ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত পরিসরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা এরই মধ্যে এ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হামাসের মিত্র ইরানও বলছে, তারা হানিয়ার রক্তের বদলা নেবে। ইসরায়েল বিদেশে তাদের চালানো কোনো অভিযানের বিষয়ে সাধারণত মন্তব্য করে না। এবারও হানিয়া হত্যা নিয়ে ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি। হত্যার দায়ও স্বীকার করেনি। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড গতকাল তাদের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পরই হানিয়া নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে। এদিকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন দল ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা চালানো এবং গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ বলেছে, ইসরায়েল পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, তারা তাদের পথেই চলবে এবং তাদের জয় অনিবার্য।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া : হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, ভাই হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলছি, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তিনি আরও বলেছেন, হামাস একটি আন্দোলন, একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ব্যক্তি নির্ভর কোনো সংগঠন নয়। ত্যাগের মহিমায় হামাস এ পথেই চলবে এবং আমরা বিজয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
হামাসের মিত্রবাহিনী হিজবুল্লাহ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, হামাসের এ মহান নেতাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ হত্যাকান্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। কাতার হানিয়ার হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটি এ হত্যাকান্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আবারও প্রমাণিত হলো ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর কোনো ধরনের শান্তি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা নেই।
হামাসের হাল ধরবে কে : হানিয়ার আকস্মিক এ হত্যাকান্ডের পর অবাক সংগঠনটির নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে, তার অবর্তমানে হামাসের হাল ধরবেন কে? ইসরায়েলি দখলদারি ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জন্মলগ্ন থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকামী এ গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বিশিষ্ট নেতাই বা কারা? নিজেদের সম্পর্কে বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য তেমন জানান দেন না সংগঠনের নেতারা। ইসমাইল হানিয়ার পর হামাসের বড় কয়েকজন নেতা রয়েছেন, যারা সংগঠনটির হাল ধরতে পারেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার : হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গাজায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা এবং ইসরায়েলের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি তিনি।
মোহাম্মদ দেইফ : হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ। ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে এবং ইসরায়েলিদের কাছে ‘মৃত্যুর মানুষ’ বা ‘নয়টি জীবন নিয়ে জন্মানো যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের ফেরারি সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম সবার ওপরে।
তালিকায় আরও রয়েছেন- আল-কাসেম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ মারওয়ান ইসা, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য খালেদ মেশাল, হামাসের অন্যতম প্রধান নেতা মাহমুদ জাহার প্রমুখ।