চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমজুড়ে পরিচালিত হতো মশক নিধন কর্মসূচি। সঙ্গে ওয়ার্ডের অলিতে গলিতে করা হতো স্প্রে। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই চলছে না এ কর্মসূচি। ফরে বাড়ছে এডিস মশা, আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগে।
গত ২ জুলাই চসিক ডেঙ্গু নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভা করেছিল। সেখানে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। তবে গত রবিবার থেকে চসিক পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা শুরু করে। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। কার্যত এরপর থেকে চসিক মেয়র এবং অধিকাংশ কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসছেন না। এ কারণে চসিকের অনেক কাজেই স্থবিরতা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থবির হয়ে আছে মশক নিধন কর্মসূচি। স্প্রে না করায় এডিস মশা উৎপাদন হচ্ছে। সঙ্গে পরিষ্কার অভিযান না চলায় প্রজনন স্থানগুলোতে জন্মেছে মশা। চসিকে বর্তমানে ফগার মেশিন আছে ১৫০টি এবং স্প্রে মেশিন আছে ২৪০টির বেশি।
চসিকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে টানা কয়েকদিন চসিকের প্রধান কার্যালয় বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহে অফিস চললেও উপস্থিতির হার কম ছিল। এসব কারণে মশক নিধন কার্যক্রমেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি বলেন, আমরা গত রবিবার থেকে নতুন পরিকল্পনায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করি। প্রতিদিন দুটি করে ড্রেনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চসিকের পাঁচজন কর্মকর্তা এ কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। এই প্রোগ্রামে বিশেষ দল দুভাগে বিভক্ত হয়ে এবং উক্ত ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট বাকি দুটি ওয়ার্ড থেকে ৫০ জন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী যোগদান করবেন। সংশ্লিষ্ট জোন কর্মকর্তা বিষয়টি তদারকি করবেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত হয় ২৫ জন, মার্চে আক্রান্ত হয় ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৭ জন, জুন মাসে ৪১ জন, জুলাই মাসে ১৯৮ জন এবং আগস্ট মাসের গত ১৭ দিনে আক্রান্ত হয় ৯৫ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত হন ৪৯১ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ২৬২ জন, মহিলা ১১৮ ও শিশু ১০৫ জন। চলতি বছর মারা যান চারজন। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২৩ সালে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন এবং মারা যান ১০৭ জন। ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং মারা যান ৪১ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যান ৫ জন। প্রতি বছরেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।