আনুষ্ঠানিকভাবে কাল যখন ইনচেন এশিয়ান গেমসের পর্দা নামলো, তখনও বিমানে মাশরাফি বিন মর্তুজারা। দেশে ফিরতে হবে বলে এশিয়ান গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। উপস্থিত না থাকলেও ইনচেনের আকাশে বাতাসে সোনা না পাওয়ার হাহাকার রেখে এসেছেন মাশরাফিরা। মাশরাফিরা ইনচেন গিয়েছিলেন সোনা জয়ের টার্গেটে। কাল রাতে দেশে ফিরেছেন ব্রোঞ্জ নিয়ে। সোনা জিততে না পারার হতাশা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মাশরাফিদের।
গত এক বছর ধরে ভালো সময় কাটছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটের। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেখান থেকে উদ্ধার পেতে চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু কোনোভাবেই কিছু হচ্ছে না। তারপরও ক্রিকেটাররা টার্গেট করেছিলেন এশিয়ান গেমসকে। দেশ ছাড়ার আগে ক্রিকেটাররা টার্গেট করেছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের অনুপস্থিতিতে এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে। ক্ষয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসকে ফেরাতে মুশফিকুর রহিম ছাড়া জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারকেই পাঠায় ইনচেন। কিন্তু ভাগ্য সহায়ক না হওয়ায়, সোনা নয়, দেশে ফিরতে হয়েছে ব্রোঞ্জ হাতে। সেমিফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ে হারেনি মাশরাফিরা। হেরেছেন ভাগ্যের কাছে। প্রথমে ব্যাট করে ১১ ওভারে ৩ উইকেট ৫৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ধুমিয়ে বৃষ্টি। উন্নত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি থামলেও আর খেলা হয়নি। ফলে ফল নির্ধারিত হয় টসে। তাতে 'দ্বীপরাষ্ট্র' শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক লাহিরু থিরিমানের কাছে হেরে যান মাশরাফি। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে! টসে হেরে সোনা জয়ের ফাইনালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।
ফাইনাল খেলতে না পারলেও নিয়ম অনুযায়ী পরের দিন ব্রোঞ্জ পদকের লড়াইয়ে নামতে হয় মাশরাফিদের। প্রতিপক্ষ আনকোরা হংকং। প্রতিপক্ষ দুর্বল হলেও ভয় ছিল তাতে। এই হংকংয়ের কাছেই টি-২০ বিশ্বকাপে হেরেছিল বাংলাদেশ। তাই ভয় নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন মাশরাফিরা। কিন্তু ম্যাচে টি-২০ বিশ্বকাপের কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি সাবেক ব্রিটিশ কলোনিটি। বরং হেরেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের কাছে। সোনা জয়ের লড়াইয়ে টিকে থাকার টস জিততে পারেননি মাশরাফি। কিন্তু হংকংয়ের সঙ্গে টস জিতেন। যা আসরে প্রথম টস জয় টাইগার অধিনায়কের। ব্যাট করতে নেমে মাশরাফিবাহিনী ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬২ রান করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন সাকিব মাত্র ২৩ বলে। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত থাকেন ৩৫ রানে। শামসুর রহমান শুভ ২৬, তামিম ইকবাল ২২ রান করেন। জবাবে হংকংয়ের ইনিংস থমকে দাঁড়ায় ১৩৫ রানে। সাকিব ৪ ওভারের স্পেলে ২৩ রানে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের সফল বোলার ছিলেন আরাফাত সানী, ৪ ওভারের স্পেলে ২২ রানে নেন ৩ উইকেট। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে নবাগত কুয়েতকে ২০৩ রানের বিরাট ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। সোনা জিততে না পারায় পুরোপুরি হতাশ বাংলাদেশের রঙিন ক্রিকেটের নতুন অধিনায়ক মাশরাফি, 'সোনা জেতার মতো দল নিয়েই আমরা এশিয়ান গেমসে গিয়েছিলাম। আমাদের বিশ্বাসও ছিল সোনা জেতার বিষয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সঙ্গী হওয়ায় জিততে পারিনি। তবে এটা ঠিক এশিয়ান গেমস আমাদের আগামী সিরিজগুলোতে ভালো খেলার বিষয়ে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।' ক্রিকেটাররা দেশে ফেরার পর সবাই নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে যাবেন। পরিবারের সঙ্গে মিলে মিশে ঈদ করবেন। এরপর প্রস্তুতি নিবেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে। যেখানে বাংলাদেশ খেলবে দুই অধিনায়কের নেতৃত্বে। টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিবেন মুশফিকুর রহিম এবং ওয়ানডের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।