ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরির আগুনে বোলিংয়ে কাঁপছিল অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চাশ রানের আগেই হারিয়ে ফেলেছিল পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। হারের শঙ্কায় পড়া দলকে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিলেন অ্যালেক্স কেয়ারি ও ক্যামেরন গ্রিন। দুইজনের রেকর্ড গড়া জুটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিল অ্যারন ফিঞ্চের দল।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল তারা। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। তাদের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। যার মধ্যে ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথাম যান চল্লিশের ঘরে। কিন্তু কেউই বড় ইনিংস খেলতে না পারায় দলটি গুটিয়ে যায় ২৩২ রানে।
বোল্ট ও হেনরির ছোবলে ৪৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়াকে পথ দেখান কেয়ারি ও গ্রিন। দুইজনের দেড়শ ছাড়ানো জুটির সুবাদে ৩০ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা। ষষ্ঠ উইকেটে কেয়ারি ও গ্রিন গড়েন ১৫৮ রানের জুটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই, যেকোনো দলের যা সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
কেয়ারি ১ ছক্কা ও ৮ চারে ৯৯ বলে ৮৫ রান করে ফেরেন। তার বিদায়ের পর এক প্রান্ত ধরে রেখে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন গ্রিন। ১ ছক্কা ও ১০ চারে ৯২ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচে সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
রান তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম স্পেলে নাড়িয়ে দেন বোল্ট। পরপর তিন ওভারে ফেরান তিনি ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনকে। প্রথম স্পেল শেষে এই পেসারের বোলিং ফিগার ছিল ৫-২-১২-৩। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউ করেন বোল্ট। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। এই পেসারের ভেতরে ঢোকা বল স্মিথের ব্যাটের ভেতরের কানা নিয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। লাবুশেন হন এলবিডব্লিউ।
এক প্রান্তে নিজের মতো খেলে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারকে ইনিংস বড় করতে দেননি হেনরি। তাকে পুল করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার (১ ছক্কা ও ২ চারে ২০)। এই পেসার পরে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন মার্কাস স্টয়নিসকে। অস্ট্রেলিয়াকে তখন চোখ রাঙাচ্ছিল হার। খাদের কিনার থেকে দলকে টেনে তোলেন কেয়ারি ও গ্রিন। দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুইজন। কেবল নিজের জোনে পেলেই মারেন বাউন্ডারি।
তাদের জুটি পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৫৮ বলে। সেঞ্চুরি ১০৮ বলে। সমানতালে রান আসতে থাকে দুজনের ব্যাট থেকেই। ৫৯ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম ওয়ানডে ফিফটি করেন কেয়ারি। একাদশ ওয়ানডেতে এসে প্রথম ফিফটির দেখা পান গ্রিন, ৬১ বলে।
মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড ৩৮তম ওভারে। লকি ফার্গুসনের শর্ট বল আকাশে তুলে দেন গ্রিন; কিন্তু ডিপ ফাইন লেগে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি বোল্ট। ৬৮ রানে বেঁচে যান গ্রিন।
নিজের পরের ওভারেই অবশ্য ফার্গুসন ভাঙেন এই জুটি। এবারও তার অস্ত্র শর্ট বল। পুল করে মিড-অনে ধরা পড়েন কেয়ারি।
তার বিদায়ের পর ম্যাচ নেয় নতুন মোড়। পরপর দুই ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল স্টার্ককে ফিরিয়ে লড়াই জমিয়ে দেন বোল্ট ও ফার্গুসন। জয় থেকে তখনও ২৬ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। আশায় বুক বাঁধে নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু অ্যাডাম জ্যাম্পা ও গ্রিনের জুটি তারা শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি। মাঝে একবার বৃষ্টি এলেও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারাতে বসেছিল নিউ জিল্যান্ড। স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মার্টিন গাপটিল। ৬ রানে জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। স্টার্কের বলেই ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন কিউই ওপেনার।
৮১ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন উইলিয়ামসন ও কনওয়ে। জ্যাম্পার লেগ স্পিনে কনওয়ে এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৬ রান করা ব্যাটসম্যান।
উইলিয়ামসনকে থামান ম্যাক্সওয়েল। তার স্লোয়ারে মিডউইকেটে ধরা পড়েন ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৫ রান করা নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক। এরপর ল্যাথাম ও ড্যারিল মিচেলের ব্যাটে আরেকটি পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি পায় সফরকারীরা।
এক ওভারে ওই দুই ব্যাটসম্যানকেই বিদায় করেন ম্যাক্সওয়েল। প্রথম বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ২৬ রান করা মিচেল। পঞ্চম বলে সুইপ করে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন ১ ছক্কা ও ২ চারে ৪৩ রান করা ল্যাথাম।
শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার দাবি মেটাতে পারেননি নিউ জিল্যান্ডের পরের ব্যাটসম্যানরা। দুই ওভারে ৩ উইকেট তুলে প্রতিপক্ষকে আড়াইশ পর্যন্ত যেতে দেননি জশ হেইজেলউড। আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩২/৯ (গাপটিল ৬, কনওয়ে ৪৬, উইলিয়ামসন ৪৫, ল্যাথাম ৪৩, মিচেল ৩৬, ব্রেসওয়েল ৭, নিশাম ১৬, স্যান্টনার ১৩, হেনরি ৪, ফার্গুসন ৫*, বোল্ট ৬*; স্টার্ক ৯-২-৪৩-১, হেইজেলউড ১০-১-৩১-৩, জ্যাম্পা ১০-০-৩৮-১, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৫২-৪, গ্রিন ৫-০-৩৩-০, স্টয়নিস ৬-০-২৫-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৫ ওভারে ২৩৩/৮ (ওয়ার্নার ২০, ফিঞ্চ ৫, স্মিথ ১, লাবুশেন ০, স্টয়নিস ৫, কেয়ারি ৮৫, গ্রিন ৮৯*, ম্যাক্সওয়েল ২, স্টার্ক ১, জ্যাম্পা ১৩*; বোল্ট ১০-২-৪০-৪, হেনরি ১০-০-৫০-২, স্যান্টনার ১০-০-৪৭-০, ব্রেসওয়েল ৩-০-১৬-০, ফার্গুসন ৯-০-৬০-২, নিশাম ৩-০-১৪-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্যামেরন গ্রিন
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