শরীরের নিম্নাংশে অনেক ধরনের ব্যথা দেখা দেয়। এর মধ্যে কোমর এবং তলপেটের ব্যথাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। যোগশাস্ত্রে এসব ব্যথা থেকে মুক্ত থাকার চমৎকার সব ব্যায়ামের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে শলভাসনে দেহের নিম্নাংশের সব ব্যথা দূরীভূত হতে পারে। 'শলভ্?' অর্থ পতঙ্গ। আসন অবস্থায় দেহটিকে অনেকটা পতঙ্গের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম শলভাসন।
এ আসন করার জন্য প্রথমে হাত দুটি দেহের দুই পাশে লম্বাভাবে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু মেঝের দিকে এবং আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে থাকবে। চিবুক মেঝেতে বা এক পাশে বাঁকিয়ে রাখতে পারেন। পায়ের গোড়ালি উপর দিকে সোজা হয়ে থাকবে। এবার দম নিয়ে প্রথমে দম বন্ধ করে পা দুটি জোড়া ও সোজা রেখে নাভি থেকে পা পর্যন্ত দেহ শক্ত করে মেঝে থেকে আনুমানিক দেড় হাত থেকে দুই হাত উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকুন এবং দম ছাড়তে ছাড়তে দেহ শিথিল করে পা মেঝেতে নামিয়ে আনুন। এভাবে আসনটি ৩/৪ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। প্রথম অভ্যাসের সময় যদি দুই পা একসঙ্গে তোলা সম্ভব না হয়, তবে এক পা তুলে অধর্্ব-শলভাসন অভ্যাস করুন। দুই-চার দিন অভ্যাসের পর দুই পা একসঙ্গে তুলতে অসুবিধা হবে না।
আসনটিতে কোমর থেকে শরীরের নিম্নাংশের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। ফলে কটিবাত, মাজাব্যথা, মেয়েদের ঋতুকালীন তলপেটে ব্যথা কোনোদিন হয় না। বাত বা সায়টিকার জন্য আসনটি আশ্চর্য এক প্রতিষেধক। তলপেটে খাদ্যগ্রহণী নাড়ি, মূলনাড়ি প্রভৃতি কতকগুলো যন্ত্র প্রয়োজন মতো অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে অন্ত্রে অধর্্বজীর্ণ খাবার এবং মল-নাড়িতে মল জমতে শুরু করে। ওই অধর্্বজীর্ণ খাবার ও মল পচে দেহে যে বিষ সৃষ্টি করে তা রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের সমস্ত দেহযন্ত্রকেই বিকল করে দিতে পারে। অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্ল বা এসিডিটি প্রভৃতি রোগ একের পর এক অতি সহজেই দেহে বাসা বাঁধতে পারে। শলভাসনে তলপেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ায় ওই অঞ্চলের দেহযন্ত্রগুলোর খুব ভালো ব্যায়াম হয়। ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আসনটি দেহের প্রসারক পেশিগুলোকে সংকুচিত ও রক্তে প্লাবিত করে এবং সংকোচক পেশিগুলোকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয় বলে উভয় পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোমর থেকে দেহের নিম্নাংশের সমস্ত পেশি ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় থাকে। আসনটি তলপেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহকে সুগঠিত করে। ফুসফুস-সংলগ্ন স্নায়ুজাল ও ফুসফুসের বায়ুকোষ পুষ্ট ও সবল হয়। ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। হৃৎপিণ্ডের পেশিও সতেজ এবং সক্রিয় থাকে।