মা বাকরুদ্ধ, বাবা দিশাহারা। বাঁধ মানছে না অশ্রু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন সাগর আহম্মেদ (২২)। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মায়ের চোখে বেদনার অশ্রু। সাগর আহম্মেদ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপুড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের সন্তান। সে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সাগরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের ছবি নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা গোলাপী বেগম। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে কান্না করছিলেন সাগরের বাবা। একমাত্র টিনের ঘরে বসবাস করেন সাগরের বাবা-মা। ঘরের ছোট একটি কক্ষে সাগরের বোন মুসফি থাকেন। কম্পিউটার শেখানোর জন্য ঈদের সময় বাড়িতে রেখে গেছেন কম্পিউটারটি। সাগরের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার ছেলে সাগর খুব শান্ত স্বভাবের। পড়ালেখার পাশাপাশি খন্ডকালীন চাকরি করত। নিয়মিত রক্ত দান করত। এ আন্দোলনে শুরু থেকেই মাঠে স্বয়ংক্রিয় ছিল সাগর। ১৯ জুলাই সকালে সর্বশেষ আমাদের সঙ্গে কথা হয়। সেদিন ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ বলে জানায়। ওর মা সাগরকে বাড়ি চলে আসার অনুরোধ করেন। সাগর তখন দোয়া চান বাবা-মায়ের কাছে। সেদিনই সন্ধ্যায় আমার মেয়ে ফোন করে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলে। বাড়িতে এসে দেখি সবাই নির্বাক। পরে শুনতে পেলাম সাগরের মাথায় গুলি লেগেছে। ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে আন্দোলনে চলে যান সাগর হোসেন। সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুলের কাছে ফোন আসে সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরদিন সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরিচয়পত্র দেখে শনাক্ত করা হয় মরদেহ। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা সাগর আহম্মেদকে। স্থানীয়রা বলেন, সাগরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। সাগরের বাবা-মা গরিব মানুষ। ছেলে পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করবেন। বাবা-মায়ের পাশে থাকবেন এই আশায় কষ্ট করতেন। তাদের সব আশা শেষ হয়ে গেছে। বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, সাগরের মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হয়েছে।