আমি নিরাপরাধ, আমার সন্তান কেন আমাকে পরিচয় দিবে না। কেন তারা বলবে, আমি বিদ্রোহীর সন্তান হতে চাই না। আমি যেখানে যাই সেখানে আমার চাকরি হয় না। কারণ আমি বিদ্রোহীর সন্তান। এখন আমরা মুখ খুলতে পারছি, দেশ ও জাতি জানতে পারছে বিডিআর বিদ্রোহ নয়। এটা একটা পরিকপ্লিত হত্যাযজ্ঞ ছিলো। সেই হত্যাযজ্ঞ কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে, যারা হত্যাকারী তারা নির্বিঘ্নে আরামসে রাজ্য পরিচালনা করছে।
রবিবার বরিশাল প্রেসক্লাবের তিনতলা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন বিডিআর কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ও চাকুরিচ্যুত হাবিলদার মো. মোশারেফ হোসেন।
মোশারেফের দাবি এই বাহিনীকে দুর্বল ও শক্তিহীন করার জন্য সুপরিকপ্লিতভাবে তাবেদার সরকারের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে। হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে বিডিআরের উপর দায় চাপিয়েছে। নাটকীয় শব্দ ব্যবহার করে বিদ্রোহ করেছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মোশারেফ বলেন, আমাদের সন্তানরা চাকুরি পাচ্ছে না আমরা বিদ্রোহ করেছি বলে। আমরা তো বিদ্রোহ করেনি। আমরা দেশকে ভালোবেসেছি। আমরা সম্পূর্ণ নিরাপরাধী। কেউ কোন অপরাধ করেনি।
আজ হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে জানিয়ে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হলো- ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর পিলখানা সংঘটিত সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে তথাকথিত বিদ্রোহ সংজ্ঞায়িত না করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গঠিত সকল প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল করা, চাকরিচ্যুত সকল পদবির বিডিআর সদস্যকে সুযোগ সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করা, হত্যাকাণ্ড মামলার হাইকোর্টের বিচারকগণের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মোটিভ উদ্ধার ও কুশীলবদের শনাক্তকল্পে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী ৫৭ মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা দেয়া, ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে পিলখানার ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে যে সকল নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনপূর্বক হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ ও মৃত সকল পদবির পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করা, তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিযুক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত পূর্বক বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষকারী বিডিআর সদস্যগণ যারা প্রহসনের বিষ্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ কারা অন্তরীন আছে, তাদেরকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জামিন অথবা মামলা থেকে অব্যাহতি পূর্বক মুক্ত করা।
সংবাদ সম্মেলনে চাকুরিচ্যুতদের মধ্যে সিপাহি মনিরুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মাহাবুবুর রহমান,শহিদুল ইসলাম, ,আঃ রহিম,আতাইর রহমান,আলম হোসেন,আতিকুর রহমান সহ প্রায় ৫০ জন বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা বরিশাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও বিজিবি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল