ভিশন-২০২২। হ্যাঁ, বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের লক্ষ্য ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবলে চূড়ান্ত পর্বে খেলা। ব্যাপারটি যেমন বিস্ময়কর তেমনি আবার অনেকের কাছে হাস্যকরই বলা যায়। কারণ যে দেশের বাছাইপর্বে সুযোগ পাওয়াটা রীতিমতো স্বপ্নে পরিণত হয়েছে সেখানে সালাউদ্দিন ২০২২ সালে বিশ্বকাপে খেলার আশা করেন কীভাবে? পঞ্জিকার হিসাব করলে ২০২২ সাল আসতে খুব একটা দেরি নেই। মাত্র আট বছরের ব্যবধান। এর মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবলে কি এমন উন্নতি ঘটবে যে দুনিয়া কাঁপানো আসরে মাঠে নামার স্বপ্নপূরণ করবে। ফুটবলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলুক কে না চায়। ভারতও লক্ষ্য হিসেবে ২০২৬ সালকে বেছে নিয়েছে। ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলের যে করুণ পরিণতি তাতে আট বছরের চূড়ান্ত পর্বে লড়বে সেই আশা আকাশ-কুসুম ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা দেশের ফুটবলে উন্নয়নের কোনো লক্ষ্য নেই। বরং দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এতটা খারাপ অবস্থা যে অনেকে বলতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশের ফুটবলকে লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
আসলে এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলকে মৃত ঘোষণা করতে হবে। বছরের পর বছর জনপ্রিয় এ খেলার ধস নেমেই চলেছে। ২০১৩ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের সূচনা হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যাবে পুরো বছরটা কেটেছে হতাশার মাধ্যমে। অতীত রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রায় ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নেদারল্যান্ডের লোডডিক ক্রুইফ ও রেনে কোস্টারের হাতে কোচের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কি পেল, চ্যালেঞ্জ কাপে কিছুটা জ্বলে উঠলেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দাঁড়াতেই পারেনি। আফগানিস্তান নতুন চ্যাম্পিয়ন হলেও বাংলাদেশকে গ্রুপ ম্যাচ খেলেই বিদায় নিতে হয়েছে। তবে অন্যবারের তুলনায় খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধার কমতি ছিল না। বিদেশি ফিজিও গোলরক্ষক প্রশিক্ষক সবই আনা হয়। দেশে ও বিদেশে একাধিক প্রীতিম্যাচও খেলানো হয়েছে। বিনিময়ে প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে গেছে। আসলে খেলোয়াড়দের মান এতটা নিচে নেমে গেছে যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সেখানে আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলে কীভাবে? সালাউদ্দিনকে দেশের ফুটবলে উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা হয়। তার মেধা ও জ্ঞান নিয়ে কারো সংশয় নেই। সুতরাং তিনি যা বলেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্যটাই দেশবাসীকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বকাপ খেলতে হলেতো প্রস্তুতি তেমনভাবেই হতে হবে। এতো আর মামার বাড়ির আবদার নয় যে চাইলেই খেলতে পারব। অন্য কেউ নয়, সালাউদ্দিন নিজেই বলুক না ভিশনকে সামনে রেখে তিনি এমন কী করেছেন বা করবেন যা ২০১৩ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে ফুটবলকে কেন্দ্র করে তিনি শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন। বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি। বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর থেকে বলে আসছেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের কথা। সাফের সভাপতি হয়তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকায় ক্লাবভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে। অথচ প্রায় ৬ বছর চেয়ারে বসে থাকলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কাপের কথা না বললেই নয়। ১৯৯৯ সালে ঢাকায় শেষবারের মতো এ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছিল। এরপর দেখাই মিলছে না। সভাপতি হওয়ার পর সালাউদ্দিন দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তার নামকরণে টুর্নামেন্ট এখন থেকেই নিয়মিতভাবে হবে।
২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজনে কতবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা হিসেব ছাড়া বের করা মুশকিল। বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন, কিন্তু ফুটবলাররা যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতেই না পারেন তাহলে তাদের যোগ্যতা ও মেধা যাচাইয়ে সুযোগ ঘটবে কীভাবে? বছরে বাংলাদেশ ক'টা আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারে। মান নেই বলে ভারতও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না। এই অবস্থায় একটাই পথ ছিল দেশে নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন করা। টার্গেট ২০২২ সাল। সে কারণে ধরে নেওয়া যায়, বর্তমানে যারা জাতীয় দলে আছেন তাদের অধিকাংশেরই ক্যারিয়ার ওই সময়ে শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং ২০২২ সালে যাদের মাধ্যমে স্বপ্নের বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটবে সেই খেলোয়াড়কে তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে কি, তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই। পেশাদার লিগ ছাড়া অন্য কোনো জেলাতে ফুটবলই দেখা যাচ্ছে না। সিলেটে ফুটবল একাডেমিও চালু হয়নি। সুতরাং ফুটবল যেখানে মরতে বসেছে সেখানে সালাউদ্দিন বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেন কীভাবে। এ কি জাতির সঙ্গে পরিহাস নয়। ভিশন ২০২২ সালের কথা বাদই দিলাম। সালাউদ্দিনের উচিত হবে আগে ফুটবলকে জাগাতে। ২০১৩ সালেতো তিনি শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছেন। বাস্তবায়ন করেননি কিছুই। নতুন বছরে আর যাই হোক তার কাছে কেউ মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আশা করেন না। যা করবেন তা যেন বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। তা না হলে ফুটবলের যে অবস্থা ভুটানের কাছে হারাটা অবাকের কিছু থাকবে না। বিশ্বকাপের চিন্তা বাদ দিয়ে সাফ অঞ্চলেই যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই উদ্যোগই নেওয়া উচিত ফুটবল ফেডারেশনের।