বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পশুপাখি থেকে প্রাণঘাতী রোগ

সাইফ ইমন

পশুপাখি থেকে প্রাণঘাতী রোগ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলছে, বর্তমানে নতুন যেসব রোগ দেখা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ পশুপাখি থেকে আসছে। সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, নিপাহ ভাইরাস আসে পশুপাখি থেকে। মানুষ, প্রাণী ও প্রতিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় এসবের উৎপত্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষ ও পশুপাখির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব রোগের বিস্তার বেশি। পশুপাখি থেকে প্রাণঘাতী রোগ  নিয়ে আজকের রকমারি...

 

বাদুড় থেকে ইবোলা

ভয়াবহ ইবোলা ভাইরাসে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশের মতো। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে মধ্য আফ্রিকায় বড় প্রাদুর্ভাবে অন্তত ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে। ইবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুই অবধারিত। এ অসুখের ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি এখন পর্যন্ত। তবে একটা ভালো খবর হলো খুব সংক্রামক নয় এটি। ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে কঙ্গো, সুদান, গাবন ও আইভরি কোস্টে এ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে কোনো সংক্রমিত পশুর রক্ত বা শরীর রসের সংস্পর্শ থেকে। প্রাকৃতিক পরিবেশে হাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়, বাদুড় নিজে আক্রান্ত না হয়ে এ রোগ বহন করে ও ছড়ায়। বাদুড় ছাড়াও গরিলা, শিম্পাঞ্জির মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে। সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে বা মাংস খেয়ে এ রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত রোগীর লালা, বমি, মলমূত্র, ঘাম, অশ্রু, বুকের দুধ এবং বীর্যের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্তদের ব্যবহার করা সুই, সিরিঞ্জ এমনকি কাপড়ের মাধ্যমেও ছড়ায়। নাক, মুখ, চোখ, যৌনাঙ্গ বা ক্ষতের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। রোগাক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেলেও সাত সপ্তাহ পর্যন্ত বীর্যের মাধ্যমে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। মৃতদের মাধ্যমেও ছড়ায়। এ রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। দেশে প্রবেশের বন্দরগুলোতে রোগী শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়।  এ রোগের প্রতিষেধক টিকা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

 

পোষা তোতা থেকে প্যারট ফিভার

সিটাকোসিস প্রতিরোধ করতে পাখির খাঁচা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন, একটি খাঁচায় বেশি পাখি রাখা থেকে বিরত থাকুন এবং একটি খাঁচার মল অন্যান্য বর্জ্য যেন আরেকটি খাঁচায় না পড়ে

অনেকেই আছেন যারা শখ করে বাড়িতে পাখি পোষেণ। এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যারা পাখির ব্যবসা করেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, ষাটেরও বেশি ঘাতক রোগ-জীবাণু ছড়ায় পাখির মল বা বিষ্ঠা থেকে! এর মধ্যে পোষা তোতা অন্যতম। কর্নাটক ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশারিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, পাখির মল বা বিষ্ঠা থেকে নানা রকমের রোগ-জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, জ্বর ছাড়াও নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস বা ‘সিটাকোসিস’ নামে এক ধরনের ফ্লু শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সিটাকোসিস নামক ইনফেকশনটি প্যারট ফিভার নামেও পরিচিত। প্যারট ফিভার হলো ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন।  সংক্রমিত তোতা অথবা এ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বহনকারী অন্যান্য পাখির শ্বাসপ্রশ্বাসীয় তরল বা মল লোকজন শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে প্যারট ফিভার হতে পারে।

 

শিয়াল কুকুরের লালা থেকে ্যাবিস

্যাবিসের শেষ পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই

র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। কুকুর বা শিয়াল কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করলে ভয়ের কিছু নেই। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, গরু, ছাগল, ইঁদুর, বেজি (নেউল), র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। এসব জীব-জানোয়ারের মুখের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে। এ লালা পুরনো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। তবে মনে রাখবেন কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয় না।  যদি কুকুরটির বা কামড়ানো জীবটির লালায় র‌্যাবিস জীবাণু না থাকে। র‌্যাবিসের শেষ পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই।

 

 

অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকে ইনফেকশন

ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি লম্বা কোর্স প্রয়োজন হতে পারে, যদিও সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত লাগতে পারে

অ্যাকুরিয়ামে আমরা অনেকেই মাছ পালন করে থাকি। ঘরে সৌন্দর্যবর্ধনেও অ্যাকুরিয়ামের ব্যবহার সর্বত্র। কিন্তু এ অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকেও হতে পারে ভয়ঙ্কর চর্ম রোগ। একে বলা হয় ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা। এটি হলো একটি বিরল স্কিন ইনফেকশন, যা সাধারণত সেসব লোকের হয়ে থাকে যারা মাছের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব ডার্মাটোলজি অনুসারে ডা. বার্ড সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘মাইকোব্যারিয়াম মেরিনাম দ্বারা ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা বিকশিত হয়। এটি সেসব লোকের হাতে লাল স্ফীত ক্ষত নিয়ে আবির্ভূত হয়, যারা হাতে অ্যাকুরিয়ামের মাছ ধরেন অথবা অ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করেন।’ অ্যাকুরিয়াম ওয়ার্কার যারা তারা এবং অ্যাকুরিয়ামের মাছ অথবা অ্যাকুরিয়ামের সংস্পর্শে আসা যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের ফলে হাতে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত বিকশিত হতে পারে। ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন।  সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

 

গরু ছাগল থেকে ছড়ায় অ্যানথ্রাক্স

অ্যানথ্রাক্স হলো একটি মারাত্মক দশা যা প্রাণনাশক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গরু, ছাগল, ভেড়া হরিণ হলো প্রাণী-সংক্রামক অ্যানথ্রাক্সের সর্বাধিক কমন উৎস

অ্যানথ্রাক্স গবাদিপশুর একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। গবাদিপশু থেকে এ রোগ মানুষেও ছড়ায়। এ রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য খেয়ে বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীনালার পানি ও জলাবদ্ধ জায়গার ঘাস খেয়ে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়। মানুষের অ্যানথ্রাক্স মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে- এক ধরনের অ্যানথ্রাক্স হয় পরিপাকতন্ত্রে, আরেক ধরনের অ্যানথ্রাক্স শরীরের বাইরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর সংক্রমণ হলে সাধারণত হালকা জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিটক্সিন বা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। অ্যানথ্রাক্স হলো একটি মারাত্মক দশা, যা প্রাণনাশক হতে পারে। তাই এ রোগ নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে- গরু, ছাগল, ভেড়া ও হরিণ হলো প্রাণী-সংক্রামক অ্যানথ্রাক্সের সর্বাধিক কমন উৎস।

 

ইঁদুর থেকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্লেগ

সে সময় ইউরোপ এশিয়ার বাণিজ্য হতো কৃষ্ণসাগর দিয়েই। আর তখন সেই জাহাজগুলোতে চড়ে বসত অসংখ্য ইঁদুর, যেগুলো কিনা প্লেগের প্রধান জীবাণুবাহী

ইঁদুরের ছড়ানো রোগে পৃথিবীতে এসেছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারীগুলোর কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম মহামারীর নাম দ্য ব্ল্যাক ডেথ। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, এ মহামারীতে অন্তত ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শুধু ইউরোপের ইতিহাসেই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে আলোচিত মহামারী। ১৪ শতকে কৃষ্ণসাগরের (ব্ল্যাক সি) উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে একে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়। সে যুগে ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্য জাহাজগুলো যাতায়াত করত কৃষ্ণসাগর দিয়েই। আর এখান থেকে খাদ্যদ্রব্যের জাহাজগুলোতে চড়ে বসত অসংখ্য ইঁদুর, যেগুলো মূলত রোগের জীবাণু বহন করত। ইতিহাসবিদদের মতে, ব্ল্যাক ডেথের সময় যে রোগটি অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তা গ্রন্থিপ্রদাহজনিত প্লেগ।  কারও কারও মতে, ভয়াবহ এ রোগটি ছড়িয়েছিল ইবোলা ভাইরাসে। ১৩৪৭-৫১ খ্রিস্টাব্দ সময়কালেই ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল।

 

