অধিনায়ক হিসেবে এরচেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে মুশফিকের! বোলাররা তার সম্মান রেখেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনেই অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। 'ডে বাই ডে' ভালো ক্রিকেট খেলার যে কথা দিয়েছিলেন মুশফিক তা ময়দানি লড়াইয়ে বাস্তব রূপ পেয়েছে তিনটা দিনই। বৃষ্টি এসে একটা সম্ভাব্য বিজয় থেকে বঞ্চিত না করলে হয়তো বাকি দুটো দিনেও মুশফিকের বক্তব্য সত্যি প্রমাণ হতো! চট্টগ্রাম টেস্টের 'খলনায়ক' বৃষ্টি বাধ্যতামূলক ড্র উপহার না দিলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে পারত বাংলাদেশ! হয়তো বা। তবে চট্টগ্রাম টেস্টের ড্রও তো কম নয়। টেস্টের এক নম্বর দলের বিপক্ষে প্রথম ড্র। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মিশ্র অনুভূতি নিয়েই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিক।
'আমরা সত্যিই হতাশ। টেস্টের এক নম্বর দলের বিপক্ষে লিড নেওয়া ছিল খুবই ইতিবাচক। খেলাটা হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।' মুশফিক সরাসরি জয়ের কথা বলেননি বটে, কিন্তু কে না জানে টাইগারদের সামনে আফ্রিকানরা খাঁচায় বন্দি সিংহের মতোই ছিল অসহায়! ক্রিকেট উঠোনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন ছিল আগেও। কিন্তু টেস্ট আঙিনার শীর্ষ দলটাকে নিয়ে যারা ছেলেখেলা খেলল তাদের মূল্যায়ন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। এক সময় যারা সমালোচনায় মুখর ছিল বাংলাদেশের সেই তারাই এখন ভোল পাল্টে স্তুতি বাক্য বর্ষণ করছে মুষলধারে। চট্টগ্রামে 'হতাশাজনক' ড্রয়ের পর মুশফিক অবশ্য একটা বক্তব্য রেখে গেলেন ভবিষ্যতের জন্য। 'দলগত যে পারফরম্যান্স আমাদেরকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল তা ঢাকা টেস্টে কাজে লাগবে।' টানা এগারটা ইনিংস খারাপ খেলার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে দলের সঙ্গে পুরনো রূপে নিজেকে যুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকারনামাও পাঠ করে গেলেন অধিনায়ক। সাগরিকার আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের উৎসবের স্বপ্ন দেখছেন মুশফিক। অবশ্য অধিনায়ক স্বীকার করেন, ওখানে আফ্রিকান সিংহরাও মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টায় থাকবে। আফ্রিকানদের বিপক্ষে আগের আটটা টেস্টের কোনোটাতেই এমন করে দাপট দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই প্রোটিয়াদের অলআউট, লিড নেওয়া ওসব তো ছিল কল্পনারও অতীত। চট্টগ্রামে সেই কল্পনাকেই ছাড়িয়ে গেল টাইগাররা। আফ্রিকানদের ২৪৮'র জবাবে বাংলাদেশের ছিল ৩২৬। যাদের বিপক্ষে অতীতে চারবারই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে গড়ে প্রায় তিনশো রানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা! মুশফিক এই গৌরবের ভাগিদার করেছেন দলের সবাইকেই। তবে বোলারদের দিলেন বিশেষ সম্মান। 'মুস্তাফিজ-শহিদ দারুণ করেছে। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে ম্যাচ-জেতানো কয়েকজন বোলার পেয়েছি।' ঢাকা টেস্টে বোলাররা এমন ভালো করলে জয়ের সম্ভাবনার কথাও বলেছেন মুশফিক।
'ম্যাচটা জেতার সম্ভাবনা ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা চাপে পড়লে কেমন ক্রিকেট খেলে এটা সবাই জানে। আমাদের সত্যিই ভালো একটা সুযোগ ছিল। আমার ক্যারিয়ারে এমন ভালো সুযোগ কখনো পাইনি। এমন সুযোগ বার বার আসে না।' মুশফিকের মতোই ভক্তদের এ অবস্থা। এমন সুযোগ কী আর পাওয়া যাবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে! টাইগাররা চট্টগ্রাম থেকে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন, তাতে ঢাকা টেস্ট জয়ের স্বপ্ন অবশ্য দেখতে পারেন ভক্তরা। সে অধিকার তো টাইগাররাই দিয়েছেন!
বাংলাদেশ ৯২টা টেস্ট খেলল। এর মধ্যে ৭১ টাতেই হেরেছে। ড্র করেছে ১৪টা। বাকি সাতটাতে জয়। ক্রিকেটের দুই প্রাচীন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি দলগুলোর বিপক্ষে জয় অথবা অন্তত ড্র পেয়েছে বাংলাদেশ।