বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে। তার পর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে। তারা আরও বলেছে, করোনা মহামারি সংকটের পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ফলে প্রবৃদ্ধি কমে চলতি বছর প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা, অর্থনীতিবিদ নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বৈশ্বিক খাতের চাপ। এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রবৃদ্ধির ধারা কমছে, যদিও সংস্থাটি ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা জানিয়েছিল। এ ছাড়া ২০২৫ সালে দেশে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আর্থিক খাত নিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে। ফলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। যদিও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসেবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফারাক রয়েছে। সেটি একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি খারাপ বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেয় তারা। সংবাদ সম্মেলনে কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের জীবনমানকে নিচে নামাচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।