ছেলের শিক্ষককে লেখা আব্রাহাম লিংকনের চিঠি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠ্যপুস্তকের অংশ। একইভাবে মারাঠা সাহিত্যেও জায়গা করে নিয়েছে বিদায়ী টেস্টে শচীন টেন্ডুলকারের ২২ মিনিটের অসাধারণ সেই ভাষণ। ক্রিকেট ইতিহাসে টেন্ডুলকারের মতো এমন জমকালো বিদায় নিতে পারেননি কোনো ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে এমন বিদায় কল্পনাকে হার মানায়। মাঠ থেকে ঘটা করে বিদায় নিতে পেরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সংখ্যা কড়ে আঙ্গুলে গোনা যায় না। বিশেষ করে অধিনায়করদের বিদায় খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক। অনেক সময় অধিনায়কদের সরে যেতে হয়েছে বলির পাঁঠা হয়ে। বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের যদি অধিনায়কত্ব চলে যায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে মুশফিক যে আর টাইগারদের টেস্ট অধিনায়ক থাকছেন না, সে রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সুতোয় ঝুলে থাকা তার অধিনায়কত্ব অবশ্য আসন্ন ভারতের বিপক্ষে টিকে থাকবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সেটা বদলে যেতে পারে। তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট আবার এক অধিনায়কে ফিরতে পারে। মাশরাফি বিন মর্তুজা যদি অধিনায়ক হয়েই যান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মাশরাফি সর্বশেষ অধিনায়কত্ব করেছেন ২০০৯ সালে। অবশ্য বোর্ডের তালিকায় রয়েছে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের নামও।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ১০৬, ৬৫ ও ৪৯* রানের ইনিংস খেলার পর টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। গত দুই বছরে যে ধারায় ব্যাটিং করছেন মুশফিক, এ রকমটা এর আগে কখনোই কোনো ব্যাটসম্যানকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চমৎকার পারফরম্যান্স করেন। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও জিম্বাবুয়ে সিরিজে হারান ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়েই বিসিবি চালু করে দুই অধিনায়ক। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ফিরে পান মাশরাফি। মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে টাইগাররা। সর্বশেষ ১৪ ওয়ানডের ১১টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দলের কোচ ওয়াকার ইউনুস ভূয়সী প্রশংসা করেন মাশরাফির।
ওয়াকার যেখানে প্রশংসা করেন মাশরাফির, সেখানে টেস্টে মুশফিকের অধিনায়কত্ব সমালোচনার মুখে পড়ে। বিশেষ করে মিরপুর টেস্টে একাদশ নিয়ে চরমভাবে সমালোচিত হন। হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে মাত্র দুজন পেসার খেলানোর কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি। তার ওপর প্রথম ওভারেই আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন শাহাদাত হোসেন রাজিব। ফলে একাই বোলিং করতে হয়েছে মোহাম্মদ শহীদকে। যদিও সৌম্য সরকার বোলিং করেছেন। কিন্তু তার নখদন্তহীন বোলিং কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। শুধু একাদশ নয়, টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায়ও সমালোচনায় পড়তে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানি বোলিংয়ের বিপক্ষে হাল ছেড়ে দেওয়া ক্রিকেট খেলে হেরে যায় ৩২৮ রানে। তখনই অবশ্য তার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়। তার ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবি সভাপতি, 'একজন ক্রিকেটারের পক্ষে কখনোই একা ব্যাটিং, কিপিং ও অধিনায়কত্ব করা সম্ভব নয়। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কোনটা করবেন? তবে এটা ঠিক এ বছরই আমরা বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলব।'
পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে আঙ্গুলে ব্যথা পাওয়ায় কিপিং করতে পারেননি। অনেক দিন ধরেই তাকে কিপিং ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছে বিসিবি। কিন্তু গায়ে মাখছেন না মুশফিক। এখন সেটাকে গুরুত্ব সহকারেই নিতে হবে মুশফিককে। হয় অধিনায়কত্ব, না হয় উইকেট কিপিং-যে কোনো একটা তাকে ছাড়তেই হবে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে যদি অধিনায়কত্ব করেনও, তখন তার জায়গায় লিটন দাসকে কিপিং করতে দেখা যেতেই পারে।
মুশফিক বাংলাদেশের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার। ৪৫ টেস্টে রান করেছেন ২,৫৫৫। ৩ সেঞ্চুরির বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি ১৪টি। সর্বোচ্চ ২০০। কিপার হিসেবে ক্যাচ ধরেছেন ৭৬টি এবং স্ট্যাম্পিং ১১টি। ১৪৯ ওয়ানডে রান ৩,৬৭১। বাংলাদেশের অধিনায়কদের সবচেয়ে বেশি ২১ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ৪টি এবং ড্র ৬টি। বাকি ১১টিতে হেরেছেন। খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলটদের মতো বলির পাঁঠা হয়েই হয়তো টেস্ট অধিনায়কত্ব হারাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম।