চতুর্থদিন ৫৭৩ রানের টার্গেট যখন ছুড়ে দিয়েছিল প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল, তখনই মনে হয়েছিল পাহাড়সম টার্গেট টপকাতে পারবে না বিসিবি উত্তরাঞ্চল। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০০ বা ততোধিক রান তাড়া করে জেতার কোনো রেকর্ড নেই। নেই কোনো ইতিহাস। এমন সমীকরণে চতুর্থদিনই ম্যাচটি হেলে পড়েছিল প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। ক্রিকেটপ্রেমীরাও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন দেশের দ্বিতীয় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দক্ষিণাঞ্চলের শিরোপা জয়ের বিষয়ে। তাদের পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়নি। কাল পঞ্চম ও শেষ দিন দুই সেসন হাতে রেখেই বিসিএলের শিরোপা জিতেছে প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রাইজ মানি পেয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। চ্যাম্পিয়ন হতে পাঁচদিনের ফাইনালে উত্তরাঞ্চলকে ২১৩ রানে হারিয়েছে রাজ্জাকবাহিনী।
প্রথম ইনিংসে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে দুই দলের। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল কায়েসের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে ৫৩৬ রান তুলে ম্যাচের রশি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম ইনিংসের এগিয়ে থাকা ৩৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসের ৫৩৬ রান, সব মিলিয়ে ৫৭২ রানে এগিয়ে থেকে প্রতিপক্ষকে টার্গেট ছুড়ে দেয় ৫৭৩ রানের। পর্বতসমান টার্গেট দিয়ে নিশ্চিতই ছিলেন রাজ্জাকবাহিনী। কিন্তু চতুর্থ দিন ৩ উইকেটে ২৫৪ রান স্কোর বোর্ডে জমা করে লড়াইয়ের ইঙ্গিত রেখেছিলেন উত্তরাঞ্চলের নাসির হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। কাল আরও ৩১৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে নাসিরবাহিনী। দিনের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে নাসিরকে বোল্ড করেন জাতীয় দলের ডান হাতি পেসার আল-আমিন। সেই শুরু। সাজঘরে ফেরার আগে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি নাসির। তবে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকা ফরহাদ হোসেন তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। দলীয় ৩৪৫ রানে আব্দুর রাজ্জাক রাজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে খেলেন ১২৯ রানে প্রত্যয়ী ইনিংস। রাজ্জাকের বাঁ হাতে ঘূর্ণিতে কাল মাত্র ২৪.২ ওভার ব্যাটিং করেছে উত্তরাঞ্চল। রান যোগ করেছে ১০৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরাঞ্চল অলআউট হয় ৩৫৯ রানে। রাজ্জাক ১০২ রানে নেন ৬ উইকেট।
পুরো সিরিজে অসাধারণ বোলিং করা টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাইজুল উইকেট পেয়েছেন ২৪২ রানে ১০ উইকেট। টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ায় পুরস্কার পেয়েছেন ১ লাখ টাকা। ২০৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা ইমরুল পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা।
বিসিবির পরিচালক। তার আরেকটি পরিচয় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট দলের কোচ। খালেদ মাহমুদ সুজন। এই মৌসুমে তার কোচিংয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জিতল প্রাইম ব্যাংক। বিসিএলের ফাইনালে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই চ্যাম্পিয়ন। কোচ সুজন তার পুরো কৃতিত্ব দেন ক্রিকেটারদের, 'আমাদের দলে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন। তারপরও আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য কৃতিত্ব দিব দলের সব ক্রিকেটারকে। প্রথম ইনিংসে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। তবে আল-আমিন চমৎকার বোলিং করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল, মিথুন চমৎকার ব্যাটিং করেছেন। অধিনায়ক রাজ্জাক রাজ শুধু দ্বিতীয় ইনিংসে নয়, পুরো টুর্নামেন্টেই ভালো বোলিং করেছেন। আমার ভালো লেগেছে পাঁচদিনের ফাইনাল পঞ্চম দিনেই শেষ হয়েছে। এটা ক্রিকেটের জন্য পজেটিভ সাইট।'
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল : প্রথম ইনিংস, ২৭১/১০ ( ইমরুল কায়েস ৩৬, সৌম্য সরকার ৭০, শুভাগত হোম ৬০, তাইবুর পারভেজ ৩৯। তাইজুল ইসলাম ৮/৮৬)। দ্বিতীয় ইনিংস, ৫৩৬/১০, ১১৬.৩ ওভার ( ইমরুল কায়েস ২০৪, সৌম্য সরকার ৪১, মো. মিথুন ১২৬, তাইবুর পারভেজ ৩১, আব্দুর রাজ্জাক রাজ ৩৩*। শুভাশীষ রায় ৩/১২৮, ফরহাদ রেজা ২/৫৯, তাইজুল ইসলাম ২/১৫৬) ।
বিসিবি উত্তরাঞ্চল : প্রথম ইনিংস, ২৩৫/১০, ৯৭.৫ ওভার (জুনায়েদ সিদ্দিকী ২৫, মাইশুকুর রহমান ৪২, ফরহাদ হোসেন ৩২, নাসির হোসেন ৭০। আল-আমিন ৪/৩৫, সোহাগ গাজী ২/৬৮, আব্দুর রাজ্জাক রাজ ২/৬৭, শুভাগত হোম ২/২১) ও দ্বিতীয় ইনিংস, ৩৫৯/১০, ৮৭.৪ ওভার (মাইশুকুর রহমান ৩২, জুনায়েদ সিদ্দিকী ৫১, ফরহাদ হোসেন ১২৯, নাসির হোসেন ৬৭। আল-আমিন ২/৭৯, আব্দুর রাজ্জাক ৬/১০২)।