সদ্য কারামুক্ত বিএনপির নেতারা চুপসে গেছেন। সভা-সমাবেশে দেখা মিলছে না তাদের। বাসাবাড়িতে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই। আইন পেশায় যুক্ত থাকায় অনেকের দেখা মিলছে সুপ্রিমকোর্টে। তবে সেখানেও তারা রাজনীতি কিছুটা এড়িয়ে চলছেন। যোগাযোগ করা হলে কোনো কোনো নেতা বলছেন, দীর্ঘ সময় জেলে থাকায় শারীরিকভাবে অসুস্থ তারা। তাই শারীরিক বিশ্রাম ও চিকিৎসার জন্য কিছু দিনের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করছেন।
তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মন্তব্য হলো, কারাগারে থাকাবস্থায় সরকার পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হতে পারে এসব নেতাকে। সরকারবিরোধী কঠোর সমালোচনা না করার জন্য হয়তো কোনো নির্দেশনা থাকতে পারে। নইলে গ্রেফতারের আগে যারা সকালে-বিকালে সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দিতেন এখন তারা নিশ্চুপ কেন?
বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে সদ্য কারামুক্তি লাভ করা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
গত ৮ নভেম্বর রাতে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এ ছাড়া গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রায় তিন মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি একই দিনে জামিনে মুক্তি পান ব্যারিস্টার মওদুদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন। মুক্তির প্রায় এক মাসেও কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি ব্যারিস্টার মওদুদকে। জাতীয় প্রেসক্লাবে যিনি নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন সেখানেও অনুপস্থিত তিনি।
তবে ব্যারিস্টার মওদুদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, গুলশানের নিজ বাড়ি সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় চিন্তিত ব্যারিস্টার মওদুদ। তিনি এ নিয়ে খুব ব্যস্ত। তা ছাড়া দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগের পর শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে যাওয়া আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। অবশ্য বেশ কয়েক দিন পর গতকাল তাকে বিএনপির এক কর্মসূচিতে দেখা গেছে। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ব্যারিস্টার মওদুদের ব্যক্তিগত সহকারী শহীদুল ইসলাম শহীদ জানান, স্যার ব্যস্ত আছেন। কেমন আছেন স্যার? জানতে চাইলে তিনি জানান, সুস্থ আছেন, তবে আইন-আদালত নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিয়মিত চেম্বারেও যাচ্ছেন। কোনো কর্মসূচি না থাকলে গুলশান কিংবা প্রেসক্লাবে যান না স্যার।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। গ্রেফতারের আগে সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। কিন্তু কারামুক্তির পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কম-বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে তিনিও নীরব। এখন আর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী নেতাদের বিরুদ্ধে আগের মতো সমালোচনা করতে দেখা যায় না তাকে।
সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ারকে কারামুক্তির পর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কারামুক্তির পর অনেক নেতা মাজারে গেলেও তাকে দেখা যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ওয়ান-ইলেভেনে দলের পরীক্ষিত নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আ স ম হান্নান শাহও দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে এখন অনিয়মিত। মাঝে-মধ্যে কিছু সংগঠনের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও সরকারবিরোধী বক্তব্য কমে গেছে। গ্রেফতারের আগে তিনিও সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচক ছিলেন। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তিনি।
গত ৪ ডিসেম্বর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন সাদেক হোসেন খোকা। প্রায় আড়াই মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে ছাড়া পান ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। গ্রেফতারের আগে সরকারের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক ছিলেন বিএনপির এই নেতা। এক কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসমাগম নিশ্চিত করতে আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রয়োজনে 'দা-কুড়াল' নিয়ে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন খোকা। কারামুক্তির পর তার জোরালো কোনো বক্তব্য নেই গণমাধ্যমে। বিএনপির কর্মসূচিতেও তার দেখা কম মিলছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গ্রেফতার হন মেজর (অব.) হাফিজ। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর ১৯ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এর পর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে।
১৬ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে আত্দসমর্পণ করলে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে। ৪ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। এর পর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে। একই অবস্থা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের। এক মাস কারাভোগের পর ৬ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেলেও বিএনপির কর্মসূচিতে অনুপস্থিত তিনি।