আজকের পৃথিবীতে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যোগাযোগ, বিনোদন, কাজ সব কিছুই যেন এক মুঠোয়। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বড় সমস্যা অতিরিক্ত স্মার্টফোনে আসক্তি। ঘুমের সময়, কাজের ফাঁকে বা বন্ধুদের সঙ্গে বসেও আমরা ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও রিল বা গেম অ্যাপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যে, এগুলো আমাদের মনোযোগ ধরে রাখে এবং ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা তৈরি করে। তবে সুখবর হলো, কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে ফোনের প্রতি এই নির্ভরতা কমানো সম্ভব। জেনে নিন স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু কার্যকর উপায়
অ্যাপগুলো ডিলিট করুন
অতিরিক্ত সময় নষ্টের প্রধান কারণ যে অ্যাপগুলো, সেগুলো মুছে ফেলাই প্রথম সহজ পদক্ষেপ হতে পারে। যেমন : ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা এক্স (আগের টুইটার) সেগুলো ফোন থেকে মুছে ফেলার মাধ্যমেই শুরু করতে পারেন। এতে প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও আপনি সময়ের মূল্য বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় অ্যাপটি সাময়িকভাবে ইনস্টল করে নিন, পরে আবার মুছে ফেলুন। এই ছোট্ট ‘বাধা’ আপনার অজান্তেই স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনবে।
বিল্ট-ইন স্ক্রিন টাইম ব্যবহার করুন
প্রায় সব স্মার্টফোনেই এখন স্ক্রিন টাইম বা ডিজিটাল ওয়েলবিইং ফিচার রয়েছে। এই টুলগুলো ব্যবহার করে নিজের বা সন্তানের ফোন ব্যবহারের সময় সীমিত করতে পারেন।
আইফোনের স্ক্রিন টাইম :
সেটিংস থেকে ‘স্ক্রিন টাইন’ (Screen Time) অপশন চালু করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য Downtime নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ফোনের বেশির ভাগ অ্যাপ বন্ধ থাকবে। চাইলে ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবের মতো অ্যাপে দৈনিক ব্যবহারের সময়সীমা ঠিক করে দিতে পারেন।
অ্যান্ড্রয়েডের ডিজিটাল ওয়েলবিইং :
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা স্ক্রিন টাইম মনিটর করার পাশাপাশি নোটিফিকেশন লুকিয়ে রাখতে বা অফিস-ব্যক্তিগত কাজ আলাদা করতে পারেন। ফলে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা বার্তায় আপনার মনোযোগ নষ্ট হবে না।
ফোনকে কম আকর্ষণীয় করে তুলুন
নোটিফিকেশন সাইলেন্স করুন : আইফোনের Focus Mode বা অ্যান্ড্রয়েডের অনুরূপ মোড চালু করুন, যাতে নির্দিষ্ট সময়ে সব নোটিফিকেশন বন্ধ থাকে।
ডিসপ্লে ধূসর করুন : রঙিন স্ক্রিন আমাদের চোখে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। তাই আপনার ফোনকে Grayscale মোডে রাখলে স্ক্রল করার আগ্রহ অনেকটাই কমে যাবে।
Heads Up ফিচার : হাঁটার সময় ফোনে মনোযোগ দিলে অ্যান্ড্রয়েডের এই ফিচার সতর্কবার্তা দেয় এটি চালু রাখলে বাস্তব জীবনে মনোযোগ ফিরবে।
থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করুন
যদি ফোনের বিল্ট-ইন কন্ট্রোল যথেষ্ট না হয়, তাহলে কিছু সহায়ক অ্যাপ ব্যবহার করুন
Opal, Jomo, Forest, Roots কিংবা LockMeOut এর মতো অ্যাপ নির্দিষ্ট অ্যাপে প্রবেশ বন্ধ বা স্ক্রিন টাইম সীমিত করে দেয়।
Forest অ্যাপটি উদাহরণস্বরূপ গাছ লাগানোর মতো গেমিফাইড পদ্ধতিতে কাজ করে। ফোন ব্যবহার না করলে গাছ বড় হয় ব্যবহার করলে শুকিয়ে যায়। এতে ফোন দূরে রাখতে ব্যবহারকারীরা অনুপ্রাণিত হন।
বাহ্যিক হার্ডওয়্যার ব্যবহার করুন
সবাই সফটওয়্যার-নির্ভর সমাধান পছন্দ করেন না। এজন্য কিছু স্টার্টআপ এমন ডিভাইস তৈরি করেছে যা আপনার ফোন ব্যবহারে শারীরিক বাধা তৈরি করে। Unpluq, Brick এবং Blok এর মতো ডিভাইস ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট অ্যাপ খুলতে আগে ফোন স্ক্যান করতে হয় যা সহজভাবে বাইপাস করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া বাজারে এখন ফোন লক-বক্স বা Yondr পাউচ পাওয়া যায়, যা কনসার্ট বা স্কুলে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনই বাড়িতেও ফোন দূরে রাখতে অনেক বেশি কার্যকর।
মানসিক কারণ চিহ্নিত করুন
অনেক সময় অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের পেছনে থাকে গভীর মানসিক কারণ উদ্বেগ, একাকিত্ব, হতাশা বা আত্মসম্মানবোধের অভাব। ফোন তখন এক ধরনের মানসিক আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে পেশাদার সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আজকাল অনেক থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলিং সেন্টার রয়েছে যারা ডিজিটাল আসক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা নিয়ে কাজ করছেন। থেরাপি শুধু স্ক্রিন টাইম কমায় না, বরং তার অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে।
প্রয়োজন হলে ডাউনগ্রেড করুন
একটি বেসিক ফোনে ফিরে যাওয়া সবচেয়ে কঠিন, তবে সবচেয়ে কার্যকর সমাধানও বটে। এই ফোনে থাকে না সোশ্যাল মিডিয়া, গেম বা ভিডিও অ্যাপশুধুমাত্র কল, এসএমএস এবং হয়তো একটুখানি ইন্টারনেট। যদিও এতে Google Maps বা ব্যাংকিং অ্যাপের মতো প্রয়োজনীয় কিছু সুবিধা হারাতে পারেন, কিন্তু বিনিময়ে ফিরে পাবেন মনোযোগ, শান্তি ও বাস্তব জীবনের সময়।
আজকের বিশ্বে স্মার্টফোন পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব নয় কারণ, এটি আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু এর ব্যবহারকে সচেতন ও সীমিত করা আমাদের হাতে। স্ক্রিন টাইম কমানো মানে শুধু ফোন থেকে দূরে থাকা নয়, বরং নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি এবং বাস্তব জীবনে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা।

ডিজিটাল আসক্তি রোধ
জকাল স্মার্টফোন আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে, কিন্তু কখন যেন এটি সময় নষ্ট করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। হাতে ফোন না থাকলে এক ধরনের অস্বস্তিÑএই ‘ডিজিটাল আসক্তি’ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন
কিছু কার্যকরী কৌশল ...
প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো ‘নোটিফিকেশন ম্যানেজমেন্ট’। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন ...
দ্বিতীয়ত, ‘স্ক্রিনমুক্ত জোন’ তৈরি করুন। রাতে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোনটি অন্য ঘরে বা নাগালের বাইরে রেখে দিন ...
তথ্যসূত্র : অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)