সেনহক হকি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বড় বড় বেশ কয়েকটি লাল-সবুজ পতাকা। লাউড স্পিকারে যখন এক এক করে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন গগণ বিদারী চিৎকার শুনেই বোঝা যাচ্ছিল কোরিয়ার চেয়ে চয়নদের সমর্থক কম নয়। কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা কাল অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের গোল দেখার জন্য। কিন্তু তাদের আশায় গুড়েবালি।
বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল আগেই। তাছাড়া কোরিয়াকে যে হারানো অসম্ভব সেটাও কারো অজানা ছিল না। তারপরেও কাল দর্শকরা প্রিয় লাল-সবুজ পতাকা হাতে ঠিকই স্টেডিয়ামে এসেছিলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের দর্শকের সঙ্গে বাংলাদেশি দর্শকদের পার্থক্য হয়তো এখানেই, হারলেও বাঙালিরা মুখ ফিরিয়ে দেন না।
ছুটির দিন হওয়ায় কাল সাড়ে তিনশ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বুসান থেকে ইনচেনে খেলা দেখতে এসেছিলেন প্রবাসী বাঙালি নুরুল ইসলাম। পরিচয় হওয়ার পর করুণ স্বরে জানালেন তার আর্তি, 'ভাই, জানি কোরিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হারবেই। শুধু খেলোয়াড়দের বলবেন তারা যেন, আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও অন্তত একটা গোল করে।' নুরুল ইসলামের কথা খেলোয়াড়দের বলা হয়নি। তার আশাও পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে একবারও বল জড়াতে পারেনি। উল্টো ৭-০ গোলে আবারও বিধ্বস্ত হলো চয়নরা। প্রথম ম্যাচে তারা জাপানের বিরুদ্ধে হেরেছিল ৮-০ গোলে।
অপূর্ণই রয়ে গেল কোচের আশাও। ম্যাচ শুরুর আগে নাভিদ আলম তার শিষ্যদের বলেছিলেন, কোরিয়ার বিরুদ্ধে ৫ গোলের বেশি যেন হজম করতে না হয়। কিন্তু কাল চয়নরা হজম করলেন ৭ গোল। গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ মিলে বাংলাদেশ মোট ২১ গোল খেয়েছে। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পেরেছে মাত্র তিনবার। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে দুটি, একটি মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। তবে প্রথম দুই ম্যাচে ১৩ গোল খাওয়ার পর অনেকের শঙ্কা ছিল কাল গোলের রেকর্ড না গড়ে ফেলে কোরিয়ানরা। সেদিক দিয়ে ফেভারিট দলের কাছে ৭ গোল হজম করাটা কমই বলা যায়।
চয়নরা প্রথম গোলটি খায় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই। তিন মিনিটে ডি-বক্সে মধ্যে বল পেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে কিম ইউনজিন বাংলাদেশের জালে বল জড়ান। ৫ মিনিটেই আরেক গোল। কোরিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন ক্যান মুনকিউন। প্রথম কোয়ার্টারেই দুই গোলেই এগিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ২৪ মিনিটে তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় কোরিয়া। গোল করেন ডায়েকুন ওহ। ২৯ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারের মিসে চতুর্থ গোল হজম করতে হয়। ইউ হাইওসিক গোল করেন। ৪১ ও ৫১ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে টানা দুই গোল করেন জাং জংহিয়ন। ৫৯ মিনিটে সপ্তম গোলটি করেন নাম হিউন হু। কাল বাংলাদেশও চার চারটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তবে কাল চয়নদের উড়িয়ে দিলেও বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করেছেন কোরিয়ার কোচ সিন কিও। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমরা হয়তো বড় ব্যবধানে জিতেছি। কিন্তু বাংলাদেশ ভালোই খেলেছে। ওদের খেলার অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এই ম্যাচে ওরা বেশি কিছু ভুলও করেছে।'
গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ায় চতুর্থ হয়েছে। এখন সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩০ অক্টোবর তারা ওমানের বিরুদ্ধে খেলবে। গ্রুপ পর্বে কিছু না করতে পারলেও এ ম্যাচ নিয়ে আশাবাদী কোচ নাভিদ আলম। গতকাল ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, 'আমাদের দলের খেলোয়াড়রা সবাই তরুণ। তাদের অভিজ্ঞতার অনেক ঘাটতি আছে এখনো। এ কারণেই প্রতি ম্যাচেই আমরা ভুল করছি। ডিফেন্ডারের ভুলের কারণে গোল হজম করতে হয়েছে। আবার আমাদের সেরা তারকারা সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছে না। তবে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ ওমানকে হারাবে।'
কাল অন্য ম্যাচে পাকিস্তান ৮-০ গোলে ওমানকে হারিয়ে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। চীনকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপে রানার্সআপ হয়েছে ভারত। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া। আর ভারতের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া।