বয়স মাত্র ২২। তাতে কী? পেলে, ম্যারাডোনাদের কাতারে জায়গা নিতে সোনালি বুটে উজাড় করে দিচ্ছেন সবকিছু। অসাধারণ সব ড্রিবলে মোহাচ্ছন্ন করছেন প্রতিপক্ষকে। সেই সঙ্গে মুগ্ধ করছেন ফুটবলপ্রেমীদের। নেইমার দ্য জুনিয়র, এবারের ২০১৪ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ফুটবলার। অন্যতম চমক, যার পায়ের বিজলিতে ছিটকে পড়ছেন প্রতিপক্ষের ফুটবলাররা। আর নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আজকের প্রতিপক্ষ চিলি। শক্তির বিচার, পরিসংখ্যান কিংবা ইতিহাস- সবকিছুতে এগিয়ে সেলেকাওরা। তার পরও ১৯৫০ সালের 'মারাকানোজো' দুঃখ ভুলতে নেইমারকেই আজ নেতৃত্ব দিতে হবে। দেখাতে হবে পায়ের জাদু। করতে হবে গোল। সেরা ষোলোয় জায়গা নিতে ক্যামেরুনকে হারাতেই হতো ব্রাজিলকে। এমন কঠিন ম্যাচকে কেমন সহজ করে দেন নেইমার দুটি অসাধারণ গোল করে। অদম্য সিংহদের বিপক্ষে নামার আগে নিজেকে উদ্দীপ্ত করতে পায়ের শিনগার্ডে লিখে নেন ল্যাটিন আমেরিকার যুদ্ধদেবতা পায়োলার নাম। সঙ্গে ছিল ব্রাজিলের পতাকার প্রতীকও। ল্যাটিন আমেরিকার যুদ্ধদেবতার আশীর্বাদে ছিন্নভিন্ন করেন ক্যামেরুনের রক্ষণভাগ। আজও চিলির বিপক্ষে সেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলবেন ৬৮ কেজি ওজনের লিকলিকে নেইমার। তার ফুটবল জাদুতেই হয়তো ইতিহাসের পথে হাঁটবে ব্রাজিল। এর আগে বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে সেলেকাওরা, তার সব কটিতেই জিতেছে হেসেখেলে। এবারের বিশ্বকাপের নায়ক কে হবেন- শুরু থেকেই উচ্চারিত নেইমার, লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম। বিশ্বসেরা ফুটবলার রোনালদো ব্যর্থ হয়েছেন তার দল পর্তুগালকে টেনে তুলতে। কিন্তু নেইমার ও মেসি এগোচ্ছেন সমানতালে। গ্ল্যাডিয়েটর হয়ে প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করে। দুজনই গোল করেছেন তিন ম্যাচে চারটি। অবশ্য একদিকে মেসি এগিয়ে নেইমারের চেয়ে। তিন ম্যাচেই গোল করেছেন মেসি। নেইমার ক্রোয়েশিয়া ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে করেছেন দুটি করে। তাই গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বলের লড়াইও জমে উঠেছে দুই বিশ্বসেরার ফুটবল সৌকর্যে। নেইমার এখন ব্রাজিল ফুটবলের প্রাণপুরুষ। অথচ একসময় ছিলেন ব্রাত্য। সান্তোসে তার ফুটবল দক্ষতা দেখে সাবেক ফুটবলাররা সাফাই গেয়েছেন দিনের পর দিন। কিন্তু মন গলেনি মেনদোজাদের। তাই বাধ্য হয়ে ১৪ হাজার ব্রাজিলিয়ান একটি চিঠি লিখে জমা দেয় সে দেশের ফুটবল ফেডারেশনে। ফুটবল ইতিহাসে এমনটা কখনোই দেখা যায়নি। মাত্র ছয় বছর বয়সে ফুটবলে হাতে খড়ি নেইমারের জন্মদিন ৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন আবার দুই বিশ্বসেরা ফুটবলার পাওলো মালিদিনি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্ম। সে হিসেবে বলা যায়, নেইমার জন্মেইছিলেন তারকা হয়ে। এখন শুধু মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন।