ল্যাটিন শব্দ ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ মানে হচ্ছে ‘তরবারিওয়ালা মানব’ যার উৎপত্তি ‘গ্ল্যাডিয়াস’ বা ‘সোর্ড’ অর্থাৎ তরবারি থেকে। গ্ল্যাডিয়েটর হচ্ছেন এমন একজন অস্ত্রধারী যোদ্ধা যিনি অন্য কোনো গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে লড়াই করে সাধারণ মানুষ ও রাজাদের আনন্দ দেন। এটি মূলত রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রাচীন রীতি। এই রীতি অনুসারে গ্ল্যাডিয়েটররা হাজার হাজার দর্শকের সামনে কেবল অন্য যোদ্ধার সঙ্গেই লড়াই করতেন এমন নয়, এর বাইরেও দাগি আসামি কিংবা হিংস্র বন্যপ্রাণীদের সঙ্গেও লড়াই করতেন। ইতিহাসের মহাতারকা এই গ্ল্যাডিয়েটরদের নিয়ে আজকের রকমারি—
গ্ল্যাডিয়েটররা ছিল প্রাচীন পৃথিবীর মহাতারকা
গ্ল্যাডিয়েটরের নাম শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে উঠে খাঁচার ভিতর একদল মানুষ আর পশুর মধ্যকার যুদ্ধ কিংবা খোলা ময়দানে মানুষে মানুষে পরস্পর ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এ নিয়ে বেশকিছু চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র মনে হয় হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা রাসেল ক্রো’র গ্ল্যাডিয়েটর। একটি হিংস্র বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ, মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ ইত্যাদি দেখানো হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধে হার মানেই মৃত্যু। খুবই ভয়ানক সেই মৃত্যু। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সাহসী এই যোদ্ধারা লড়াই করত অপর যোদ্ধা, হিংস্র প্রাণী এবং ভয়ঙ্কর সব অপরাধীর সঙ্গে। রোমান সাম্রাজ্যে এই যোদ্ধাদের খুবই কদরও ছিল। কারণ সাধারণ মানুষের এবং তৎকালীন রোমান সম্রাটদের বিনোদন দিতেই আয়োজন করা হতো এই লড়াই। ঠিক যেমন আজকের আধুনিক সময়ের রেসলিং। কিন্তু রেসলিং যেটা হয় তা পূর্ব পরিকল্পিত, স্ক্রিপ্টেট। কিন্তু সেই সময়ের লড়াই ছিল সত্যি। সেখানে মৃত্যু মানে মৃত্যু। রক্ত মানে সত্যিকারের রক্ত। লড়াই চলত মৃত্যু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। গ্ল্যাডিয়েটররা তাদের সম্মুখ মৃত্যুকে মেনে নিয়েই লড়াইয়ে নামত। যারা বেশি শক্তিশালী এবং জয়ী হতো তারা হয়ে যেত সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্ল্যাডিয়েটর। কিন্তু সমাজ তাদের পৃথক করে রেখেছিল আইনি ও সামাজিক দিকে থেকে। রোমান সাম্রাজ্যের এই সাহসী বীর যোদ্ধাদের নিয়ে অনেক সত্য মিথ্যা মিথ বা কাল্পনিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। গ্ল্যাডিয়েটররা নিয়মিত জীবন ও মৃত্যুর সম্মুখীন হতো। একজন গ্ল্যাডিয়েটর অপরজনকে মেরে ফেলত নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। কিছু গ্ল্যাডিয়েটর তাদের ভ্রাতৃত্ব বোধ থেকে একটি ইউনিয়ন বা কলেজিয়া গঠন করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো যোদ্ধা পরাজিত হলে এই ইউনিয়ন নিশ্চিত করত যে, পরাজিত যোদ্ধার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যেন যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে করা হয় এবং তার অর্জনগুলো কবরে খোদাই করে দেওয়া হয়। যোদ্ধার কোনো স্ত্রী সন্তান থাকলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করাও হতো।
