আরও একটি এল ক্লাসিকো দেখতে মুখিয়েছিল গোটা বিশ্ব। আগের দিন বার্সেলোনা ফাইনালে উঠায় শক্ত ভিত পেয়েছিল স্বপ্নটি। স্বপ্নের পূর্ণতা দিতে জয় দরকার ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। ঘরের মাঠে অবিশ্বাস্যও ছিল না সেটা। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য কাজটি সত্যি হলো না। হতে দিলেন না ২২ বছর বয়সী এক স্পেনিশ তরুণ আলভারো মোরাতা। এক বছর আগে হলে অন্য সবার মতো তিনিও হয়তো স্বপ্ন দেখতেন এল ক্লাসিকোর। কিন্তু পরশু রাতে ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে সাবেক ক্লাব রিয়ালের কফিনে পেরেক ঠুঁকে দেন মোরাতা। তার গোলই হতে দেয়নি আরও একটি এল ক্লাসিকো। তার ওই দুর্দান্ত গোল রিয়ালকে উঠতে দেয়নি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। মোরাতার ২ কোটি ইউরো মূল্যমান গোলেই ২০০৩ সালের পর ফের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল ইতালিয়ান লিগ চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস। আগামী ৬ জুন বার্লিন ইউরো সেরা ক্লাবের লড়াইয়ে বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে মোরাতা-তেভেজ-বুফোন-চিয়েলিন্নির জুভেন্টাস।
প্রথম লেগে ১-২ গোলে হেরেছিল রিয়াল। হারলেও ফাইনাল খেলার সুবর্ণ সুযোগ ছিল স্প্যানিশ জায়ান্টদের। নিজের মাঠে খেলা, ইতিহাসও পক্ষে, তাই সমর্থকে উপচে পড়েছিল বার্নাব্যু স্টেডিয়াম। পুরো স্টেডিয়াম সেজেছিল রিয়ালের পতাকায়। তার উপর শুরু থেকেই সমর্থকদের অহর্নিশ সমর্থন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজামা, গ্যারেথ বেলদের উদ্দীপ্ত করছিল। কিন্তু দিন শেষে সমর্থকরা শুরুর হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। মাঠ ছাড়েন মাথা নিচু করে, কান্নার নোনা জলে ভিজে। তবে রিয়ালের শুরু ছিল দুর্দান্ত। ২২ মিনিটে জুভেন্টাসের বর্ষিয়ান ডিফেন্ডার চিয়েলিন্নি ডি বক্সে ফাউল করে ফেলে দেন জেমস রদ্রিগেজকে। রেফারি সময়ক্ষেপণ না করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। বিশ্বসেরা ফুটবলার রোনালদো ডান পায়ের জোরালো শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক জিয়ান লুইজি বুফনকে পরাস্ত করে মাতিয়ে তুলেন পুরো স্টেডিয়াম (১-০)। ওই গোলের পর স্টেডিয়ামে উপস্থিত রিয়াল সমর্থকরা চিৎকার করতে থাকেন 'রিয়াল, রিয়াল' বলে। ওই গোল করে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও গড়ে ফেলেন রোনালদো। গোল করে ছুয়ে ফেলেন রিয়ালের সর্বকালের সেরা গোলদাতা আলফ্রেড ডি স্টেফানোকে। এখন সামনে কেবল রাউল গঞ্জালেজ। গোল করে পাশে নাম লেখান এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওনেল মেসির। মেসির গোলসংখ্যা এখন পর্যন্ত ১০। রোনালদোরও গোল সংখ্যা ১০। তবে রেকর্ডটাকে আরও উপরে নেওয়ার সম্ভাবনা মেসির। কেননা ৬ জুন ফাইনাল খেলবেন মেসি।
রোনালদোর গোলের পর রিয়াল যখন ফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর, তখনই স্বপ্নকে বাস্তবতার কঠিন জমিনে টেনে নামিয়ে আনেন মোরাতা। অথচ মোরাতা গত মৌসুমেও রিয়ালের পক্ষে খেলেছেন এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপার স্বাদ ভাগও করে নিয়েছিলেন রোনালদোর সঙ্গে। অথচ পরশু রাতে নামে প্রতিপক্ষ হিসেবে। প্রতিপক্ষ হওয়ার লড়াইয়ে জিতেন মোরাতা। ৫৮ মিনিটে জটলা থেকে গোল করে স্তব্ধ করে দেন রিয়াল মাদ্রিদকে। তার গোলেই ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলে। প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছিল জুভেন্টাস। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলে এগিয়ে ১২ বছর পর ফের ফাইনালে উঠলো জুভেন্টাস। সেমিফাইনালের প্রথম লেগেও গোল করেছিলেন মোরাতা। মোরাতা পেশাদার লিগে খেলেন ২০১০ সালে। তার জন্ম রিয়াল একাডেমিতে। গত বছর কোচ কার্লো আনচেলিত্তি ২ কোটি ইউরোতে জুভান্টোসের কাছে বিক্রয় করে দেয় মোরাতাকে। মোরাতার গোলে ২০০৩ সালের পর পুনরায় ফাইনালে উঠলো জুভেন্টাস। সে সঙ্গে রিয়ালের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের হারের প্রতিশোধও নিল। ১৯৯৮ সালে রিয়ালের কাছে হেরেই রানার্স আপ হতে হয়েছিল জুভেন্টাসকে।
বার্সেলোনা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল ২০১১ সালে। জুভেন্টাস শিরোপা জিতেছিল ১৯৮৫ সালে। নতুন ইউরো সেরা হতে জুভেন্টাস ও বার্সেলেনা ৬ জুন মুখোমুখি হচ্ছে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। তখনই হয়তো রচিত হবে নতুন কোনো ইতিহাস।