বাঙালিয়ানায় শাড়ি অনন্য। কেননা সেলাইবিহীন পরিধেয় এই বস্ত্রটি আজও বাঙালি নারীর পছন্দের পোশাক; যা এখনো টিকে আছে বিচিত্র পরিচয়, রং আর কারুকাজে...
সংস্কৃত ‘শটী’ থেকে শাড়ি শব্দের উদ্ভব। এই বস্ত্রের উৎসের সন্ধান পাওয়া যায় পুরনো লেখমালা, মূর্তি, বিগ্রহ, স্থাপত্য, পোড়ামাটির শিল্প এবং এমনকি সাহিত্য-উপাদানে। তবে আকৃতি যেমনই হোক- বাঙালি নারীর পরিধেয় বস্ত্রটির নামেরও আছে নানা বৈচিত্র্য। এমনকি শাড়ির পাড়ে, জমিনে, আঁচলে কারুকাজের ধরনের জন্য পরিধেয়টির স্বাতন্ত্র্য লক্ষণীয়।
নারীদের সারা দিন কাজের অন্ত নেই! নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারী আজ ঘরের বাইরে শুধু পা রাখেননি, সেই সঙ্গে রাখছেন সফলতার শিখরে পদচিহ্ন। এসব সফল নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম সঙ্গী ১২ হাতের শাড়ি। যারা এই সময়ে বাড়ি থেকেই অফিস করছেন তাদের কাজের মধ্যে আবশ্যিকভাবেই চলে আসে ভিডিও কনফারেন্স কিংবা অনলাইন মিটিং। অফিসের পরিবর্তে বাসায় বসে কাজটি করতে হলেও তার জন্যও তো চাই পরিপাটি থাকা। যারা এমন মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা বেছে নিতে পারেন সুতি বা শিফনের কোনো শাড়ি। খুব জমকালো না হলেই ভালো। তবে সঙ্গে মানিয়ে হালকা সাজের কথা ভুলবেন না। নিঃসন্দেহে বাড়তি ইম্প্রেশন দেবে।
ঘরের কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় পার করছেন। ধোয়া কাপড় নিয়ে ছুটছেন ছাদ কিংবা বারান্দায়। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, নিজের জন্য একটু সময় বের করে নিন। তাতে নিজেকে সময় দেওয়াও হবে, পাশাপাশি মনও থাকবে উৎফুল্ল। কারণ, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো এই জীবনে সত্যি জরুরি। আর কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ে নানা কারণে বন্দি মন থাকছে বিক্ষিপ্ত। আকাশের নিচে খোলা ছাদে একলা সময়, খারাপ লাগবে না। কিংবা বসে পড়ুন গিটার বা হারমোনিয়াম নিয়ে। নিজের মনে গেয়ে ফেলুন পছন্দের কোনো গান। চাইলে ভিডিও করে ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে আপলোডও করে দিতে পারেন। শাড়িতে কমনীয় আপনার সঙ্গে গান হবে ভিউয়ারদের জন্য বাড়তি পাওনা।
বিয়ের পর থেকে সেই শাড়িটি পরা হয়নি। প্রায়ই ভাবেন একবার পরবেন। কিন্তু সে সময়টি আর মেলে না। চলছে লকডাউন। ঘরেই তো আছেন। কোয়ারেন্টাইনের সময় বের করে নিন শাড়িটি। ভাঁজ খুলে নেড়েচেড়ে খানিক স্মৃতি রোমন্থন করে আবার তুলে রেখেছেন সযতনে। এবার চাইলে সেই শাড়িটি পরিধান করে আপনার সঙ্গীকে চমকে দিন। পুরনো রোমান্স আবারও নতুন করে জেগে উঠবে। এ ছাড়া এক সন্ধ্যায় ইচ্ছা করেই রান্না করে নিন সঙ্গীর পছন্দের খাবার। দুজনে মিলে কিছু সময় সুন্দর কাটাতে পারেন। আর হালকা মেকআপ এবং চুলের আলতো বাঁধন আপনাকে এক্সট্রা লুক দেবে।
আজকাল আনুষ্ঠানিকতা মেনে শাড়ির বিশেষ রং ও ধরনের বস্ত্রের ব্যবহার ফিরে এসেছে। যেমন- গায়েহলুদ, একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা ফাল্গুন ও বৈশাখ। যদিও বিয়েতে নির্দিষ্ট রঙের শাড়ি পরার কোনো নিয়ম নেই, বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা সেখানে রয়েছে। তবে লক্ষ্য থাকে পরিধেয়টি যেন জমকালো নকশার হয়। একসময় বিয়ের শাড়ি মানেই ছিল টিস্যু, কাতান, জামদানি, বেনারসি, শিফনের ওপর ঘন জরির কাজ। এখন কনের জন্য চিরায়ত ‘বেনারসি’ও অপরিহার্য নয়। অবশ্য কাতান বা বেনারসির আধিপত্য এখনো টিকে আছে। আগের সেই ভারী কাপড়ের পরিবর্তে সেসবের স্থান দখল করেছে ওজনে হালকা, বৈচিত্র্যময় রং এবং সমকালীন নকশার নানান শাড়ি।
বাঙালি নারীরা শাড়ির পাশাপাশি কুর্তি-কামিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীকে সম্পূর্ণ করপোরেট সাজে সেজে উঠতে হয়। যদিও বাঙালি নারীর চিরন্তন শাড়ির সৌন্দর্য এমন সব ওয়েস্ট বা মিশ্র কালচারে ফুটে ওঠে না। শাড়ি পরলে চেষ্টা করুন এক রঙের পরিধান করার। অর্থাৎ এসব অনুষ্ঠানে প্রিন্টের কাপড় না পরাই ভালো। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। উজ্জ্বল বা শকিং কোনো রঙের পোশাক না পরাই উত্তম। শাড়ি পরলে ব্লাউজের কাটের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে শাড়ির ওপর ব্লেজার পরতে পারেন।
লেখা : ফেরদৌস আরা