মাঠে খেলোয়াড়দের সংঘর্ষ হতেই পারে। কিন্তু সমর্থক আসেন কীভাবে? সানডে ও ড্যানিলো যখন তর্ক করছিলেন তখন আওলাদ হোসেন নামে মোহামেডানের এক সমর্থক তেড়ে যান ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের দিকে। আওলাদের এ কীর্তিকলাপ নতুন নয়। নানান কারণে তিনি বিতর্কিত। মাঠ প্রশাসন থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন কীভাবে।
পেশাদার ফুটবল লিগে সব দলের জন্যই এক আইন হওয়ার কথা। কোনো খেলোয়াড় মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে রেফারি যে কোনো শাস্তি দিতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে-এবার কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিতে রেফারি ভূমিকা রাখছেন কি না? এ ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। মোহামেডান নিঃসন্দেহে দেশের জনপ্রিয় ক্লাব। তবে পেশাদার লিগে এখন পর্যন্ত তাদের শিরোপা জেতা হয়নি। এবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বলা যায় শিরোপার কাছাকাছি তারা। অনেকে আবার এও বলেন, মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হলে সামনে লিগ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী তো আছেই; মোহামেডান বা অন্য দল শিরোপা লড়াইয়ে থাকলে ঘরোয়া ফুটবল আসর জমে উঠবে।
সত্যি বলতে কি, ঘরোয়া আসর আকর্ষণীয় করে তুলতে পেশাদার লিগ কমিটি নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে; যা প্রশংসিত হচ্ছে। কমিটি সৌন্দর্যের চেষ্টা করলেই কি ফুটবলে নতুনত্ব আসবে? এর জন্য দলগুলোর সহযোগিতা ও শৃঙ্খলা বড্ড জরুরি। তা কি হচ্ছে? এবার এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে মোহামেডান কেন যেন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। তাদের ম্যাচে রেফারিরা বাঁশি বাজাচ্ছেন রহস্যের সুরে। তাদের প্রতিপক্ষের ফাউলে কার্ড দেখানো হচ্ছে। কেন যেন এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় মোহামেডানের বেলায় তা করা হচ্ছে না!
প্রশ্ন হচ্ছে-কার ইঙ্গিতে রেফারিরা পক্ষপাতিত্ব করছেন। একটা বড় দল দীর্ঘদিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না, তা তাদের সমর্থকদের কাছে বেদনাদায়ক। তাই বলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তো কাউকে সমর্থন করতে পারে না। তারা হচ্ছে ফুটবলের অভিভাবক। লিগে শৃঙ্খলা রাখতে ডিসিপ্লিন কমিটি রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে-তারা এ ক্ষেত্রে কী করছে? একটি বিশেষ দলের খেলা থাকলেই কি তারা চোখ বন্ধ রাখে? অবশ্য ডিসিপ্লিন কমিটি কখনো তাৎক্ষণিক কারও বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যায় না। ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষী সাব্যস্ত করে তারপর সিদ্ধান্ত দেয়।
একটা দল ভালো খেলে সাফল্য পেলে কোনো অভিযোগ ওঠে না। যদি পক্ষপাতিত্ব হয় তাহলে তো বিতর্ক উঠবেই। শুক্রবার কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ঢাকা মোহামেডান ও পুলিশ এফসি মুখোমুখি হয়। ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতে মোহামেডান মাঠ ছাড়ে। কিন্তু ম্যাচটির পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরাসরি বললে ম্যাচের রেফারি আনিসুর রহমানের ভূমিকা নিয়েই যত প্রশ্ন। মোহামেডান ম্যাচে অজস্র ফাউল করেছে। রেফারি এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন কি? যদি করতেন তাহলে পকেট থেকে লাল কার্ড বের হয়ে আসত। অবশ্য পুলিশকে একটি পেনাল্টি দেন আনিসুর রহমান; যা থেকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ড্যানিলো গোল করে সমতা ফেরান। আসলে এখানে পেনাল্টি না দিয়ে উপায়ও ছিল না। ম্যাচ শেষ এর পরও মোহামেডান যা ঘটাল তা কি মানার মতো। ড্যানিলো কী নিয়ে যেন মোহামেডানের এমানুয়েল সানডের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। একপর্যায়ে দুজন তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে আসেন সুলেমান দিয়াবাতে। ফিরে যাচ্ছিলেন ড্যানিলো। এর পরও সানডে আক্রমণ করে ড্যানিয়েলের মুখে হাত দিয়ে বসেন।
মাঠে খেলোয়াড়দের সংঘর্ষ হতেই পারে। কিন্তু সমর্থক আসেন কীভাবে? সানডে ও ড্যানিলো যখন তর্ক করছিলেন তখন আওলাদ হোসেন নামে মোহামেডানের এক সমর্থক তেড়ে যান ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের দিকে। আওলাদের এ কীর্তিকলাপ নতুন নয়। নানান কারণে তিনি বিতর্কিত। মাঠ প্রশাসন থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন কীভাবে। যদি তিনি খেলোয়াড়কে আহত করতেন এর দায়দায়িত্ব নিত কে? একই দিনে কিংস অ্যারিনায় বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনী মুখোমুখি হয়েছিল। ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়রা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে তো রেফারি তরফদার কিংসের সাদউদ্দিন, সোহেল রানা ও আবাহনীর শাহিনকে লাল কার্ড দেখান!
প্রশ্ন হচ্ছে-সানডে মহা অন্যায় করার পরও রেফারি কেন কার্ড দেখালেন না? সামনে মোহামেডানের খেলা আছে বলে? মোহামেডান অন্যদের হোম ভেন্যু নিয়ে নানান অভিযোগ তোলে। শুক্রবার তারা কুমিল্লায় কী করল? সব গেট খুলে দিয়েছিল সমর্থকদের জন্য। শুধু শুক্রবারের ম্যাচ কেন, প্রথম লেগে মোহামেডান অন্তত তিনটি ম্যাচ জিতেছে বিতর্কিত রেফারিংয়ে। চ্যাম্পিয়ন হতে এ পথ যদি বেছে নেওয়া হয় তাহলে মাঠে কেন, টেবিলেই নিষ্পত্তি হোক। এ ব্যাপারে বাফুফে কী বলে।