ইনচেন এশিয়ান গেমস হকিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন বলেছিলেন 'পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে থাকার টার্গেট নিয়েই মাঠে নামবেন। কোচ নাভেদ আলম বলেছিলেন, গ্রুপ পর্বে শুধু সিঙ্গাপুর নয় আমরা জাপান কিংবা মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ের আশা করছি। কোনো টার্গেটই পূরণ হয়নি। গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশের অবস্থান আটে। গ্রুপে একমাত্র জয় ছিল সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে। তাও আবার ভাগ্যক্রমে ২-১ গোলে। জাপান ৮-০, মালয়েশিয়া ৫-১ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৭-০ গোলে হেরে গেছে চয়নরা। সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ওমানের কাছেও হার মানে। এই ওমানকে গত ওয়ার্ল্ড হকি লিগ ও এবার এশিয়ান গেমস বাছাই পর্বেও শোচনীয়ভাবে হারিয়ে ছিল। অর্থাৎ কোনো লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দেশে ফিরে এসেছে চয়নরা। কেন এমন বিপর্যয় বা হকিকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়েই কথা হয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ মাহবুব হারুনের সঙ্গে। হারুন বললেন, আমাদের যে যোগ্যতা তাতে এই ফলাফলকে আমি ভরাডুবি বলব না। কোচ নাভেদ যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশের হকির মান এতটা উন্নতি হয়ে যায়নি যে আমরা জাপান কিংবা মালয়েশিয়াকে হারাব। তবে জাপানের কাছে এমনভাবে বিধ্বস্ত হবে তা আমি ভাবতে পারিনি। তারপরও বলব ওমানের কাছে হারটাই মূলত আমাদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। হারুন বলেন, এবারের প্রস্তুতি নিয়ে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সত্যি বলতে কি হকি ফেডারেশনের উদ্যোগ খারাপ ছিল না। কিন্তু একটা ব্যাপার কেউ খেয়াল করেননি এশিয়ান গেমস স্কোয়াডে তেমন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিল না। ফেডারেশনে এখন যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অনেকেরই বেশ ক'বার এশিয়ান গেমসে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। জাতীয় দলগুলোই এখানে অংশ নিয়ে থাকে। সুতরাং কর্মকর্তারা তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে কেন দল গঠন করল তা বুঝে উঠতে পারলাম না। ভারত 'এ' দলের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ বা ঢাকায় ওয়ার্ল্ড হকি লিগের প্রাথমিক লড়াইয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের প্রয়োজন রয়েছে। চয়ন, পুস্কর ক্ষিসা ও নিলয় ছাড়া দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ই ছিল না। এদেরকে পাঠিয়ে জাপান বা মালয়েশিয়াকে হারানোর স্বপ্ন দেখে কীভাবে? চারজন নির্ভরযোগ্য তারকা জিমি, কামরুজ্জামান, জাহিদ ও পিন্টুতো বহিষ্কার। তারপরও ওরা যখন ভুল স্বীকার করে ফেডারেশনের কাছে চিঠি দিয়েছিল তখন তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করে ইনচেনে পাঠানো যেত। যাক এটা ফেডারেশন ভালো বুঝবে কেন তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করা যায়নি। কিন্তু এর বাইরেওতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিলেন তাদের কেন দলে নেওয়া হলো না? ফেডারেশনের কে কি ভাববেন জানি না তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি এবারে এশিয়ান গেমসে টিম সিলেকশনই সঠিক ছিল না। অভিজ্ঞ খেলোয়াড় গেলে বাংলাদেশ খুব যে ভালো খেলতো তা বলছি না। তবে হয়তোবা এমন বিপর্যয় হতো না। কারণ অভিজ্ঞতার মূল্যই আলাদা। নাভেদ আলমের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়াতে ফেডারেশন এখন নতুন বিদেশি কোচ খুঁজছে। হারুন বলেন, দেখেন বিদেশি কোচ এনে হকি মানের কি কোনো পরিবর্তন ঘটছে। নাভেদ আলম বাংলাদেশের হকিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। এশিয়া কাপ ও এশিয়ান গেমসের পারফরম্যান্সই তা বলছে। সুতরাং অঢেল অর্থ খরচ করে বিদেশি কোচ এনে লাভ হচ্ছে কি? আমি কিন্তু বিদেশি কোচের বিরোধিতা করছি না। শুধু এতটুকুই বলব ফেডারেশন যাকেই আনুক তার মাধ্যমে হকির যেন উন্নয়ন ঘটে। শুধু কোচ পরিবর্তন করেও লাভ হবে না। হকিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। খেলোয়াড়রা কেন যোগ্যতা অনুযায়ী মাঠে খেলতে পারছে না সে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা উচিত।