শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃদরোগীর খাবার

হৃদরোগীর খাবার

হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে। পরিকল্পিত খাদ্যগ্রহণ নীতি মেনে চললে কলেস্টেরল বৃদ্ধির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। কলেস্টেরল কিন্তু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদানও বটে। তবে মাত্রাতিরিক্ত কলেস্টেরল বা খারাপ কলেস্টেরল হৃদরোগের কারণ। সে জন্য হৃদরোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হয়।

 

কলেস্টেরল শরীরের জন্য একটি দরকারি উপাদান। এটি শরীরে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করে থাকে। কোষের প্রাচীর, বাইল এসিড, যা খাদ্য পরিপাকে প্রয়োজন, হরমোন, ভিটামিন ডি তৈরিতে মৌলিক ভূমিকায় থাকে উপকারী কলেস্টেরল। তবে রক্তে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

 

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বা ওষুধের মাধ্যমে রক্তে কলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। আবার কলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। প্রাণিজ খাদ্যে যেমন— ডিমের কুসুম ও মাংসে কলেস্টেরল বেশি থাকে। উদ্ভিদজাতীয় খাবারে কলেস্টেরল থাকে না। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোনো একটি রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্তনালির গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে যায়। সরু নালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। একটা সহজ কথা দিয়েই শুরু করা যেতে পারে।

 

যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন— গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। কাজেই হৃদরোগী কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে এসব প্রাণী থেকে তৈরি খাদ্য আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এ ছাড়াও হৃদরোগীরা আরও কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন।

 

আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া

সবুজ শাকসবজি, সালাদ, ছোলা, বুট, টক ফল, খোসাসহ পেয়ারা, আমলকী, কামরাঙ্গা, আমড়া, লেবু ও বরই— দেহে বিদ্যমান কলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ উপকারী।

 

চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া

উপকারী ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়া ভালো।

সব রকমের মাছ খেতে পারেন। মাছের তেলে কলেস্টেরলের ভয় নেই।

উদ্ভিজ তেল-কর্ন অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল খেতে হবে ক্যালরি অনুযায়ী।

 

পরিমিত পরিমাণ খাবার

শর্করাজাতীয় খাবার, দুধ বা দুধের তৈরি খাবার (সর ছাড়া দুধ), চিনি-মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।

 

খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে

খাসির মাংস, মাংসের চর্বি, গরুর মাংস [রানের মাংস মাসে ২/৩ বার অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে], মগজ, কলিজা, গলদা চিংড়ি, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম (ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাবে) হাঁস ও মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, মাখন, ডালডা, নারিকেল, মার্জারিন।

 

আরও কিছু খাবার টিপস

মেথি, করলার রস, ইসুবগুলের ভুসি এগুলো রক্তে কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

 

রন্ধন প্রণালি

মনে রাখতে হবে, খাবার প্রস্তুত প্রণালির সঙ্গে ক্যালরি হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। আর এটি ওজন কমাতে বা বাড়াতে সাহায্য করে।

বিষয়টির সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। রান্নার ক্ষেত্রে নিচের নিয়মাবলি মেনে চললে উপকার পাওয়া যাবে—

খাবার ডুবো তেলে ভাজা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভাজার চেয়ে গ্রিল করা খাবার ভালো। এতে খাবারের ভিতরকার তেল নিংড়ে বের হয়ে আসে।

বেশি মসলা ও ভাজা খাবার রান্না কম খাওয়া উচিত।

খাবার কম তেলে রান্না করা ভালো।

 

আরও কিছু পরামর্শ

প্রয়োজনের তুলনায় শরীরের ওজন বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই খেয়াল করুন—

সুযোগ পেলেই হাঁটুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও ছেড়ে দিন।

মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।

টেস্টিং সল্ট অথবা লবণ খাবেন না।

ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

খাবারে কাঁচা লবণ খাবেন না।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন। হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুষ্টিসচেতন হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর