গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের প্রথম স্তর হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রান্তিক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে লালমনিরহাটে ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। তবে সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা তারা পাচ্ছেন না। চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ মিলছে না। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত অফিসে আসেন না। এসব ক্লিনিকের অধিকাংশ ভবন জরাজীর্ণ।
স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসবপূর্ব এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা দেওয়া হয় এসব ক্লিনিকে। যক্ষ্মা প্রতিষেধক টিকাদান, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ, কালাজ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার বিধান রয়েছে। ক্লিনিকগুলোয় অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি-সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণসহ বিনামূল্যে ৩০টিরও বেশি ওষুধ সরবরাহ করার কথা। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৮০টি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৬৬টিতে সিএইচসিপি রয়েছেন। প্রতিটি ক্লিনিক শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন খোলা থাকার কথা এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি তিন দিন করে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার পরিকল্পনা সহায়কের সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লালমনিরহাটে ত্রিমুখী সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে প্রান্তিক পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। ক্লিনিকগুলোর কোনোটির ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। কোনোটির পলেস্তারা খসে পড়েছে। সিএইচসিপিরা সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি আসেন না। সকাল ১০টা-১১টায় এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে তারা চলে যান। ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের দুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে, সেবাপ্রত্যাশীরা বেশির ভাগই নারী। সেখানে সিএইচসিপিকে নিয়মিত দেখা না গেলেও একই ক্লিনিকের অন্য একটি কক্ষে চিকিৎসা দেন উপস্বাস্থ?্য কেন্দ্র-২-এর উপসহকারী কমিউনিটি এক মেডিকেল অফিসার। কথা বলতে চাইলে তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন আলী জানান, ভবনটির অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। বৃষ্টি হলে ভিতরে পানি পড়ে। তখন স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বসে ওষুধ দেন।
তবে সেবা নিতে আসা সাধনা রানীসহ কয়েকজন বলেন, ‘সাধারণ অসুখ-বিসুখ হলে ক্লিনিক থেকে ওষুধ নিই। তবে সব ওষুধ পাওয়া যায় না।’ হাতিবান্ধা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আগে আমাদের ২৭ প্রকার ওষুধ দিত। এখন সাত প্রকার কমিয়ে ২০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছে। সেগুলো দিয়েই আমরা প্রাথমিক সেবা দিচ্ছি।’