মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওরা নারী অগ্রযাত্রার প্রতীক

মো. রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ওরা নারী অগ্রযাত্রার প্রতীক

গ্রাম বাংলার সড়কে এটি কোনো শোভাযাত্রা বা সাইকেল র‌্যালি নয়। কোনো এনজিওর কর্মসূচিও নয়। এটি নারী অগ্রযাত্রার প্রতীক। এ দৃশ্যই বলে দিচ্ছে নারীরা আর পিছিয়ে নেই। তারাও আজ পারবে নিজেরাই সামনে এগিয়ে যেতে। এটি প্রতিনিয়ত স্কুল ছুটির পর ফিরে যাওয়া বাংলার গ্রামীণ পথের দৃশ্য। দিনাজপুরের সদর, বিরল, বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কেই এভাবেই স্কুল যেতে দেখা যাবে মেয়েদের। দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা দল বেঁধে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসছে। স্কুল ছুটির সময় একসঙ্গে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় মনে হতে পারে এটি হয়তো সাইকেল র‌্যালি। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তারা প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে। এসব স্কুলছাত্রী কেউ ১ থেকে ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেলেই আসছে স্কুলে। যদিও বৃষ্টি এলে সমস্যা হয়। সাইকেল না হলে পায়ে হেঁটেই আসতে হতো অথবা কিছুটা পথ হেঁটে এসে হয়তো রিকশা-অটো-ভ্যানে আসতে হতো। কিন্তু স্বাধীনভাবে নিজে সাইকেল চালিয়ে এলে সময় ও সুবিধা দুটোই পাওয়া যায়। বিরলের অকড়া গ্রাম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী কামরুন নাহার প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে বিরল পাইলট হাইস্কুলে আসে। এ স্কুলে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের মহেশপুর থেকে আসে পাঁচজন, পুড়িয়া থেকে ছয়জন। এভাবে দূর-দূরান্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়া ২০-২৫ জন আসে একই ভাবে। এ ব্যাপারে কামরুজ্জামানের কন্যা কামরুন নাহার জানায়, কোনো অসুবিধা হয় না। তবে বৃষ্টি-ঝড়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বিরলের রঘুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন আলী বলেন, এ স্কুলে শতকরা ৩৫ ভাগ মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। যখন ৮০ ভাগ মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করবে তখন মনে করব মেয়েরা লেখাপড়া থেকে সব দিকে এগিয়ে গেছে তারই প্রতিফলন। যে সব মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করে তাদের মাঝে কোনো প্রকার জড়তা থাকে না। তারা অনেকটা অগ্রগামী হয়। তাই সব ছাত্রীদের সাইকেল নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সাইকেল নিয়ে আসতে পারে না। এ ছাড়াও রাস্তায় কেউ বিরক্ত করলে জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব বলে তাদের জানিয়েছি। তবে দেশের সার্বিক উন্নতি হলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। অনেক গ্রামে ভালো রাস্তা-ঘাট নেই, শিশুরাও স্কুলে যেতে পারছেন না। কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে। ধর্মীয় বাধা বা মোল্লাদের ভয়ভীতি কমে গেছে। আজ দিন পাল্টেছে নারীরা নিজেদের জীবনের উন্নতি করতে চায়। চায় পুরুষদের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে অবদান রাখতে। আর ঘরে থাকতে তারা চায় না। তাই তারা বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষার আলো নিতে, বিশ্বকে জানতে। সমাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীদের ন্যায্য সম্মানসহ সব পেশায় দক্ষতার ছাপ রাখতে।

সর্বশেষ খবর