মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়ে আক্রান্ত অংশের কোষ নষ্ট হওয়াকে স্ট্রোক বা ব্রেন স্ট্রোক বলে আখ্যায়িত করা হয়। স্ট্রোকের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে প্রতি দিনের অভ্যাস থেকে তাই ছেঁটে ফেলুন কিছু ত্রুটি।
প্যাকেটের নোনতা কুকিজ, বা চিপ্সে মিশে থাকা অতিরিক্ত নুন যে নিঃসাড়ে স্ট্রোক ডেকে আনছে, তা কি জানেন? অতিরিক্ত লবণের প্রভাবে রক্তচাপ বাড়ে এবং তা মস্তিষ্কে রক্ত সংবহনে বাধা দেয়। ফলে আজই রাশ টানুন অতিরিক্ত নুন মেশানো খাবারে।
২০১৭-য় ‘স্ট্রোক’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, দিনের পর দিন সকালের প্রথম খাবারে কোনও সিরিয়াল বা প্যানকেক খেয়ে চলেছেন, তারাও দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিপদ পথে। এই সব সিরিয়াল ও প্যানকেক পেস্ট্রিতে অতিরিক্ত চিনি থাকে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এগুলোর ভূমিকা রয়েছে।
‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত ২০১৯-এর একটি গবেষণা বলছে, মদ্যপান করেন না ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান তারা স্ট্রোকের থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকেন। তুলনামূলকভাবে মদ্যপায়ীরা রয়েছেন বিপদে। এই প্রসঙ্গে ২০১৫-র আর একটি গবেষণা বলছে, দিনে দুই পেগের বেশি মদ খেয়ে থাকলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায় আরও।
হেমোরহ্যাজিক স্ট্রোককে ডেকে আনে ভিটামিন সির ঘাটতি। পাতে রাখুন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার।
মেদ ঠেকাতে ও জিভকে আরাম দিতে সাধারণ নরম পানীয় ছেড়ে ডায়েট পানীয়কে বেছে নেন অনেকেই। কিন্তু এতে অতিরিক্ত চিনি মেশানো থাকে। যা হার্টের জন্যও ক্ষতিকর। মেদ ও কোলেস্টেরলও বাড়ায়। স্ট্রোক ডেকে আনে।
পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত। অ্যালকোহল শরীরে জল শোষণ করে শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। মদ অবশ্যই ছাড়তে হবে। সঙ্গে পানির অভাব যাতে না হয়, তার খেয়ালও রাখতে হবে।
মানসিক অবসাদও স্ট্রোক ডেকে আনার অন্যতম কারণ। হাতশা ও মানসিক অবসাদ হৃদযন্ত্রে যেমন চাপ ফেলে, তেমনই মস্তিষ্কের কোষে রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। ঘন ঘন হতাশায় ভোগেন যারা, তারা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিভিন্ন ক্রনিক অসুখে ঠিক করে চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে চলা বা ওষুধে শৃঙ্খলা না রাখলে তা শরীরে প্রভাব ফেলে। এর জেরেও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একটু আধটু ব্যথা-বেদনা হলেই মুঠো মুঠো বেদনানাশক ওষুধ খান? এতে থাকা স্টেরয়েড ভাস্কুলার ডেথ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো অসুখের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।
দিনে সাত-ঘণ্টা একই জায়গায় বসে কাজ করলে তাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের জোগান কম হয়। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, মাঝে মাঝেই সিট ছেড়ে উঠুন, হাঁটাহাঁটি করে আসুন।
অতিরিক্ত রেড মিট স্ট্রোকের প্রায় ২৮ শতাংশ আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। কোলেস্টেরল বাড়ানোতেও এর জুড়ি নেই। বদ্ধ ঘরে সারা ক্ষণ এসি চালিয়ে বসে থাকেন? তা হলেও সাবধান হোন। মাঝে মাঝেই খুলে দিন জানালা। বাইরের বাতাস ঢুকতে দিন ঘরে। ঘরের ভিতরের বাতাস যাতে দূষিত না থাকে সে দিকেও নজর দিন। বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে যা যা করণীয়, তা করুন। বায়ুদূষণও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।
খাবার পাতে দুগ্ধজাত জিনিস রাখুন। যারা ল্যাকটোজেন সহ্য করতে পারেন না, তারাও এর বিকল্প কোনও খাবার জেনে নিন চিকিৎসকের থেকে। দুধ থেকে তৈরি জিনিস প্রতি দিন পাতে রাখলে তা স্ট্রোকের শঙ্কা ঠেকায়।
সারাক্ষণ এসিতে না থেকে মাঝে মাঝে সূর্যের আলো লাগান শরীরে। ভিটামিন ডি-এর অভাবও স্ট্রোক ডেকে আনে। ভিটামিন ডি-এর অভাব হাড়ের অসুখেরও অন্যতম কারণ। এর অভাব ঘোচাতে বেশ কিছু ওষুধও মেলে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে পারেন।
সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা