সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আগামী বিশ্বের মানুষের স্থান দখল করবে ‘এআই’!

টেকনোলজি ডেস্ক

আগামী বিশ্বের মানুষের স্থান দখল করবে ‘এআই’!

পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণীর নাম মানুষ। সেই মানুষই বুদ্ধি খাটিয়ে এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে যা মানুষের কথামতো কাজ করবে, দেবে নানা রকমের সেবা।  এতে বদলে যাবে বৈশ্বিক হালচাল, পরিবর্তন আসবে জীবনধারণে। গ্রাহকসেবা থেকে স্বাস্থ্যসেবা, চাকরির সিভি বাছাই থেকে কর্মী নিয়োগ, এসবই করবে এআই প্রযুক্তি। যা আগে কল্পনাও করা যায়নি।  বিস্তারিত রইল প্রতিবেদনে...

 

আগামীর কল্পকাহিনির ভবিষ্যৎ! যেখানে ভয়েস কমান্ডে হাজির হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট। আর চাহিদা অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করে দেবে মানুষের। হ্যাঁ, এমন প্রযুক্তির দেখা মিলেছে আধুনিক বিজ্ঞানে। এক সময় এই প্রযুক্তি কল্পকাহিনি মনে হলেও বর্তমান বিশ্বে এটি ‘এআই’ প্রযুক্তি নামে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, মানুষ তার নিজের সেবার জন্য আর মানুষকে ব্যবহার না করে এমন এক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাচ্ছে যা হুবহু মানুষের মতোই কাজ করবে।

 

কিন্তু এটা কতটা সম্ভব? এআই প্রযুক্তিতে কতটা এগিয়েছে বিশ্ব? এর ভালো ও খারাপ দিকগুলো কী কী? এ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

 

মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব না। একটানা কোনো কাজ ১ ঘণ্টার বেশি করলে সেখানে কিছুটা স্থবিরতা চলে আসে, যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এআই ব্যবহার করে সেখানে একেকটি এআই দিয়ে একই কাজ, একই ধাঁচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা করানো যাবে। অনেকটা শিল্প বিপ্লবের সময়ে মেশিন যেভাবে মানুষের বিকল্প হয়েছিল; ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বিশ্বে মানুষের আরেকটি বিকল্প তৈরি হচ্ছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সহজ করে বললে, মানুষ দিয়ে যেসব কাজ করা হয়, সেগুলো বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে করানো হলে বেচে যাবে খরচ ও সময়। ম্যাকেঞ্জি গ্লোবালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৭৫ মিলিয়ন মানুষের অর্থাৎ ১৪ শতাংশ মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এই ‘এআই’।

 

‘এআই’ প্রযুক্তি কী

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স- সঞ্চালিত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনগুলো বিশ্বকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার এবং মানব জাতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং ইতিহাস রূপান্তরিত করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘এআই’ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি এমন বহু সুযোগ প্রদান করবে যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিপূরক হিসেবে এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে কাজে লাগবে। এই প্রযুক্তিতে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি হলো এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি, যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় এবং ভাবায়। যেমন- কারও কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি। এককথায় মেশিন লার্নিং।

 

‘এআই’ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কী?

মহামারিজনিত লকডাউন, ডিজিটালাইজেশন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনুফোরআইআর)- এই সবকিছুই বৈশ্বিক শাসন ও পরিচালন ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতির এমন ক্ষণে মানুষের প্রয়োজন ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পুরোদমে ব্যবহার। সে লক্ষ্যেই বিশ্বের প্রযুক্তি নেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) মতো সর্বাধুনিক বা সর্বসাম্প্রতিক খাতে প্রাধান্য বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

ইন্টারেন্ট রেটিইলিংয়ের এক জরিপে দেখা যায়, করোনার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠেছে ৮৫ হাজার নতুন ই-কমার্স ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসা শুরু করলেই তো হবে না। এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যা অন্যদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে টিকে থাকতে পারে। গ্রাহকের পছন্দ-অপছন্দ, জিজ্ঞাসা-উত্তরের তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারে। এ জন্য ই-কমার্স ব্যবসাকে ঘিরে জমে উঠেছে এআইর ব্যবহারও। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আছে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাইরে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোও ফোরআইআর উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকেছে। যেমন- যুক্তরাজ্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করে এআই প্রস্তুতির দিক থেকে শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। একইভাবে এশিয়ার অনেক দেশ এআই এবং রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় রোবটের ব্যবহার অনেক গুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ১০ হাজার কর্মী গড়ে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদনে সক্ষম, ৭৭৪টি রোবট একই পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে পারে। গাড়ি প্রস্তুত করার দিক থেকে আগে থেকেই জাপান শীর্ষস্থানে। তারা এখন এই শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এমন পর্যায়ে ইতোমধ্যেই নিয়ে এসেছে যে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে গাড়ি উৎপাদনের কারখানায় মানুষের সরাসরি উপস্থিতির আর কোনো প্রয়োজন হবে না।

 

ই-কমার্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপশনটি হচ্ছে চ্যাটবুট। ক্রেতা পণ্য কিনতে গেলে তার কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা থাকে। চ্যাটে সেটি যখন-তখন জিজ্ঞাসা করতে পারেন তিনি। কিন্তু ক্রেতাকে তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে না পারলে তিনি হয়তো অন্য সাইট দেখবেন কিংবা মন বদলে ফেলতে পারেন। যেভাবে দোকানি আকর্ষণীয় কথা দিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে, সেভাবে এআই ২৪ ঘণ্টা ক্রেতাকে পণ্য সম্পর্কে আকর্ষণীয় বর্ণনা দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে। এ ছাড়া ক্রেতার এমন কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে যা এআই দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, সেখানেই এআই নিজেই ক্রেতাকে হিউম্যান সাপোর্টের ব্যবস্থা করে দেয়। এতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সুবিধা পেয়ে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের ওপর তার আস্থা বাড়ায়। মাঝেমধ্যে ক্রেতারা পণ্য কেনার জন্য সিলেক্ট করেও ব্যক্তিগত কারণে পণ্য কিনে থাকেন না। এক্ষেত্রে এআই পরে তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, তিনি পণ্যটি পছন্দ করেছেন কিন্তু এখনো কেনেননি।

 

এআইতে যখন এগিয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্ব তখন প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। গুগলে বাঙালি এআই লিখে সার্চ করলে শুরুতেই যে ফলাফল আসে তা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। ২০১৭ সালে বুয়েট, কুয়েট ও ব্র্যাকের কিছু ছাত্রের হাত ধরে শুরু হয় ‘বাঙালি এআই’-এর যাত্রা।  মূলত বাংলা ভাষাভিত্তিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বিশ্বে কোডিং ও রোবোটিং প্রতিযোগিতায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ,  তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে এআইতে বাংলাদেশ অগ্রগামীদের দেশ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর