মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ আল কোরআন নাজিল করেছেন। মানুষের সমাজে যাতে সুশাসন নিশ্চিত হয় সে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ইসলামী অনুশাসনে। কারণ মানব কল্যাণে সুশাসনের বিকল্প নেই। সুশাসন জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত করে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। দেশবাসীর শান্তিতে বসবাস করার অধিকার সুরক্ষিত করে। সুশাসনের মডেল হিসেবে দেখা হয় মদিনায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাসন ব্যবস্থাকে। তারপর চার খলিফার আমলকে। ইসলামের প্রথম চার খলিফার শাসনামল ন্যায়ের শাসনামল হিসেবে ইতিহাসে নন্দিত। শেষ খলিফা হজরত আলী (রা.) মিসরের গভর্নর মালিক আশতারকে লেখা চিঠিতে প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে সুশাসন, সুবিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠার যে নির্দেশনা দেন তা ১৪ শ বছর পরও তাৎপর্যের দাবিদার।
তিনি গভর্নরকে স্বীয় সরকারের প্রতিটি বিভাগে সুবিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এভাবে আদেশ দেন : ‘সাধ্যানুযায়ী সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তুমি তোমার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মনোনীত করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবে। তুমি অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, সুযোগ্য ও প্রতিভাবান লোকদের মনোনীত করবে।’
তিনি বলেন : ‘কর্মকর্তারা তাদের কেতাদুরস্ত অবস্থার আড়ালে যেসব অবৈধ কাজকর্ম করে, সুবিচারকে ব্যাহত করে এবং অধিকারের অপব্যবহার করে থাকে সে ব্যাপারে তুমি তোমার চোখ বন্ধ করে রেখ না। অন্যথায় এরা লোকদের প্রতি যে অন্যায় করছে সে জন্য তোমাকে দায়ী করা হবে।’
হজরত আলী (রা.) কর্তৃক উপস্থাপিত সুবিচারের ধারণা অত্যন্ত সমুন্নত, সর্বাত্মক, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনা ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রও এর আওতাভুক্ত। আর এটা কোনো তত্ত্বকথা নয়, বরং তিনি তার কল্যাণকর জীবনে তা বাস্তবে রূপায়িত করেছেন। তিনি তার প্রায় পাঁচ বছরব্যাপী ন্যায়ের শাসনকালে, যখন তার শাসনাধীন এলাকার আয়তন ছিল উত্তর আফ্রিকা থেকে ভারত ও চীন সীমান্ত পর্যন্ত সে বিশাল খেলাফতে এ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এমনকি প্রতিকূল অবস্থায়ও কীভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এ ব্যাপারে তিনি মালিক আশতারকে নির্দেশ দেন :
‘তুমি যখন তোমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হবে অথবা তাকে কোনো ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেবে তখন বিশ্বস্ততার সঙ্গে চুক্তিসমূহ কার্যকর করবে ও কৃত ওয়াদা পালন করবে। তুমি যা কিছু অঙ্গীকার করেছ তা রক্ষার ব্যাপারে নিজেকে ঢালস্বরূপ কর। কারণ, আল্লাহ মানুষের ওপর যেসব দায়িত্ব-কর্তব্য দিয়েছেন তার মধ্যে অঙ্গীকার পালনের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী আর কিছু নেই, যা মানুষকে মতপার্থক্য ও চিন্তাচেতনার পার্থক্য সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ করে। শুধু মুসলমানরাই নয়, এমনকি কাফেররাও চুক্তি পালন করেছে। কারণ, তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করার বিপদ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে। অতএব, তুমি তোমার শত্রুর সঙ্গে প্রবঞ্চনা কর না। কারণ, অজ্ঞ আর দুর্বৃত্ত ছাড়া কেউই আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে না। আল্লাহ (তার বান্দাদের সঙ্গে) অঙ্গীকার করেছেন এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা তিনি তার দেওয়া আশ্রয়ের মাধ্যমে তার সৃষ্টিসমূহের মাঝে যেখানে তারা অবস্থান করে ও তার সান্নিধ্য কামনা করে, বিস্তৃত করে দিয়েছেন। অতএব, এ ব্যাপারে কোনোরূপ প্রবঞ্চনা, ধূর্ততা ও কপটতা হওয়া উচিত নয়।’
আজকের যুগে সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় হজরত আলী (রা.)-এর নির্দেশগুলো অনুসরণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
বিডি প্রতিদিন/এমআই