শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুয়ার খুলছে দেশি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগের

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগ
নীতিমালা করতে ছয় সদস্যের কমিটি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে তাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়ার উপায় খুঁজছে সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে কীভাবে তাদের সে বিনিয়োগের পথ তৈরি করে দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘বিদেশে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ নীতিমালা’ প্রণয়নবিষয়ক একটি সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। নীতিমালা প্রণয়নে ছয় সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য-১ অজিত কুমার পাল। সদস্য হিসেবে অর্থ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। সদস্যসচিবের দায়িত্বে থাকবেন বিনিয়োগ বোর্ডের উপপরিচালক পদের একজন কর্মকর্তা। ৬ এপ্রিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, এই কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে একটি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করবে। এক মাসের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) আকর্ষণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক/আঞ্চলিক মানে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া ব্যয় হ্রাস, কান্ট্রি অব অরিজিনের সুবিধা গ্রহণ, বিভিন্ন বিশেষ কাঁচামাল সোর্সিংয়ের সুবিধা গ্রহণ, পণ্যের গ্রাহকের সঙ্গে ভৌগোলিক নৈকট্য নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বাংলাদেশি কোম্পানির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বাংলাদেশে প্রেরিত হবে এবং দেশ লাভবান হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিমেন্ট, কাগজ, খাদ্য ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি এখন তাদের পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকাসহ পাশের রাষ্ট্রগুলোয় বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। দেশের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা গুজরাটে শিল্প-কারখানা করার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ইতিমধ্যে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডাসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের বেশকিছু কোম্পানি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কৃষি খামারে ক্ষুদ্র আকারে বিনিয়োগ করেছেন। তবে বড় বিনিয়োগে সমস্যা হচ্ছে দেশ থেকে মূলধন বিদেশে প্রেরণ করার বিষয়ে নীতিমালা না থাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে দেশি কোনো কোম্পানির বিদেশে মূলধন স্থানান্তরের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষে দেশি কোম্পানি বিদেশে মূলধন স্থানান্তর করতে পারে। কয়েক বছরে বাংলাদেশ বেশকিছু কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে বিদেশে কোম্পানি খোলা ও মূলধন স্থানান্তরের অনুমোদন দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা অবশ্য দেশি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। গত নভেম্বরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এ বিষয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আনা এবং মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ?্য অর্জনে দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ আসে ব?্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, বাংলাদেশ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের রক্ষণশীল অর্থনীতির কারণে ভিনদেশের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রুদ্ধ থাকায় মুদ্রা পাচারের মতো ঘটনা ঘটছে। অর্থনীতির ব্যাপ্তি বাড়ার যে সম্ভাবনা রয়েছে, তাও থেমে আছে। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বিনিয়োগের জন্য আমাকে উগান্ডায় পাঠিয়েছিলেন। তখন বিদেশে বিনিয়োগের একটি প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিভিন্ন দফতরের রক্ষণশীল নীতির কারণে সে প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। এখন রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বিধায় নতুন করে বিধি প্রণয়ন করে বিদেশে বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচনের সময় এসেছে।’ অনুষ্ঠানে মূল প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অর্থনীতিকে বড় করে তোলার এই প্রচেষ্টায় সফল হতে হলে বিদেশের বাজারে বিনিয়োগ করা সময়ের দাবি। এ দেশের ব্যবসায়ীরা সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এফডিআই বা বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আভাস দিয়ে তিনি বলেন, উন্নত দেশের অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে বিদেশি বাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতও ১৯৫৬ সালে বিদেশে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা ব্যতিক্রম। নীতিগত বাধানিষেধের কারণে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারছেন না।

সর্বশেষ খবর