শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আমার পকেট খালি ছিল : মুজিব পরদেশী

আমার পকেট খালি ছিল : মুজিব পরদেশী

‘আমি বন্দী কারাগারে’ কিংবা ‘আমার সাদা দিলে কাদা লাগাই গেলি’— এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী  মুজিব পরদেশী। অথচ পপ-রক-মডার্ন গানের স্রোতে সবাই বেমালুম ভুলে গেছে, এ দেশে এমন একজন শিল্পী ছিলেন। আর তাই শিল্পী নিজেও নিভৃতে চলে যান। সম্প্রতি তিনি আবার ফিরে এসেছেন। শিল্পীর নিভৃত জীবন, গানের সঙ্গে বসবাস, বিতর্ক, গানে ফিরে আসা— সবকিছু নিয়ে কথোপকথন। মুখোমুখি হয়েছিলেন আলী আফতাব

 

আপনি একসময় জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন। হঠাৎ করে নিভৃতে চলে গেলেন। কেন?

গানের জন্য অনেক দেশে ঘুরেছি। অনেক দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু লন্ডনে গিয়ে সেখানকার বাঙালিদের প্রেমে পড়ে গেলাম। তারা আমাকে লন্ডনে থেকে যেতে বলে। আমিও ভালোবাসায় আটকে গেলাম।  

 

জনপ্রিয়তা থেকে পরবাস— পার্থক্য কেমন?

একটা সময় আমার অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। মানুষ আমাকে এক নামে চিনত। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব যায়গায় আমার গান বাজত। নিজের কাছে অনেক ভালো লাগত। আমি লন্ডনেও অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু দেশের মানুষের মতো এত মধুর ভালোবাসা আর কোথাও পাইনি। এই ভাবনা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি মা-মাটির মানুষ। আমি বাংলার লোকসংগীতকে ধারণ করে বেড়িয়েছি।

 

কিন্তু লন্ডনে থেকে যাওয়ার বিষয়টি ছিল আপনার ইচ্ছাকৃত।

আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, কিন্তু পকেট খালি ছিল। শুধু ভালোবাসা দিয়ে একটি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন। দিনের পর দিন আমি কষ্ট করেছি। আর লন্ডনে যাওয়ার পর গানের পাশাপাশি আমি আর্থিকভাবেও ভালো থেকেছি। অনেকটা এ কারণেই থেকে গেলাম।

 

গানের মানুষ তো গান ছাড়া থাকতে পারে না। আপনি আড়াল জীবনে কি নিয়মিত গান করেছেন?

প্রায় এক যুগ বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের কাছ থেকে দূরে ছিলাম, কিন্তু গান থেকে দূরে ছিলাম না। আমি প্রবাসে থেকেও বেশকিছু গান করেছি। গানগুলো এখন সবাইকে শোনাব।

 

ওখানে কি কাজ করতেন?

আমি ভাই গান ছাড়া আর কিছু বুঝি না। লন্ডনে কিছু প্রবাসী বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে আমি কাজ করেছি। সময় পেলেই গান লিখতাম, সুর করতাম, গাওয়ার চেষ্টা করতাম। 

প্রবাসে চলে যাওয়ার পর দেশে আপনার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। সহজভাবে বললে, মানুষ আপনাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছে। আপনি বিষয়টা কিভাবে দেখেন?

এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন সত্য। কারও জন্য কোনো কিছু থেমে থাকে না। আমাকে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি মেনে নিয়েছি।

 

আপনার নিজের গানগুলো কি সংগ্রহে আছে?

বাজারে আমার প্রায় শ’-খানেক গান আছে। আমার নিজের কাছে তেমন কোনো সংগ্রহ নেই। শুনেছি বিভিন্ন অডিও কোম্পানিতে ওগুলো আছে। প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে  নেব।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আপনাকে কিভাবে খুঁজে পেলেন?

ফারুকী ভাই অনেক মেধাবী একজন লোক। তার কিছু কাজ আমি দেখেছি। তার কাজগুলো আমার অনেক ভালোলাগে। আমার এক ভাগিনা তার সঙ্গে কাজ করত। তার কাছ থেকে আমি ফারুকী ভাইয়ের নম্বর নিয়ে ফোন করি। ফারুকী ভাই আমার ফোন পেয়ে অনেক খুশি হয়। তার সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার জন্য বলে।

 

কি কাজ করছেন আপনারা?

আমরা একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করছি। তিনি আমাকে দিয়ে ‘কলমে নাই কালি’ গানটি নতুনভাবে আবার করায়। গানটিতে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গানের মুখ ঠিক রেখে বাকি অংশ নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর সংগীতায়োজন করেছেন অর্ণব।

 

তিনি নাকি আপনাকে কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন? লাইভ গান গাইবেন নাকি?

এখনো কিছু ঠিক হয়নি। অনেক টিভি চ্যানেল ফোন করছে কিন্তু এখনই আমি তাদের কিছু বলিনি। আমি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর টিভি শোগুলো করতে চাই।

গানে কি আবার আগের মতো ফিরতে চান?

হ্যাঁ, এখন থেকে আমি নিয়মিত গান করতে চাই। প্রস্তুতি শুরু করেছি। শিগগিরই আমাকে পাবেন আবার সবাই।

 

কিছু খবর বেরিয়েছিল আপনাকে নিয়ে। আদম পাচারের সঙ্গে নাকি জড়িত ছিলেন?

বিষয়টি আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। আমি যখন অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যাই, তখন কিছু মানুষ পেছনে লাগে। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর তারাই আমার নামে নানা অপপ্রচার চালিয়েছে। এখনো বিষয়গুলো মনে পড়লে চোখে পানি এসে যায়। আমি কাদের জন্য গান করেছি। এত কষ্ট কাদের জন্য করেছি। এখনো আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বেশকিছু মামলা আছে। আমি এখন কোনো কিছুকে ভয় পাই না। যা হওয়ার হবে। আমি আর দেশ ছাড়ছি না। 

 

দেশের কাছে, মানুষের কাছে আপনার এখন কোনো চাওয়া আছে?

আমার একটা চাওয়া। আমি আবার নতুন করে গান করতে চাই। আবার শ্রোতাদের ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই।

সর্বশেষ খবর