বসুন্ধরা গ্রুপ পেশাদার ফুটবল লিগে প্রথম লেগ শেষ হতে চলেছে। ১০ দলের নবম অর্থাৎ শেষ রাউন্ড মাঠে গড়াচ্ছে আজ। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান আজ নিজেদের হোম ভেন্যু কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে লড়বে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের বিপক্ষে। আট ম্যাচের সবকটিতে জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে তারা। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ফকিরেরপুলের অবস্থান ৮-এ। পাঁচবারের টানা চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসও প্রথম লেগের শেষ ম্যাচ খেলবে। গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। আট ম্যাচে দুটি হার ও দুটি ড্র করে তাদের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। ব্রাদার্স ইউনিয়নেরও সমান পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে কিংস ৪-এ অবস্থান করছে। সমান ম্যাচে ওয়ান্ডারার্সের অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৪ পয়েন্ট। ৯ নম্বরে তাদের অবস্থান।
৩-এ থাকা রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি আজ ময়মনসিংহ রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে অ্যাওয়ে ম্যাচে লড়বে বাংলাদেশ পুলিশ এফসির বিপক্ষে। আট ম্যাচে রহমতগঞ্জের ১৫ আর পুলিশ ৭ পয়েন্টে ৭-এ রয়েছে। আগামীকাল ঢাকা আবাহনীর ম্যাচ। মুন্সিগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমাান স্টেডিয়ামে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাদার্স ইউনিয়ন। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় ফর্টিস এফসি লড়বে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে। ফর্টিস ৮ পয়েন্টে ষষ্ঠ ও চট্টগ্রাম আবাহনী ৩ পয়েন্টে দশম স্থানে। দুই দিনে পাঁচটি ম্যাচই শুরু হবে বিকাল পৌনে ৩টায়। প্রথম লেগ শেষ হতে চলেছে। এরপর দ্বিতীয় লেগেও প্রতিটি দলকে খেলতে হবে নয়টি করে ম্যাচ। তাই কে চ্যাম্পিয়ন হবে এখনই বলা যায় না। তবে লড়াই মোহামেডান, আবাহনী ও কিংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা বেশি। এবারে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে শীর্ষে থাকা তিন দলেরই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে দেশি কোচ। দেশি কোচদের নাম ষুনলেই বাফুফে কর্মকর্তারা নাক সিটকান। জাতীয় দলে স্থানীয় কোচের কথা ভাবাই যায় না। অথচ বড় অঙ্কের বেতনে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না জাতীয় দল। ফুটবল কর্মকর্তাদের ধারণা হয়ে গেছে, দেশি কোচদের কোনো যোগ্যতাই নেই। তাদের কথা মানা যেত যদি বিদেশিদের মাধ্যমে জাতীয় দল সাফল্য পেত। শুধু অর্থেরই অপচয় হচ্ছে, কোনো কাজ হচ্ছে না। অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ হয়তো লাভবানও হতে পারেন। কেননা অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়ে কর্মকর্তারা নাকি কমিশনও পান।
সত্তর ও আশির দশকে দেখা যেত যার প্রশিক্ষণে ক্লাব লিগ চ্যাম্পিয়ন হতো সেই কোচকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হতো। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে এসে জাতীয় দলে বিদেশি কোচের হিড়িক পড়ে যায়। কাজী সালাউদ্দিন সভাপতি থাকা অবস্থায় স্থানীয়দের মূল্যায়নই করা হতো না। যাক, আড়ালে রাখা হলেও দেশিরাও যে মেধাবী, এবার পেশাদার লিগে তার প্রমাণ মিলছে। আলফাজ আহমেদের প্রশিক্ষণে মোহামেডান শীর্ষে। মারুফুল হকের প্রশিক্ষণে আবাহনী দ্বিতীয় ও কামাল হোসেন বাবুর রহমতগঞ্জ আছে ৩-এ। মারুফুল হক অবশ্য জাতীয় দলের দায়িত্বেও ছিলেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ট্রেবল জিতেছিল তাঁরই প্রশিক্ষণে। আলফাজ মোহামেডানের দায়িত্ব নিয়েই দৃষ্টি কাড়ছেন। মোহামেডানের দুর্দিনে ফেডারেশন কাপে শিরোপা এনে দেন। এ ছাড়া তিন আসরে ফাইনালও খেলান। কামাল তো নজর কাড়ছেন আগে থেকেই। তার পরও চোখ পড়ে না বাফুফের! নবম রাউন্ডে ফলাফল যা-ই হোক প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। রহমতগঞ্জও জিতে গেলে ৩-এ থাকবে। দেশি কোচের অধীনে থেকে শীর্ষ ৩-এ থেকে প্রথম লেগ শেষ করা পেশাদার লিগে আগে কখনো ঘটেনি। কিংস, ব্রাদার্স, ফর্টিস ও পুলিশে বিদেশি কোচ। শীর্ষ ৩-এ যেমন দেশি কোচেরা আছেন, আবার রেলিগেশন লড়াইয়ে শেষ ৩-এও দেশি কোচ আছেন। দুটি দলই নেমে যাবে। তবে অনেকদিন পর দেশি কোচের অধীনে কোনো দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।