ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক কিনে কেটে তা বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানায় বিক্রি করছেন নীলফামারীর প্লাস্টিকের কারবারিরা। এর ফলে প্লাস্টিকের ভয়াবহ দূষণ থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত থাকছে এলাকা। যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের পণ্য সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণ কমছে। একই সাথে এ পেশায় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে অনেক মানুষের।
নীলফামারীতে প্রায় তিন শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিকের কুচি তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কাজ করেন ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক। আর এসব কারখানায় প্লাস্টিকের পুরোনো বোতল, স্যালাইনের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কভার, সিরিঞ্জসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি এখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্লাস্টিকের কারখানায়। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরও বিকাশ সম্ভব বলে জানান কারখানার মালিকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙা প্লাস্টিক বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক কুচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আর এসব প্লাস্টিকের দ্রবাদি ভাগ ভাগ করে মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হচ্ছে কুচি।
সদর ইটাখোলা বাদিয়ার মোড় কারখানায় শ্রমিক কেয়া রানী বলেন, সকাল থেকে সারা দিন স্তূপের প্লাস্টিকের দ্রব্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে গিয়ে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কুচি।
কারখানার মেশিনচালক বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, প্লাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রেখে সেসব দ্রব্য নিয়ে এসে মেশিনে দিয়ে কুচি তৈরি করা হয়। এরপর এসব কুচি ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। পরে বস্তায় ভরে প্যাকেটজাত করা হয় বিক্রির জন্য।
কারখানার মালিক কমল রায় বলেন, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ও হকারদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পণ্য কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। কুচিগুলো আমরা মিলারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। কুচির আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুল আহকাম সরকার বলেন, বর্তমান প্লাস্টিক বেশি ব্যবহারের কারণে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবে দিন দিন ফসল কমে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে কুচি তৈরি হওয়ার কারণে পরিবেশ রক্ষা পাবে। এসব কুচি পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন বলেন, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ তার দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