শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতিহাসের সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী

সাইফ ইমন

ইতিহাসের সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী

চিকিৎসাবিজ্ঞান বা চিকিৎসাশাস্ত্র হলো রোগ উপশমের বিজ্ঞান, কলা বা শৈলী। মানবশরীর এবং মানবস্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করা এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস মানব ইতিহাসের মতো প্রাচীন। সুদূর অতীতে মানব প্রজাতির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসাবিদ্যাও বিকশিত হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের হাত ধরে। ইতিহাসের সেরা কয়েকজন চিকিৎসাবিজ্ঞানীকে নিয়ে আজকের রকমারি... 

 

 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক

৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বোখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক আবু আলী সিনা। ইতিহাসের অত্যন্ত গুণী ব্যক্তি ইবনে সিনা। তার পুরো নাম আবু আলী হোসাইন ইবনে আবদুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। তাকে বলা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক। ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিজ্ঞজনেরা এই মহৎপ্রাণ দার্শনিককে তাদের জাতীয় জ্ঞানবীর হিসেবে দাবি করে। পুরো নাম আবু আলী ইবনে সিনা। জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি বাস করতেন উজবেকিস্তানের বিখ্যাত শহর বোখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে লুকিয়ে ছিল অসামান্য মেধা ও প্রতিভা। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে ফেলেন। তার তিনজন গৃহশিক্ষক ছিলেন। তাদের মধ্যে ইসমাইল সুফি তাকে শিক্ষা দিতেন ধর্মতত্ত্ব, ফিকাহশাস্ত্র আর তাফসির। মাহমুদ মসসাহ শিক্ষা দিতেন গণিতশাস্ত্র এবং বিখ্যাত দার্শনিক আল না তেলি শিক্ষা দিতেন দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি, টলেমির আল মাজেস্ট, জাওয়াহির মানতিক প্রভৃতি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রভূত জ্ঞান তিনি লাভ করে ফেলেন। বিখ্যাত এই দার্শনিকের কাছে এমন কোনো জ্ঞান আর অবশিষ্ট ছিল না, যা তিনি ইবনে সিনাকে শিক্ষা দিতে পারবেন। এরপর ইবনে সিনা নিজেই নিজের শিক্ষক বনে যান। এ সময় চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে তার মৌলিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। অ্যারিস্টটলের দর্শন সম্পূর্ণ ধাতস্থ করেন এ সময়েই। নতুন বই না পেয়ে আগের বইগুলোই আবার পড়তে লাগলেন। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়তে আসত। তরুণ বয়সেই তিনি এবার শিক্ষকতা শুরু করেন। এবার তিনি চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কিত কিতাব সংগ্রহ করে গবেষণা করতে শুরু করেন। ইবনে সিনা তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এমন বহু দিনরাত অতিবাহিত হয়েছে যার মধ্যে তিনি ক্ষণিকের জন্যও ঘুমাননি। কেবল জ্ঞান সাধনার মধ্যেই ছিল তার মনোনিবেশ। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি গবেষণা করতেন। ক্লান্তিতে যখন ঘুমিয়ে পড়তেন তখন অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো স্বপ্নের ন্যায় তার মনের মধ্যে চলে আসত। জ্ঞানের দরজা যেন খুলে যেত। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠেই সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়ে যেতেন। ইবনে সিনার বেশিরভাগ লেখাই আরবিতে। তবে কিছু লেখা আছে ফার্সিতে। আলবার্টাস ম্যাগনাস, থমাস অ্যাকিনাস প্রমুখ ইবনে সিনার মতবাদে প্রভাবিত ছিলেন। তার পাঁচ খন্ডের আল কানুন আল ফিত-তিবকে বলা হয় মেডিকেল শাস্ত্রের বাইবেল। বইগুলো সব লেখা শেষ হয় ১০২৫ সালে। এই বই এতই বহুমুখী ছিল যে, মধ্যযুগীয় ইউরোপে একে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

 

হিপোক্রেটিস

কসের হিপোক্রেটিস ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বেঁচে ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় হিপোক্রেটিস নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন পেরিক্লেসের যুগের একজন প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক। যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয়। হিপোক্রেটীয় চিকিৎসা শৈলীর উদ্ভাবনের স্বীকৃতিতে তাকে পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রের পিতা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তার শৈলী দর্শন ও ধর্মীয় রীতিনীতি থেকে পৃথক করে চিকিৎসাশাস্ত্রকে একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রে  বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। আর এই জন্যই তাকে পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলা হয়। পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়ে থাকে হিপোক্রেটিসকে। তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিখ্যাত এক চিকিৎসার স্কুল। যার মাধ্যমে তিনি পাল্টে দেন সে সময়ের প্রচলিত চিকিৎসাবিজ্ঞান। তার অন্যতম অবদান হচ্ছে তিনি চিকিৎসা করার বিষয়টিকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সমাজে। সেই সঙ্গে এই পেশাকে তিনি কলঙ্কমুক্ত রাখার জন্য শপথ বাক্যও তৈরি করেছিলেন। হিপোক্রেটিসের শপথ চিকিৎসকদের ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণ করা একটি শপথ। বহুল পঠিত গ্রিক চিকিৎসা সংক্রান্ত পাঠ্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। মূল রূপ অনুযায়ী একজন নতুন চিকিৎসককে কয়েকজন দেবতার নাম নিয়ে শিষ্টাচারের নির্দিষ্ট মান পালন করতে শপথ নিতে হয়। ঐতিহাসিক এবং পরম্পরাগত মূল্যে বহু দেশে শপথটিকে চিকিৎসকদের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকাল এর বিভিন্ন আধুনিক রূপও ব্যবহার করা হয়। প-িতগণ বিশ্বাস করেন যে, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক বলে মানা হিপোক্রেটিস বা তার একজন শিষ্য এই শপথ লিখেছিলেন। মূল শপথবাক্যটি পঞ্চম শতকের শেষ দিকে আয়োনিক গ্রিক ভাষায় লেখা হয়েছিল। একে সাধারণত হিপোক্রেটিক সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হিপোক্রেটিস জন্ম নিয়েছিলেন প্রাচীনকালের  শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সময়ে। তার জীবদ্দশায় ডেমোক্রিটাস, সক্রেটিস আর প্লেটোরা পৃথিবীতে জ্ঞানচর্চা করেছেন। অন্যদিকে এসব বড় বড় নামের ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি, বরং নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে। যে কারণে প্লেটোর বিভিন্ন লেখায় আমরা হিপোক্রেটিসের বর্ণনা পাই।  প্লেটো বলেছেন, হিপোক্রেটিস ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষক। প্রোটাগোরাস নামক অপর একটি ডায়ালগে প্লেটো ‘হিপোক্রেটিস অব কস’-কে গ্রিসের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হিপোক্রেটিস তার চিকিৎসাশাস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার স্কুল কবে খুলেছিলেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।

 

আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং পাল্টে দিয়েছেন চিকিৎসাজগৎ

