দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন পেস বোলার তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার অপরিচিত কন্ডিশনে বাউন্সি উইকেটে একজন বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার হিসেবে অনন্য অবদান রাখেন তিনি। গতকাল তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছে বাংলাদেশ।
এদিন ৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান খরচ করে ৫ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ের কারণেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারেনি স্বাগতিক প্রোটিয়ারা। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। পাশাপাশি জিতে নিয়েছেন সিরিজসেরার পুরস্কারও।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে নিজের অনুভূতি জানান তাসকিন। সেইসঙ্গে কীভাবে এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন সে রহস্যও জানালেন তিনি।
তাসকিন বলেন, ‘আমি খুব খুশি ও গর্বিত। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম আমরা সিরিজ জিতলাম। এই প্রথম আমি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ম্যান অব দ্য সিরিজ হলাম।’
নিজের আগ্রাসী রূপের রহস্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে গত দেড় বছর ধরে আমি একই প্রসেস মেনে চলেছি। আজকেও সেটা নিয়ে একই রকম মানসিকতা নিয়ে এসেছি। আজকে ভালোভাবে এক্সিকিউট করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে সফল হয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতেও ভালো করতে পারব।’
নিজের পরবর্তী লক্ষ্যের কথাও জানালেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘আমার এখনো শিখতে হবে ফ্ল্যাট ও স্লো উইকেটে কীভাবে পাঁচ উইকেট নিতে হয়! এটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য!’
গতকাল সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৯ উইকেটের বিশাল জয় পায় তামিম ইকবালের দল। এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগারদের বোলিং তোপের মুখে মাত্র ১৫৪ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ দল ৯ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
এদিন লিটন-তামিম জুটি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজেদের করা ৯৫ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভেঙে গড়লেন ১২৭ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড। লিটন দাস ব্যক্তিগত ৪৮ রানে সাজঘরে ফিরলেও টাইগার অধিনায়ক তামিম সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে খেলা শেষ করে মাঠ ছাড়েন। এর আগে ৮২ বল খেলে ১৪টা চারের মারে ৮৭ রান করেন। অপরপ্রান্তে সাকিব করেন ১৮ রান। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। একই সাথে সিরিজ সেরাও হন তিনি।
এদিন আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। মালান ডি ককের শুরুটা ভালোই ছিল। তবে মেহেদী মিরাজ আগের ম্যাচের ম্যাজিকাল ডি কককে সেঞ্চুরিয়নে সুবিধা করতে দেননি। তারপর এগিয়ে আসেন বাংলাদেশর পেস বিপ্লবের অগ্রনায়ক তাসকিন আহমেদ, ধারাবাহিক আঘাতে কোণঠাসা প্রোটিয়ারা।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেটের মাইলফলকে তাসকিন। সাকিবও থাকলেন দারুণ কিপটে মুডে, সাথে দুই উইকেট। শরীফুলও চোখে পড়ার মতো ভালো বল করেছেন। সবমিলিয়ে প্রথম ওয়ানডের মতো শেষ ওয়ানডেতেও দারুণ টিমওয়ার্ক বোলিংয়ে। পেস-স্পিন মেলবন্ধন। দশেমিলে করা কাজের ফলটাও হলো দারুণ, ১৫৪ রানের বেশি যাওয়া হলো না প্রোটিয়াদের।
পরের গল্প কেবল স্বর্গীয়! সেঞ্চুরিয়নে নেমে এলো এক রূপকথার রাত, প্রোটিয়া ডেরায় রচনা হলো টাইগারদের স্বর্গীয় নীড়। যে নীড় গড়তে সাকিব পরিবারের চার সদস্য অসুস্থ থাকার পরও দেশে ফেরেননি, তাসকিন যে ম্যাচে খেলেছেন আইপিএলে খেলার মতো লোভনীয় প্রস্তাব হেলায় ফিরিয়ে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