টেস্ট সিরিজের মত করুণ আত্মসমর্পণ করতে তারা একদমই রাজি নয়। ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে যেন সে কথাই জানান দিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ম্যাচে দুরন্ত ব্যাটিং করেও রোহিত-বিরাটের কাছে ধরাশায়ী হতে হয়েছিল তাদের। দ্বিতীয় ম্যাচে যেন তার ঠিক বিপরীত ফলাফলের খুব কাছে যেয়েও যেতে হল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ভারতের ৩২১ রানের প্রত্যুত্তরে দুরন্ত ব্যাটিং উপহার দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে বিরাটদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিল ক্যারিবিয়ানরা। বুধবার ভাইজ্যাগে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষ হল অমিমাংসিত ভাবে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এদিন বিরাট কোহলির যোগ্য জবাব হয়ে রইলেন সাই হোপ।
টসে জিতে ভাইজ্যাগে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ান ডে’তে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক। ম্যাচের ফলাফলের থেকেও এদিন ম্যাচে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বিরাট কোহলি। তার দশ হাজারি এলিট ক্লাবে নাম লেখানোর অপেক্ষায় স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
প্রথম ম্যাচে শতরানকারী রোহিত শর্মা এদিন চার রান করেই ফিরে যান ইনিংসের শুরুতে। এরপর শিখর ধাওয়ান ২৯ রানে ফিরতেই ভারতীয় ইনিংসের ব্যাটন ধরেন মাইলস্টোনের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা কোহলি। ৪০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে দলকে টানেন রায়াডু। সুযোগ পেলেই নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া থাকেন ভারতের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। যথারীতি হতাশ করলেন না এদিনও।
৮০ বলে ৭৩ রানের সময়োপযোগী ইনিংস খেলে কোহলির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ১৩৯ রান। এরপর রায়াডু ফিরলেও থামানো যায়নি বিরাটকে। ব্যক্তিগত ৪৪ রানের মাথায় একটা সুযোগ দিয়েছিলেন বটে। কিন্তু হোল্ডার তার ক্যাচ ফস্কাতেই ওয়ানডে ক্রিকেটে কোহলির ৩৭ তম শতরানের ইনিংস স্পষ্ট হয়ে যায়।
ব্যক্তিগত ৮১ রানে পৌঁছাতেই পঞ্চম ভারতীয় এবং বিশ্বক্রিকেটে ১৩ তম ব্যাটসম্যান হিসেবে দশ হাজারি এলিট ক্লাবের সদস্য হয়ে যান বিরাট। ২০৫ ইনিংসে এই মাইলস্টোন স্পর্শ করে দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই নজির গড়েন তিনি। এরপর তার ব্যাট থেকে শতরান আসা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা।
৪৪ তম ওভারের স্যামুয়েলসের পঞ্চম বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ওয়ান ডেতে ৩৭ তম শতরানের মালিক হন বিরাট। ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে তার ৫৯ রানের পার্টনারশিপ ভারতের ইনিংসকে তিনশ'র ঘরে নিয়ে যায়। উইন্ডিজ বোলারদের উপর দাপট দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২৯ বলে ১৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। তার ইনিংস এদিন সাজানো ছিল ১৩টি চার ও ৪টি ছয়ে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ৩২১ রান করে ইনিংস শেষ করে ভারত।
পাহাড় প্রমাণ রানের লক্ষ্যামাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে আক্রমণাত্মক মেজাজেই শুরু করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। তবে বড় রান করতে ব্যর্থ হন দুই ওপেনারই। অভিজ্ঞ মার্লন স্যামুয়েলসও অল্প রানে ফিরে যাওয়ায় দলের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন সাই হোপ এবং গত ম্যাচের শতরানকারী শিমরন হেটমেয়ার। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ১৪৩ রানের পার্টনারশিপ চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় বিরাটদের কপালে।
ক্যারিবিয়ান দুই ব্যাটসম্যানের তান্ডবে তখন অসহায় দেখাচ্ছিল ভারতীয় বোলারদের। ম্যাচে সেইসময় রীতিমত অ্যাডভান্টেজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ৬৪ বলে বিধ্বংসী ৯৪ করে হেটমেয়ার ফিরতেই কিছুটা ম্যাচে ফেরে ভারত। ক্যারিবিয়ান ইনিংসে এরপর কিছুটা লাগাম টানতে সক্ষম হন ভারতের বোলাররা। কিন্তু ঠেকানো যায়নি হোপকে। ম্যাচ জেতাতে না পারলেও টেল এন্ডারদের নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে তার ম্যাচ ড্র করার লড়াই বহুদিন মনে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
শেষ বলে ক্যারিবিয়্যানদের প্রয়োজন ছিল পাঁচ রান। উমেশ যাদবের ডেলিভারি পয়েন্টের উপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ভারতের আশা ছিনিয়ে নেন হোপ। ম্যাচ শেষ হয় অমিমাংসিত ভাবে। তার ১৩৪ বলে ১২৩ রানের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও তিনটি ছয়। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন হোপ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর