবে মোট পদকের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে তারা (৭৪টি)। অস্ট্রেলিয়া এবার ১৮টি সোনার পদকসহ মোট ৪৬টি পদক জয় করেছে। স্বাগতিক ফ্রান্স জয় করেছে ১৪টি সোনার পদকসহ মোট ৫৫টি।