স্যামনাইটরা ছিল ইতিহাসের একদম শুরুর দিককার গ্ল্যাডিয়েটর। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রোমানদের কাছে স্যামনিয়ামের পরাজয় ঘটলে রোমে আগমন ঘটে তাদের। রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসা গোত্রগুলো থেকে ধরে আনা লোকদের সঙ্গে লড়াই হতো স্যামনাইটদের। এ থেকেই গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধের শুরু। সাধারণত গ্ল্যাডিয়াস, স্টুটাম, অক্রিয়া এবং পালকশোভিত হেলমেট থাকত স্যামনাইটদের সঙ্গে। এ ছাড়া আর্ম গার্ড ও লেগ প্যাড তো থাকতই। অন্যান্য গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো অনেক রোমান সম্রাটও নিজেকে গ্ল্যাডিটোরিয়াল গ্রাউন্ডে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। গ্ল্যাডিয়েটর লড়াইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে জনগণের বিনোদনের ব্যবস্থা করে নিজেদেরও জনপ্রিয় করে তুলতেন রোমান সম্রাটরা। অনেক সম্রাটই সত্যি সত্যি নিজেকে লড়াইয়ের মঞ্চে নিয়ে গেছেন।
গ্ল্যাডিয়েটররা নানা জাতিতে বিভক্ত ছিল
অধিকাংশ গ্ল্যাডিয়েটর দাস হলেও এই ইউনিয়নের দ্বারা তারা সংঘবদ্ধ হয়েছিল।
যদিও গ্ল্যাডিয়েটরদের তাদের সমাজ তেমন সম্মান দিত না। কিন্তু তারা অনেক খ্যাতি অর্জন করেছিল ঠিকই। তাদের ছবি বিভিন্ন স্থানে ঝুলানো থাকত। বাচ্চারা তাদের অর্জনগুলোর সংখ্যা নিয়ে খেলত। এমনকি আজকের আধুনিক যুগের মতো তারা পণ্যের প্রচার করত এবং আধুনিক যুগের মতোই তখন মেয়েরা গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রেমে হাবুডুবু খেত।
হরেক রকম গ্ল্যাডিয়েটর দাপিয়ে বেড়িয়েছে প্রাচীন রোমে। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, বর্মের নমুনা আর পারিপার্শ্বিক দৈনন্দিন অবস্থার বিচারে গ্ল্যাডিয়েটররা নানা ভাগে বিভক্ত ছিল। এমনই একটি গ্ল্যাডিয়েটর জাতি ‘বেস্টিয়ারি’। এই নামকরণের কারণ প্রাচীন রোমে অন্য গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো বেস্টিয়ারিরা মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হতো না। এরা হিংস্র পশুদের সঙ্গে লড়াই করত! আর বিস্ট মানে হচ্ছে পশু। তাই এই নামকরণ। নিজেদের ধন-দৌলতের প্রদর্শন ও জনতার সামনে বাহবা কুড়োনোর জন্য এককালে রোমের অ্যাম্ফিথিয়েটার ও কলোসিয়ামগুলোতে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে ধরে আনা বাঘ, ভালুক, সিংহ কিংবা হাতির সঙ্গে মানুষের লড়াইয়ের আয়োজন করতেন তৎকালীন রোমান সম্রাট ও সিনেটররা। আর দুর্ভাগা সেই মানুষদেরই বলা হতো বেস্টিয়ারি। তাদের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন কারপোফোরাস। বীরত্বের অসাধারণ নজির স্থাপন করে খালি হাতে তিনি ২০টি প্রাণীকে পরাস্ত করেছিলেন। গ্ল্যাডিয়েটরদের আরকটি দল হচ্ছে নক্সি। রোমান ইতিহাসে নক্সিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা নীচ জাতির। তখন মানুষজন তাদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করতে চাইত না। দুর্ভাগা এ নক্সিদের মাঝে ছিল খ্রিস্টান, ইহুদি, সেনাবাহিনী ত্যাগ করা কোনো সেনা, বিদ্রোহী ও খুনিরা। নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে দর্শকদের আনন্দ দেওয়াই ছিল তাদের একমাত্র নিয়তি। তাদের এরেনায় ছেড়ে দেওয়া হতো তীরন্দাজদের সামনে। কখনো নক্সিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আসত ঘোড়সওয়ারের দল। কখনো আবার তাদের এমন হেলমেট পরিয়ে দেওয়া হতো যাতে চোখের জায়গাটাও থাকত বন্ধ। ফলে দর্শকরা যেভাবে বলত, সেভাবেই চলতে চলতে মারা যেত এই হতভাগারা। আরেক ধরনের গ্ল্যাডিয়েটর হলো রিটায়ারিয়াস। তাদের সাজসজ্জা হতো অনেকটা জেলেদের মতো। প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সময় তাদের হাতে থাকত জাল, ত্রিশূল এবং পুজি ইত্যাদি। রোমান সেনাদের মতো সজ্জিত গ্ল্যাডিয়েটরদের বলা হতো প্রোভোকেটর। গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকত অন্য আরেকজন প্রোভোকেটর।
তাদের বিশেষত্ব হলো প্রোভোকেটররা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ সিলেক্ট করে নিত।