স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ছিলেন একজন স্কটিশ ডাক্তার, জীববিজ্ঞানী, ফার্মাকোলজিস্ট এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী। ১৯২৩ সালে তার সর্বপ্রথম আবিষ্কার এনজাইম লাইসোজাইম এবং বিশ্বের প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পদার্থ বেনজাইলেননিসিলিন (পেনিসিলিন-জি) ১৯২৪ সালে পেনিসিলিয়াম নোটামের ছাঁচে ঢোকেন, যার জন্য তিনি ১৯৪৫ সালে হোয়াড্ড ফ্লোরি ও আর্নেস্ট বরিস চেইনসহ পদার্থবিদ্যা বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৮৮১ সালের ৬ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী পাল্টে দিয়েছিলেন চিকিৎসাজগৎকে এবং তদুপরি মানবজাতিকে। তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল এই অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন। স্কটল্যান্ডে জন্মেছিলেন তিনি। এরপর এক সময় ইংল্যান্ডের লন্ডনে চলে যান। বড় ভাই চিকিৎসক ছিলেন। তার পরামর্শেই তিনিও এমবিবিএস পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯০৬ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস শেষ করার পর ১৯০৮ সালে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াবিদ্যাতে স্বর্ণপদকসহ অনার্স শেষ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর আমার প্ল্যান কোনোভাবেই এমন ছিল না যে, আমি পৃথিবীর প্রথম ব্যাকটেরিয়া-হত্যাকারী  বা প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে চিকিৎসার জগতে বিপ্লব নিয়ে আসব। কিন্তু হয়তো ঠিক সেটাই আমি করে ফেলেছি।’ ১৯৪৬ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ তাকে নাইট উপাধি দেন, তাই তাকে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ডাকা হয়। ১৯৫৫ সালের ১১ মার্চ তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার একটা মূর্তি আছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবেন এমন কিছু নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তখনই তিনি অ্যান্টিসেপটিক নিয়ে দুর্দান্ত একটা ফলাফল বের করেছিলেন।

 

স্যার ফ্রেডরিক গ্রান্ড বেন্টিং

১৯২১ সালের কোনো এক দিনে নিউইয়র্কে ফ্রেডরিক অ্যালেনের হাসপাতালে একদল ডায়াবেটিস রোগী বসে আছেন। ইনসুলিন তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই ডায়াবেটিস রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে না খেয়ে বেঁচে থাকা। এর মধ্যে গুজব শুরু হলো- ইনসুলিন নামে কিছু একটা উদ্ভাবন হয়েছে কানাডায়, যেটা নাকি ডায়াবেটিস রোগীকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারে। ফ্রেডরিক অ্যালেন ঘটনার সত্যতা জানতে গেছেন। এই মুহূর্তে রাতের খাবারের পর রোগীদের ঘুমিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তারা জেগে আছেন ফ্রেডরিক অ্যালেনের অপেক্ষায়। এক সময় হাসপাতালের প্রবেশপথে ফ্রেডরিকের পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। সবার মনোযোগ সেই শব্দে। ফ্রেডরিক হাসপাতালের দরজা খুললেন, শত শত চোখ তার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল। তা দেখে তিনি এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে বললেন, আমার মনে হয়, আমার কাছে আপনাদের জন্য কিছু আছে। কারণ কানাডার এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী আসলেই ইনসুলিনের উদ্ভাবন করে ফেলেছেন। কানাডার নোবেল বিজয়ী সেই চিকিৎসাবিজ্ঞানী স্যার ফ্রেডরিক গ্রান্ড বেন্টিং। ডায়াবেটিসের প্রতিকারের উপায় বের করার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। অনেক চেষ্টার পর ডায়াবেটিসের প্রতিকারের উপায় বের করতে না পারলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার যুগান্তকারী একটা উপায় ইনসুলিন বের করতে পেরেছিলেন তিনি। ইনসুলিন আবিষ্কারে তার একজন সহকর্মীর পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিল বেন্টিংয়ের ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন। স্বপ্নেই নির্দেশনা তিনি পেয়েছিলেন যে, কী করে ইনসুলিনের সাহায্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কী করে ওষুধ আকারে তা ব্যবহার করা যায়।

 

হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক  ইবনুন নাফিস

ইবনুন নাফিস একজন বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিদ ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আলা আল-দিন আবু আল-হাসান আলী ইবন আবি-হাজম আল-কারশি আল-দিমাশকি। তিনি সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং মিসরের কায়রোতে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী। ১২০৮ মতান্তরে ১২১৩ খ্রিস্টাব্দে ইবনুন নাফিস জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য। জন্মস্থান সিরিয়া না মিসরে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আল-শামিল ফি আল-তিব্ব নামের ৩০০ খন্ডের এক বিশাল বই লিখেছিলেন তিনি। এই বইয়ের পান্ডুলিপি বর্তমানে দামেস্কে সংরক্ষিত আছে। তার অন্যান্য বিখ্যাত বইগুলো হলো- মুয়াজ আক-কানুন, আল-মুখতার ফি আল-আঘধিয়া। মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা আবিস্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ইবনুন নাফিস। ইবনুন নাফিস মানবদেহে রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি, ফুসফুসের সঠিক গঠন পদ্ধতি, শ্বাসনালি, হৃৎপিন্ড, শরীরে শিরা-উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে অবহিত করেন। শ্বাসনালির অভ্যন্তরীণ অবস্থা, মানবদেহে বায়ু ও রক্তপ্রবাহের মধ্যে ক্রিয়া-প্রক্রিয়া, ফুসফুসের নির্মাণকৌশল ইত্যাদি সভ্যজগৎকে সর্বপ্রথম অবগত করেছিলেন। রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত গ্যালেনের মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১৩০০ শতাব্দীতে বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন ইবনুন নাফিস। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, হৃৎপিন্ডে মাত্র দুটি প্রকোষ্ট রয়েছে। ১২৩৬ সালে নাফিস মিসর গমন করেন। সেখানে আল-নাসরি নামক হাসপাতালে চিকিৎসা করতেন। এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন।

 

উইলিয়াম হার্ভে

উইলিয়াম হার্ভে ছিলেন একজন ইংরেজ চিকিৎসক যিনি শরীর-বিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব অবদান রেখে গেছেন এই বিজ্ঞানী। মানুষের দেহের ভিতর রক্তের পদ্ধতিগত চলাচলের প্রক্রিয়াটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার জন্য। আর এই প্রক্রিয়াটি আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে সম্পূর্ণরূপে এবং বিস্তারিত তিনিই প্রথম তুলে ধরেন।

এর আগে রক্ত চলাচল সম্পর্কে কারও সঠিক ধারণা ছিল না। তার গবেষণার মূল তথ্যগুলো হলো- রক্ত হৎপিন্ড থেকে ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায় এবং শিরার মাধ্যমে আবার হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। পরে তা আবার ধমনী, উপধমনী, শিরা, উপশিরার মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এই চক্রাকার পদ্ধতির মাধ্যমে কেবলমাত্র রক্তের চলাচল হয়, বায়ুর নয়। রক্তের মধ্যে বায়ু মিশ্রিত থাকলেও তা রক্তই।  হৎপিন্ড রক্ত সংবহনের উৎস, যকৃৎ নয়। হৃৎপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সংবহনে সাহায্য করে। হৎপিন্ডের সংকোচনকে সিস্টোল ও প্রসারণকে ডায়াস্টোল বলে। হৎপিন্ড যখন রক্ত পাম্প করে আমাদের শরীরে প্রবাহিত করে তখন আমাদের হাতের পালস অথবা নাড়ি রক্তপূর্ণ হয়। ফলে নাড়ি স্ফীত হয়ে ওঠে। এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর সম্মানার্থে ১৯৭৩ সালে তার জন্মস্থান ফোকস্টনের কাছে অ্যাশফোর্ড শহরে ‘দ্য উইলিয়াম হার্ভে হাসপাতাল’ নির্মাণ করা হয়। হার্ভের পিতা থমাস হার্ভে ছিলেন ফোকস্টনের একজন জুরাৎট, ১৬০০ সালে তিনি সেখানকার মেয়র হয়েছিলেন। তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, এসসিক্সের চিংওয়েল শহরে ‘রোলস পার্কে’র ডাইনিংয়ের কেন্দ্রীয় দেয়ালে এখনো তার পোর্ট্রটে শোভা পাচ্ছে। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হার্ভে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ।

সর্বশেষ খবর