উদ্ঘাটন হলো রাজধানীর গুলশানে জোড়া খুনের রহস্য। এ ঘটনায় রুমন (২৭) নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর রহস্য উদঘাটন হয়।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে র্যাব-১ ও র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকা থেকে রুমনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোড়া খুনের দায় স্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃত রুমন।
তিনি জানিয়েছেন, চায়ের দোকানে অল্প বেতন ও কাজ-কর্ম নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে মালিক রফিকুল ইসলাম সিকদার (৬২) ও কর্মচারী সাব্বিরকে (১৫) খুন করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার একটি চায়ের দোকানের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো ও গলাকাটা অবস্থায় দু’জনের লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৮ সেপ্টেম্বর নিহত রফিকুল ইসলামের ছেলে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলে দেশজুড়ে আলোচিত হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর রাতে র্যাব-১ ও র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জোড়া খুনের মূল আসামি রুমনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রুমন জোড়া খুনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
জানা গেছে, নিহত রফিকুল ইসলাম সিকদারের বাড়ি বরিশালে। তিনি রাজধানীর গুলশান-২ এর রোড নং-১০৮, প্লট নং-২১ এর কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি করার পাশাপাশি প্লটের ভেতরে ছোট একটি দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করতেন। এছাড়াও অপর নিহত সাব্বির রফিকের চায়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকায়। তারা দু’জনে প্লটের পেছনের অংশে একটি রুমে ঘুমাতেন।
নিহত রফিকের ছেলে জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে তার বাবা দোকান বন্ধ করেন এবং তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে রফিকের মোবাইল ফোন বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা এসে রফিকের থাকার রুমের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা রক্তাক্ত নিথর দুটি দেহ দেখতে পান।
গ্রেফতারকৃত যুবক রুমনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, রফিকের চায়ের দোকানে এক মাস ধরে সাব্বির চাকরি করছিলেন। সাব্বির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানালে রফিক দোকানের জন্য নতুন কর্মচারীর খোঁজ করতে থাকেন। পরবর্তীতে ৭ দিন আগে তার পূর্বপরিচিত একজনের মাধ্যমে রফিকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে থাকা-খাওয়াসহ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন রুমন। বেতন অল্প হওয়ায় ও দোকানের কাজকর্ম নিয়ে রফিকের সঙ্গে রুমনের বেশ কয়েকবার বাকবিতণ্ডা হয়। এর প্রেক্ষিতে রুমনের মধ্যে রফিকের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রফিককে উচিত শিক্ষা দিতে দোকানের মূল্যবান মালামাল ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন রুমন।
তিনি জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও দু’জন জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত রুমন। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রফিক, সাব্বির এবং রুমন দোকানের কার্যক্রম শেষে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আনুমানিক দু’টার দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে রফিকের মাথায়, গলায় ও শরীরের আঘাত করেন রুমন। সাব্বির দেখে ফেললে তাকেও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর রুমন বাসা তল্লাশি করে নগদ টাকা লুট ও কফি মেশিনসহ দোকানের মূল্যবান মালামালসমূহ বেশ কয়েকটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন। পরে সকাল ৭টার দিকে একটি পিকআপযোগে দোকানের মালামাল নিয়ে রুমন ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এয়ারপোর্ট এলাকায় এসে বাসযোগে মালামালসহ তার নিজ বাড়িতে চলে যান। লুণ্ঠিত মালামাল তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন রুমন।
র্যাব এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার রুমন আগে নিজ এলাকায় কৃষি কাজের পাশাপাশি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ১/২ বছর আগে রাজধানীর উত্তরায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন বলে জানায়। আসামি রুমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে কিশোরগঞ্জে তার বোনের বাড়িতেতে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে পরে চট্টগ্রামে তার নিকটাত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব তাকে গ্রেফতার করে।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাকি আসামিদের ধরতে র্যাব কাজ করছে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
বিডি প্রতিদিন/একেএ