ভয়ানক থাম্বস ডাউন
থাম্বস ডাউন মানেই হেরে যাওয়া গ্ল্যাডিয়েটরের নিশ্চিত মৃত্যু। যখন কোনো গ্ল্যাডিয়েটর মারাত্মক আহত হয়ে যেত এবং সে তার অস্ত্র নিচের দিকে ফেলে দিয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিত, সে সময় দর্শকরা তার ভাগ্য নির্ধারণ করত। আর যদি কলিসিয়ামের মধ্যে সম্রাটের উপস্থিতিতে খেলাটি হতো তাহলে সম্রাট যা বলতেন তাই করা হতো হেরে যাওয়া গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে। যদি সম্রাট থাম্বস ডাউন বা বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচের দিকে নির্দেশ করতেন তাহলে ওই যোদ্ধাকে মেরে ফেলা হতো। মতান্তরে অনেক ঐতিহাসিকের ধারণা অনুযায়ী সম্রাট যদি দুই হাত প্রসারিত করে থাম্বস আপ করতেন তবে সেই যোদ্ধার মৃত্যু অবধারিত হতো। আবার সাদা রুমাল নাড়ানো হলে সেই গ্ল্যাডিয়েটর মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যেত। তবে যোদ্ধাকে মেরে ফেলা হবে না। আর যদি তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হতো তাহলে বিজয়ী গ্ল্যাডিয়েটর তার বিপক্ষ প্রতিযোগীর দেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলত। গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধারা সব সময় মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে লড়াই করত না কিংবা সব ম্যাচেই একজনের মৃত্যু ঘটতে হবে এমনটা ছাড়াও ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এসব মেয়ে নিজের ইচ্ছায় এই যুদ্ধে নাম লিখিয়েছিল।
খ্যাতিমান কয়েকজন গ্ল্যাডিয়েটর
স্পার্টাকাস
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটর মানা হয় স্পার্টাকাসকে। তবে তার জীবনের শুরুটা বেশ ঘটনাবহুল। একজন বীর গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে দারিদ্র্যের জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। সাধারণ সৈনিকের জীবন তো বটেই, বন্দী হয়ে তাকে শেষ পর্যন্ত দাসত্ব বরণ করে নিতে হয়েছিল। আর সে দাসত্ব থেকেই গ্ল্যাডিয়েটর স্পার্টাকাসের জন্ম। গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন থ্রাসিয়ান সৈনিক এবং যাকে রোমান সৈন্যরা বন্দী করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। লেনটুলোস বাটাইটাস নামের এক লোক তৎকালে ক্যাপুয়া নামের একটি গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল পরিচালনা করতেন। তিনিই সর্বপ্রথম স্পার্টাকাসের ভিতর একজন গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার অমিত সম্ভাবনা খুঁজে পান। পাকা জুহুরি ছিলেন বাটাইটাস। তিনি স্পার্টাকাসকে গ্ল্যাডিয়েটর বানানোর অভিপ্রায়ে চড়া দামে কিনে নিলেন। শুরু হলো সৈনিক স্পার্টাকাসের নতুন জীবন। গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে স্পার্টাকাস খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার সম্পূর্ণ শিক্ষালাভ করলেন। ক্রমেই স্পার্টাকাস একজন বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটর হয়ে উঠেন এবং অনেক যুদ্ধ জয় করেন। কথা ছিল বাটাইটাস একটা সময় পর তাকে স্বাধীন করে দেবেন। কিন্তু প্রতারণার শিকার হন স্পার্টাকাস। বাটাইটাস তাকে স্বাধীনতা দিতে চেয়েও প্রতারণা করেন। ৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্পার্টাকাস তার ৭০ গ্ল্যাডিয়েটরকে সঙ্গে নিয়ে বাটাইটাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই দাস-বিদ্রোহে বাটাইটাস খুন হন। আর ওই সময়ই অনেক ক্রীতদাস মুক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে একটি বড় ও শক্তিশালী বাহিনীর সৃষ্টি হয়। অচিরেই তারা ৭০ হাজার দাসের একটি বাহিনীতে পরিণত হয়। ৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পুরো শীতকাল গ্ল্যাডিয়েটর ও দাসরা প্রশিক্ষণে ব্যয় করে। এরপর বাধে যুদ্ধ। রোমান বাহিনী ও গ্ল্যাডিয়েটর-দাসদের এই যুদ্ধ তৃতীয় সারভিল ওয়ার হিসেবে এখন পরিচিত। স্পার্টাকাসকে হত্যার জন্য অনেক বাহিনী পাঠানো হয় কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটররা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহজেই তাদের পরাজিত করে। ৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, মারকুস ক্রেসুস ৫০ হাজার উন্নত প্রশিক্ষিত রোমান সৈন্য নিয়ে স্পার্টাকাসের বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং ক্রেসুস দক্ষিণ ইতালিতে স্পার্টাকাসকে আটক করেন। শেষ পর্যন্ত বন্দী স্পার্টাকাসকে হত্যা করা হয়। তার অনুগামীদের ছয় হাজার বন্দী হয় এবং পরে তাদের ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের মৃতদেহ দিয়ে কেপুয়া থেকে রোম পর্যন্ত রাস্তার ধারে লাইন তৈরি করা হয়েছিল। ২০০০ সালে এ সত্য ঘটনার অবলম্বনে রাসেল ক্রো অভিনীত মুভি গ্ল্যাডিয়েটর নির্মিত হয়।
ফ্ল্যামমা
ফ্ল্যামমা ছিলেন মূলত একজন সিরিয়ান গোলাম বা ক্রীতদাস। কিন্তু ইতিহাসে তার খ্যাতি একজন বীর যোদ্ধা হিসেবেই। মাত্র ৩০ বছর বয়সে মারা গেলেও গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে তার রয়েছে অসাধারণ রেকর্ড। ৩০ বছরের ছোট্ট জীবনে গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে তিনি ৩৪টি যুদ্ধ করেন। যার ভিতর ২১টিতে জয়লাভ, ৯টি ড্র হয় এবং পরাজিত হন মাত্র চারটিতে। এর ভিতর তিনি চারবার রুডিস লাভ করেন। যখন একজন গ্ল্যাডিয়েটরকে রুডিস দেওয়া হয় তার মানে সেই গ্ল্যাডিয়েটর আর কারও গোলাম নয়। সে অন্যান্য রোমানবাসীর সঙ্গে বাকি জীবন বসবাস করতে পারবে। কিন্তু ফ্ল্যামমা এই রুডিস নিতে অস্বীকার করেন। তাই তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে ফাইট করে গেছেন।
ক্রিক্সাস
ইতিহাসের আরেক বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটরের নাম ক্রিক্সাস। তিনি ছিলেন মূলত একজন গ্যাললিক গ্ল্যাডিয়েটর। ক্রিক্সাসের ডমিনস বা মালিকের স্ত্রীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ক্রিক্সাস ভালোবাসত এক চাকরানিকে। এই চাকরানিকে ক্রিক্সাসের মালিক অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ক্রিক্সাস একটি দাস বিদ্রোহে যুদ্ধ করে এবং গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল থেকে পালায়। পরে বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে তার মতপার্থক্য ঘটে এবং তিনি একটি সেনাদল গঠন করে ইতালি ধ্বংস করতে অগ্রসর হন। কিন্তু তার এই জীবনের জন্য দায়ীদের প্রতিশোধ নেওয়ার আগেই তিনি রোমান সৈন্যদের হাতে নিহত হন।
মারকুস এটিলাস
ইতিহাসের অধিকাংশ গ্ল্যাডিয়েটরই রোমান নাগরিকত্বের বাইরে ছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিনে আনা দাসদের গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে প্রবেশ করানো হতো। কিন্তু মারকুস এটিলাস এক্ষেত্রে একেবারেই আলাদা। তার বীরত্বগাথা ২০০৭ সালে আবিষ্কৃত হয় যা গ্রাফিটিতে বর্ণিত ছিল।
এটিলাস যদিও জন্মসূত্রে একজন রোমান নাগরিক ছিলেন, তবু তিনি গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে প্রবেশ করতে বাধ্য হন তার জীবনের খরুচে স্বভাবের জন্য। খরুচে স্বভাবের কারণে ব্যক্তিগত জীবনে এটিলাস ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন। আর সেই ঋণ থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে একজন গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে গড়ে তোলেন এটিলাস।