শেষ পর্যন্ত শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও হারের খাতায় নাম লেখালো। মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে সব দলই হার মেনেছিল। ব্রাদার্স ও মোহামেডানের কাছে পয়েন্ট হারালেও একমাত্র দল হিসেবে শেখ জামালই অপরাজিত ছিল। সেই অহঙ্কার ভেঙে দিল ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা ২-০ গোলে শেখ জামালকে পরাজিত করে। এই ফলাফলে লিগ এখন দারুণভাবে জমে উঠল। কেননা ম্যাচ হারলেও ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমপর্বে শীর্ষে রয়েছে শেখ জামাল। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র মূল্যবান ৮ পয়েন্ট নষ্ট করলেও তারা যদি পরবর্তী দুই ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম আবাহনী ও রহমতগঞ্জকে হারাতে পারে তাহলে প্রথমপর্বে তাদের পয়েন্ট জমা হবে ২২। অর্থাৎ শেখ জামালের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়পর্ব শুরু করতে পারবে শেখ রাসেল। এখন এই সুযোগ এমিলিরা কাজে লাগাতে পারবে কিনা তা দেখার বিষয়।
আবাহনী আগের দুই ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধার কাছে হার ও দুর্বল ফরাশগঞ্জের সঙ্গে ড্র করে মূল্যবান ৫ পয়েন্ট নষ্ট করে। এতে করে শিরোপা রেসে টিকে থাকাটা আবাহনীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে দলের ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু বলেছিলেন, আশা এখনো ছাড়েনি। সামনের ম্যাচগুলোতে গোলের সুযোগ যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে আমরা শিরোপা ফাইট দিতে পারব। হ্যাঁ, আবাহনী আগের দুই ম্যাচে ছন্দহীন থাকলেও গতকাল শেখ জামালের সামনে প্রকৃত আবাহনী রূপ ধারণ করে। কেন জানি শেখ জামালকে গতকাল শুরু থেকেই খাপ ছাড়া মনে হয়েছে। ওয়েডসন, ডালিংটন আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেঙে চুরমার করে দিলেও ১০ নং ম্যাচে তারা ছিলেন বেশ নিষ্ক্রিয়। মূলত এ দুই ফুটবলারই এবার শেখ জামালের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন। তাদের কাল আবাহনীর রক্ষণভাগ বোতলবন্দী করে রাখে।
অন্যদিকে আবাহনী ছিল বেশ গতিময়। একের পর এক আক্রমণ করে জামালকে দিশেহারা করে ফেলে। বিদেশি নয় দলের লোকালদের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ওয়াহেদ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। এ তরুণ ফুটবলারকে এবার মোহামেডান থেকে আনা হয়। অথচ গতবারের মতো তার পরফরম্যান্স চোখে পড়ছিল না। কাল বুঝিয়ে দিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। ২০ মিনিটেই আবাহনী এগিয়ে যায়। এ সময়ে শাহেদের নিখুঁত ফ্রি কিক থেকে ওয়াহেদ চমৎকার হেডে জালে বল পাঠান। মনে হচ্ছিল সমতা ফেরাতে ওয়েডসনরা জ্বলে উঠবে। না গোল করার মতো আক্রমণই তারা করতে পারেননি। বরং আবাহনী ছিল আরও গতিময়। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে শেখ জামাল অবশ্য আক্রমণে ফিরেছিল ঠিকই। কিন্তু আবাহনীর রক্ষণভাগের দৃঢ়তার কারণে গোল করা সম্ভব হয়নি। অনেকদিন পর দলের রক্ষণভাগও জ্বলে উঠে। ৫৮ মিনিটে মরিসনের ক্রশে ওয়াহেদ পুনরায় গোল করেন। আর ৬৮ মিনিটে লালকার্ড দেখে ডার্লিংটন মাঠ ছাড়লে ১০ জনের শেখ জামাল মাঠে কোনো সুবিধা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত জয়ের উল্লাসে মাঠ ছাড়ে আবাহনী। এ জয়ে ৯ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৭ পয়েন্ট। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে তারা প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে। এই ম্যাচে জিতলে আবাহনীও ভালোভাবে শিরোপা রেসে ফিরে আসবে।