বনরুই থেকে করোনা ভাইরাস

চীনে পাচার হওয়া বনরুইয়ে করোনাভাইরাসের দুই ধরনের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এরপরই নতুন মোড় নিয়েছে করোনার উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা

চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুই ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কভিড-১৯’ এর। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে।  চীনে পাচার হওয়া বনরুইয়ে করোনাভাইরাসের দুই ধরনের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এরপরই নতুন মোড় নিয়েছে করোনার উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা। ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন,  বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারীর সম্পর্ক রয়েছে।

 

বিড়াল থেকে টক্সো প্লাসমোসিস

দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে

আমরা অনেকেই বাসায় বিড়াল পুষে থাকি। এ ছাড়াও বাসাবাড়ির আশপাশে বিড়াল বসবাস করে। কিন্তু বিড়াল থেকে মানুষের দেহে ছড়াতে পারে রোগ। টক্সোপ্লাসমোসিস ও বার্টোনেলা উভয়টাই বিড়াল দ্বারা ছড়ায়। তবে রোগ দুটি ভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। টক্সোপ্লাসমা গোন্ডি নামক পরজীবী দ্বারা টক্সোপ্লাসমোসিস বিকশিত হয়। সংক্রমিত বিড়ালের মল বা মূত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এ ইনফেকশন ছড়াতে পারে। তাই পোষা বিড়ালের মলমূত্র পরিষ্কার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন তা কখনই শরীরের স্পর্শে না আসতে পারে। সংবাদমাধ্যমে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ নিধি জিলদয়াল বলেন, ‘সাধারণত এ রোগটি তেমন তীব্র নয়, কিন্তু এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কেমোথেরাপির রোগী অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে।’

 

শিম্পাঞ্জি গরিলা, বানর  থেকে এইডস

শিম্পাঞ্জি, গরিলা বানর থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ১৩টি ঘটনা নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এইচআইভি- এর এম গ্রুপটিই মানুষের মধ্যে বেশি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়

এইচআইভি সংক্রমণে মানবদেহে এইডস রোগের সৃষ্টি হয়। এইডস মূলত রোগ নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত নানা রোগের সমাহার। এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, ফলে নানা সংক্রামক রোগ ও কয়েক রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর অনাক্রম্যতা কমতে কমতে এইডস ঘটানোর মতো অবস্থায় পৌঁছতে অনেক বছর লাগে। এইচআইভি ভাইরাস আবিষ্কারের ৩০ বছর পর মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারের এইচআইভি ছড়িয়ে পড়া, স্থানান্তরিত হওয়ার কারণ অজানাই ছিল। ১৯২০ সালের দিকে কিনসাসা থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল এ ভাইরাসের। গবেষকরা বলছেন, নতুন ধরনের পদ্ধতিতে এইচআইভি ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। শিম্পাঞ্জি, গরিলা ও বানর থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ১৩টি ঘটনা নথিভুক্ত রয়েছে।  কিন্তু এইচআইভি-১ এর এম গ্রুপটিই মানুষের মধ্যে বেশি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়।

 

হাঁস-মুরগি থেকে মানুষের দেহে বার্ড ফ্লু

বার্ড ফ্লুর লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত তীব্র হতে পারে যেখানে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়

বার্ড ফ্লু পাখির এক ধরনের জ্বর কিন্তু এ জ্বরটির জন্য দায়ী এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম এইচ৫এন১। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো বন্যপাখি, সামুদ্রিক বা শীতের অতিথি পাখির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে। যেমন অতিথি পাখি কোনো পুকুরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মল ত্যাগ করলে সেই পুকুরে নামা হাঁস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সেই হাঁস থেকে ডিম বা মাংসের মাধ্যমে ভাইরাসটা ঢুকে যেতে পারে মানবদেহে। সাধারণত সংক্রমণের ১-৩ দিন পর সাধারণ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই রোগীর ঠান্ডার লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন- জ্বর, গা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। বার্ড ফ্লুর লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত তীব্র হতে পারে যেখানে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।  পরবর্তীতে অবস্থা জটিল হলে অনেক ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা হৃৎপিন্ডের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

সর্বশেষ খবর